বন্যায় ১৬১ মৃত্যু, আক্রান্ত ৩৩ জেলা
2020.08.06
ঢাকা
চলতি বছরের বন্যায় ৩৩ জেলায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে বেনারকে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার।
তিনি জানান, গত ২৭ জুন থেকে শুরু হওয়া বন্যায় ১৩৪ জন মারা গেছেন পানিতে ডুবে, যার মধ্যে ৩৬ জনই শিশু। বাকিরা মারা গেছেন সাপের কামড়, বজ্রপাত ও অন্যান্য কারণে।
চলতি বন্যায় এখন পর্যন্ত দেশের ৩৩ জেলার ১৬০ উপজেলার এক হাজারের বেশি ইউনিয়ন আক্রান্ত হয়েছে বলে বেনারকে জানান জাতীয় দুর্যোগ সাড়াদান সমন্বয় কেন্দ্রের (এনডিআরসিসি) দায়িত্বে থাকা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে উপ-সচিব কাজী তাসমীন আরা আজমীরী।
তিনি জানান, বর্তমানে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৫৫ লাখ এবং সাড়ে ১০ লাখের বেশি পরিবার রয়েছে পানিবন্দি অবস্থায়।
এর আগে মঙ্গলবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এনডিআরসিসি’র বরাত দিয়ে জাতিসংঘ জানায়, এই বন্যায় প্রায় দুই লাখ ১২ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
যদিও উপ-সচিব আজমীরী বেনারকে বলেন, “এই তথ্য তারা কোথায় পেয়েছে তা আমার জানা নেই। বন্যা এখনও চলমান। এখনই আমরা কাউকে বাস্তুচ্যুত হিসাবে চিহ্নিত করতে পারি না।”
“অনেকের বাড়িঘর ডুবে, গেছে তাঁরা আশ্রয় কেন্দ্রে আছেন, এর মানে এই নয় যে তাঁরা আর বাড়িতে ফিরতে পারবেন না,” যোগ করেন এই কর্মকর্তা।
সরকারি হিসেবে বর্তমানে ৩৩ জেলায় আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছেন প্রায় ৭০ হাজার মানুষ।
চলতি মাসের শুরুতে অপর এক জরিপ প্রতিবেদনে জাতিসংঘ জানিয়েছে, বাংলাদেশে ২১টি জেলার বন্যা আক্রান্ত ৩৩ লক্ষ মানুষের মধ্যে ১৭ লক্ষই নারী, যাদের মধ্যে এক লাখের বেশি গর্ভবতী।
দুর্গত এলাকায় গর্ভবতীরা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ও নিরাপত্তাহীন বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে সৃষ্ট এই বন্যায় দেশের ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ৮০০ নদ-নদী বিপুল জলরাশি নিয়ে ২৪ হাজার ১৪০ বর্গ কিলোমিটার জায়গা দখল করে প্রবাহিত হচ্ছে দাবি করেছে এনডিআরসিসি।
এর আগে জাতিসংঘ জানায়, বন্যার প্রথম ৩৫ দিনেই দেশের ৩৬ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
এছাড়া কৃষি মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে তারা জানায়, দেশের প্রায় ৮৩ হাজার হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে।
সর্বশেষ কৃষি পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে মোট আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ প্রায় ৮৬ লক্ষ হেক্টর, যার মধ্যে চলমান আউশ ও আমন মৌসুমে আবাদযোগ্য জমি প্রায় ৬৫ লক্ষ হেক্টর।
'বন্যার তুলনায় ভাঙনের মাত্রা কম'
এনডিআরসিসির বৃহস্পতিবারের প্রতিবেদনে ঢাকার চারপাশে পানি বৃদ্ধি, শরীয়তপুর, লক্ষীপুর ও বরিশালের নিম্নাঞ্চল নতুন করে প্লাবিত হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
তারা জানায়, বৃহস্পতিবার ১৪টি জেলার ২০টি পয়েন্টে নদ-নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
তবে “নতুন করে কোনো জেলা আক্রান্ত হয়নি,” জানিয়ে সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বেনারকে বলেন, “এবার যে মাত্রায় বন্যা হচ্ছে সে তুলনায় ভাঙনের মাত্রা অনেক কম এখনও।”
তবে উত্তর মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলের পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) প্রায় ২৫০ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান তিনি।
“এখন উত্তরাঞ্চলের পানি প্রায় নেমে গেছে। আগামী আরো কয়েকদিন নামতেই থাকবে। মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকার কারণে বৃষ্টিপাত হলেও তা নতুন করে বন্যার কারণ হবে না,” যোগ করেন আরিফুজ্জামান।
এনডিআরসিসি জানিয়েছে, রাজধানীর নিম্নাঞ্চলের মানুষ ১৫ আগস্ট পর্যন্ত পানিবন্দি থাকতে পারেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজের সহকারী অধ্যাপক ড. দিলারা জাহিদ বেনারকে জানান, দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চল থেকে কয়েকদিন ধরে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। কিন্তু বানের পানির চাপ বেশি থাকায় মধ্যাঞ্চলে জমা হওয়া পানি নামতে পারছে না।
“আমার মনে হয় পূর্ণিমা না গেলে, অর্থাৎ আরো পাঁচ-সাতদিনের আগে পরিস্থিতি ঠিক হবে না,” বলেন তিনি।
সাম্প্রতিক অতীতে এবারের চেয়ে দীর্ঘ বন্যা হয়েছিল ১৯৮৮ সালে। সেবারের বন্য ৬৩ দিন দীর্ঘ ছিল বলে জানানো হয় জাতিসংঘের প্রতিবেদনে।
গত ২৭ জুনে শুরু হওয়া চলতি বন্যা ৪১তম দিন অতিক্রম করেছে বৃহস্পতিবার।
করোনাভাইরাস: সুস্থ প্রায় দেড় লাখ
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দুই লাখ ৪৯ হাজার ৬৫১ জন। আর মৃত্যু হয়েছে তিন হাজার ৩০৬ জনের।
এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়ে উঠেছেন এক লাখ ৪৩ হাজার ৮২৪ জন।
“আমাদের দেশে কোভিড রোগীদের সুস্থতার হার অনেক ভালো। আবার মৃত্যুর হারও অনেক কম। তাই সাধারণ মানুষের প্রাথমিক ভীতিটা কেটে গেছে,” বেনারকে বলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবে, এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন মোট এক কোটি ৮৯ লাখ ১২ হাজারের বেশি মানুষ, মারা গেছেন সাত লাখ ১০ হাজারের বেশি।