জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে কৌশলপত্র গ্রহণ করেছে আইপিইউ
2017.04.05
ঢাকা
প্রথমবারের মতো জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে কৌশলপত্র গ্রহণ করেছে বিশ্বের সব চেয়ে বড় সংসদীয় ফোরাম ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ)। সংস্থাটির নির্বাহী কমিটির সভায় এ বিষয়ে একটি খসড়া ধারণাপত্র নীতিগতভাবে অনুমোদন করা হয়েছে।
বিভিন্ন দেশ জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তা যথাযথ নয় বলে মনে করে আইপিইউ। জঙ্গিদের আক্রমণ ঠেকিয়ে গেলেও দেশগুলো জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ বা নির্মূলে এখনো দৃশ্যত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। সে কারণেই আইপিইউ এই পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানান আইপিইউ’র প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরী।
সাবের হোসেন বেনরাকে বলেন, “এ বিষয়ে ১৭ সদস্যের কমিটির তৈরি খসড়া অনেকটাই চূড়ান্ত। এই কৌশলটি বিভিন্ন দেশের সংসদ বা আইনসভার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে।”
“সন্ত্রাসবাদ নিয়ে এ পর্যন্ত জাতিসংঘে যতগুলো সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব সিদ্ধান্তে সংসদের ভূমিকা কী হবে তা সুস্পষ্ট বলা আছে। সেগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ সম্ভব হবে,” জানান সাবের হোসেন।
গতকাল বুধবার ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত পাঁচ দিনব্যাপী আইপিইউয়ের ১৩৬তম সম্মেলন শেষ হয়েছে। এবারই প্রথম ‘গ্রিন অ্যাসেম্বলি’র আয়োজন করেছে আইপিইইউ।
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ও আইপিইউ’র যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত ‘অসাম্যের প্রতিকার: সবার জন্য সম্মান ও কল্যাণ’ শীর্ষক এই সম্মেলন গত ১ এপ্রিল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সম্মেলনটিতে ১২৬টি দেশের ৬০৭ জন এমপি, ৪৬ জন সংসদের স্পিকার, ৩৬ জন ডেপুটি স্পিকার এবং ১৯১ জন নারী এমপিসহ প্রায় এক হাজার ২০৬ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন।
আইপিইউ’র সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, “আগে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ভাবা হতো গ্রামের দরিদ্র পরিবারের সদস্য ও মাদ্রাসা ছাত্ররা জঙ্গিবাদে জড়ায়। অথচ এখন শহরের অবস্থাপন্ন পরিবারের তরুণদেরকে জঙ্গিবাদে জড়াতে দেখছি। তাই এটা পরিষ্কার যে, দারিদ্র্য নয়, জঙ্গিবাদের অন্য কারণ আছে। তাই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে আমাদের কৌশলী হতে হবে।”
ইরাকের সংসদ সদস্য সামিরাহ আলী মুসাঈ বেনারকে বলেন, সন্ত্রাস দমনে শুধু সরকারের উদ্যোগ যথেষ্ট নয়-এই কথাটির সঙ্গে আমরা ইরাকের প্রতিনিধিদল একমত। এ কাজে এমপিদেরও ভূমিকা রয়েছে।”
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই এবং তা নির্মূল করতে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সহযোগিতাও প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন ইরাকি পার্লামেন্টের বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটির এই সদস্য সামিরাহ।
“সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পাশাপাশি কেন তা ঘটছে সেটাও জানা জরুরি,” বেনারকে বলেন উগান্ডার স্পিকার বেকো কাডাগা।
সমাপনী অধিবেশনের ভাষণে সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ঢাকায় এই সম্মেলন অনুষ্ঠান আয়োজনে নিরাপত্তা নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ থাকা সত্ত্বেও সফলভাবে আমরা সম্মেলন শেষ করেছি।
তিনি বলেন, “সেন্ট পিটার্সবার্গে হামলা হয়েছে। তা সত্ত্বেও সেখানে আইপিইউর পরবর্তী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। জঙ্গিদের ভয়ে আমরা থেমে থাকব না। জঙ্গিবাদকে মোকাবিলা করার জন্যই আমরা সেখানে যাব।”
শেষদিনে আইপিইউর সাধারণ সভায় কোনো সার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য দেশ হস্তক্ষেপ করতে পারবে না মর্মে প্রস্তাব পাস হয়।
ছয় দফা ‘ঢাকা ঘোষণা’র মধ্য দিয়ে এবারের আইপিইউ সম্মেলনের ইতি টানেন অনুষ্ঠানের সভাপতি শিরীন শারমিন চৌধুরী।
এ সম্পর্কে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইপিইউ জানায়, “বেকারত্ব, সম্পদহীনতা ও স্বল্প মজুরিসহ নানা সমস্যায় ভুগছে বিশ্বের ক্রমবর্ধনশীল তরুণ প্রজন্ম। এই বৈষম্য কমাতে সদস্যভুক্ত দেশগুলোর উদ্যোগ আশা করছে আইপিইউ।
ঢাকা ঘোষণা সম্পর্কে সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, “এবারের আইপিইউ সম্মেলনে কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা, বৈষম্য কমাতে আইনি কাঠামো শক্তিশালী করা, প্রান্তিক ও ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা, সামাজিক সংলাপ ও মানব সম্পদ বৃদ্ধি, সকলের জন্য অর্থনৈতিক সুবিধা নিশ্চিত করা, সংসদকে আরও প্রতিনিধিত্বশীল করা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে।”
‘গ্রিন অ্যাসেম্বলি’
আইপিইউ’র এবারের সম্মেলনকে প্রথমবারের মতো গ্রিন সম্মেলন বলা হয়েছে বলে জানান সাবের চৌধুরী।
তিনি জানান, এই সম্মেলন উপলক্ষে যেসব বিমান চলাচল করেছে তাতে প্রায় ৩ হাজার ৪০০ টন কার্বন নিঃসরণ হয়েছে। বাংলাদেশে যারা এখনো কাঠ–কয়লা পুড়িয়ে চুলা জ্বালায়, তাদের উন্নত মানের চুলা সরবরাহ করে এই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া হবে। তারপর আক্ষরিক অর্থে ঢাকার এই সম্মেলন গ্রিন সম্মেলন হিসেবে স্বীকৃত হবে।
যুক্তরাজ্যের একটি প্রতিষ্ঠানকে এ বিষয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারাই এই জরিপ করেছে।