আনসার আল-ইসলামের চার জঙ্গি আটক
2021.02.01
ঢাকা

সিরিয়ায় জঙ্গি সংগঠনে যোগ দিতে দেশ ছাড়ার পরিকল্পনাকারী চার সন্দেহভাজন জঙ্গিকে আটকের কথা জানিয়েছেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই আটকের কথা জানায় র্যাব।
গত ২৩ জানুয়ারি র্যাবের হাতে আটক আনসার আল-ইসলামের পাঁচ জঙ্গির দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত রোববার ঢাকার ভাটারা ও পল্টন এলাকা এবং শেরপুর জেলায় ভিন্ন ভিন্ন অভিযান চালিয়ে একই দলের এই চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন র্যাবের সহকারী পুলিশ সুপার মো. জিয়াউর রহমান চৌধুরী।
তিনি জানান, আটকরা হলেন- আব্দুল ওহাব (৩০), বেলাল হোসাইন (২২), মো. নাজমুল (১৭) এবং মোছা. ঝুমুর খাতুন (১৮)
এর মাঝে ওহাব ও ঝুমুর স্বামী-স্ত্রী। গোয়েন্দাদের নজর এড়াতে এই দম্পতি চীন হয়ে সিরিয়া যেতে চেয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা নিষিদ্ধ ঘোষিত আনসার আল ইসলামের সাথে নিজেদের সম্পৃক্ততা জানিয়েছেন বলে জানান জিয়াউর রহমান চৌধুরী।
ওহাব ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া শেষ করে উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশ যান। তবে শিক্ষা শেষ না করে বাংলাদেশে ফিরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু করেন। পাশাপাশি অনলাইনে জঙ্গিবাদী কার্যক্রম শুরু করে আনসার আল ইসলামের সাথে যুক্ত হন।
পেশায় ছাত্রী ঝুমুর অনলাইনে উগ্রবাদী ধারণায় দীক্ষিত হয়ে ওহাবের সাথে পরিচিত হন বলে জানান র্যাব কর্মকর্তারা।
“উগ্রবাদী সংগঠনের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হয় আটককৃত ঝুমুর খাতুন ও আব্দুল ওহাবের মধ্যে। পরে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়,” সোমবার বেনারকে বলেন র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের প্রধান আশিক বিল্লাহ।
বছর দুয়েক আগে এই দম্পতি চীনের একটি প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়ার জন্য বাংলাদেশ ছাড়েন জানিয়ে তিনি বলেন, “জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা জানিয়েছেন, তাঁদের মূল উদ্দেশ্য লেখাপড়া ছিল না। তাঁরা চেয়েছিলেন সিরিয়া গিয়ে সেখানকার জঙ্গি সংগঠনে যুক্ত হয়ে ‘জিহাদ’ করতে।”
আশিক বিল্লাহ বলেন, “চীনে যাওয়ার কারণ হলো, চীন থেকে মধ্যপ্রাচ্যে যাওয়া সহজ। বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যে যাওয়ার ক্ষেত্রে গোয়েন্দা তৎপরতা বেশি। ধরা পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।”
“তবে, চীনে যাওয়ার পর ঝুমুর খাতুন গর্ভবতী হয়ে পড়ে। সন্তান জন্ম দিতে সে বাবা-মাকে না জানিয়ে পাঁচ মাস পর বাংলাদেশে চলে আসে। বাংলাদেশে এসে সে জঙ্গিদের আস্তানায় কাটাতে থাকে। সেখানে তাদের একটি পুত্র সন্তান হয়,” বলেন আশিক বিল্লাহ।
র্যাব বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, আটককৃতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
র্যাবের হাতে আটক বেলাল হোসাইন পল্টনে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করার পাশাপাশি আনসার আল-ইসলামের পক্ষে সদস্য সংগ্রহ করতেন।
আটক নাজমুল শেরপুর জেলার একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকতা করতেন। তবে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই তিনি আনসার আল-ইসলামের সাথে জড়িয়ে পড়েন।
বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠনগুলোর মধ্যে আনসার আল-ইসলাম অন্যতম নিষ্ঠুর। সংগঠনটি আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নামেও পরিচিত।
এই নিষিদ্ধ এই জঙ্গি সংগঠনটি ২০১৫ সালের পর থেকে ব্লগার, লেখক, সাহিত্যিক, প্রকাশক, সমকামী, প্রগতিশীল চিন্তাবিদদের চিহ্নিত করে হত্যা করেছে।
জঙ্গি এই সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা বরখাস্তকৃত মেজর জিয়াউল হক। তাঁকে এখনও আটক করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, যদিও প্রতিটি ব্লগার হত্যাকাণ্ডের তদন্তে তাঁর নাম এসেছে।
এর আগে ২৩ জানুয়ারি সিরিয়ায় আল-কায়েদার সহযোগী সন্ত্রাসী সংগঠন হায়াত তাহরির আল শামস এর এক সদস্য মিনহাজ হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বাংলাদেশে সিরিয়া ভিত্তিক এই সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্য হিসাবে তিনিই প্রথম বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বাংলাদেশি নাগরিক মিনহাজ লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস থেকে স্নাতক এবং যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ম্যাসন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন।
তিনি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
“জঙ্গিরা বসে থাকে না। তারা সময়ে সময়ে তাদের কৌশল বদলায়। যদিও ইসলামিক স্টেট সিরিয়ায় তাদের ভূখণ্ড হারিয়েছে তবুও জঙ্গিদের কাছে সিরিয়া, ইরাকসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো একটি আদর্শ জায়গা,” বেনারকে বলেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন।
বাংলাদেশ থেকে তুরস্ক ও অন্যান্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যাওয়ার ব্যাপার এখন নজর থাকায় তারা কথনও চীন, কখনও অন্য কোনো দেশকে ট্রানজিট হিসাবে ব্যবহার করে মধ্যপ্রাচ্যে যেতে চাচ্ছে বলেও জানান তিনি।