সীমান্তে স্থলমাইন বসানোর কথা অস্বীকার মিয়ানমারের, তবে অপসারণে সহায়তার আশ্বাস
2020.01.08
ঢাকা

সীমান্ত এলাকা থেকে স্থলমাইন বা আইইডি অপসারণের জন্য মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী এমপিএফকে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি)। তবে সীমান্তে আইইডি পুঁতে রাখার বিষয়টি অস্বীকার করেছে মিয়ানমার। বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ওপর এর দায় চাপিয়েছে তারা।
বিজিবি ও মিয়ানমার পুলিশ ফোর্সের (এমপিএফ) উচ্চ পর্যায়ের ৭ম সীমান্ত সম্মেলন শেষে বুধবার পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানানো হয়।
পাঁচ দিনব্যাপী সম্মেলনে দু’পক্ষ সীমান্তে চোরাচালান, মানব পাচার, অনুপ্রবেশ বন্ধ, সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহায়তার বিষয়ে একমত হয়েছে বলে জানানো হয়।
যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসব বিষয় তুলে ধরার পাশাপাশি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম ও মিয়ানমারের চিফ অব পুলিশ জেনারেল স্টাফ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মায়ো থান।
মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম বলেন, “সীমান্তে মাইন বা আইইডি (ইম্প্রোভাইজ ইলেকট্রনিক ডিভাইস) দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর জন্যই বিপজ্জনক। এ জন্য এগুলো অপসারণ জরুরি। আমরা সীমানা ধরে সড়ক নির্মাণ করব। এ কাজে আমরা মিয়ানমারের সহযোগিতা চেয়েছি। তারা সহযোগিতা করতে রাজি হয়েছে।”
তিনি বলেন, “শূন্য রেখা থেকে ৫০ গজের মধ্যে আইইডি আছে কিনা সেটা নিয়ে আমাদের উদ্বেগ।”
এ বিষয়ে মিয়ানমারের চিফ অব পুলিশ জেনারেল স্টাফ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মায়ো থানকে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলে তাঁর পক্ষে প্রতিনিধি দলের একজন উত্তর দেন। তিনি দাবি করেন, এমপিএফ সীমান্তে আইইডি ব্যবহার করে না।”
তিনি বলেন, সীমান্তে অনেক ধরনের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর আনাগোনা আছে। তারা আইইডির ব্যবহার করে থাকতে পারে।”
তবে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকেরা বলছেন, আইডির কথা অস্বীকার করে মিথ্যাচার করছে মিয়ানমার।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমান বেনারকে বলেন, মিয়ানমার যে কথাটা বলেছে এর মধ্যে কোনো সত্যতা নেই। এসব আইডি মিয়ানমার সেনাবাহিনী বসিয়েছে। যা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও এসেছে।”
“এখন তারা যা বলছে তা আইওয়াশ। রোহিঙ্গাদের নিয়ে চাপে থাকায় সব দায় অন্যের ওপর দিতে চায়। তাদের ভাষায় রোহিঙ্গা সংকটের পেছনে যেসব সন্ত্রাসী দায়ী, মাইনের দায়ও তাদের ওপরে চাপানোর চেষ্টা করছে তারা,” বলেন এই বিশ্লেষক।
ইয়াবা আসা কমেছে
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সীমান্ত এলাকায় মাদক ও নেশাজাতীয় দ্রব্য বিশেষত ইয়াবা পাচার রোধে বাংলাদেশ জিরো টলারেন্স নীতি বজায় রাখবে। মিয়ানমারও তাদের জাতীয় মাদক নিয়ন্ত্রণ নীতি অনুযায়ী মাদকবিরোধী কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে।
বিজিবি মহাপরিচালক সাফিনুল ইসলাম জানান, দুই দেশের সীমান্ত বাহিনী কার্যক্রম জোরদার করার কারণে গত এক বছরে নাফ নদী হয়ে মিয়ানমার থেকে সরাসরি আসা ইয়াবার পরিমাণ অনেকটা কমে এসেছে।
এখন মিয়ানমার সীমান্ত থেকে আরও উত্তর দিকে এবং বাংলাদেশ সীমান্তের দক্ষিণ দিক দিয়ে ইয়াবা প্রবেশ করছে বলে জানান তিনি।
বিজিবি প্রধান সাফিনুল বলেন, “মিয়ানমারও অনেক ইয়াবা জব্দ করে তা ধ্বংস করেছে। আমাদের টহল দল তা দেখেছে। আমরা তাদের মাদকবিরোধী অভিযান আরও বেগবান করার অনুরোধ জানিয়েছি।”
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবি তিনি বলেন, “এই বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করিনি। কারণ, এটা আমাদের দুই বাহিনীরই এখতিয়ার বহির্ভূত।”
তবে অপর এক প্রশ্নের জবাবে বিজিবি মহাপরিচালক সাফিনুল ইসলাম বলেন, “আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছি, মিয়ানমারের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীদের জন্য রোহিঙ্গারা এখন উর্বর ক্ষেত্র। ইয়াবা বিক্রির টাকা সেসব সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাছে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।”
“মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের প্রধান এ বিষয়ে একমত হয়ে বলেছেন, রাখাইনে ফেরাটা তাদের (রোহিঙ্গাদের) জন্যই মঙ্গলজনক।”
বাংলাদেশের মাটিতে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অভিযোগ
মিয়ানমারের কিছু সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বাংলাদেশে অবস্থান করছে বলে দেশটির পক্ষ থেকে বৈঠকে অভিযোগ করা হয় বলে জানান বিজিবি মহাপরিচালক।
“কিন্তু আমরা তাদের জানিয়েছি, এ ধরনের কোনো সন্ত্রাসী গ্রুপ এখানে নেই। আমাদের সরকার এ দেশের ভূমি ব্যবহার করে কোনো সন্ত্রাসী কার্যক্রম করতে দেবে না,” বলেন তিনি।
তবে তাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে অপারেশন কার্যক্রম জোরদার করা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরাও বলেছি আমাদের দেশের সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো দুর্গম ভূমির সুবিধা নিয়ে অনেক সময় মিয়ানমারের সীমানায় অবস্থান নেয়। সংবাদ বা তথ্য দিলে তারাও এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে বলে আশ্বস্ত করেছে।”
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, যে কোনো ধরনের অবৈধ সীমান্ত অতিক্রম বা প্রবেশ এবং সীমান্ত লঙ্ঘন রোধের পাশাপাশি অজ্ঞতাবশত সীমান্তরেখা লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে দুই দেশের প্রচলিত নিয়মানুযায়ী তাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়েও মতৈক্য হয়েছে।
মিয়ানমারের চিফ অব পুলিশ জেনারেল স্টাফ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মায়ো থানের নেতৃত্বে আট সদস্যের প্রতিনিধিদল এবং বিজিবি মহাপরিচালকের নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল বৈঠকে অংশ নেন।
দুপক্ষের মধ্যে পরবর্তী উচ্চ পর্যায়ের সীমান্ত সম্মেলনটি এ বছরের মে-জুন মাসে মিয়ানমারে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানানো হয়।