সীমান্তে পুঁতে রাখা বোমা যৌথভাবে অপসারণ করবে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার

প্রাপ্তি রহমান
2017.04.06
ঢাকা
বিজিবি ও এমপিএফ এর যৌথ সম্মেলন। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ও মিয়ানমার পুলিশ ফোর্স এর যৌথ সম্মেলন। এপ্রিল ৬, ২০১৭।
জেসমিন পাপড়ি/বেনার নিউজ

বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় পুঁতে রাখা বিশেষায়িত বোমা ও মাইন বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনা ঘটলেও দায়ী গোষ্ঠীকে শনাক্ত করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় সীমান্ত থেকে যৌথভাবে বিস্ফোরক অপসারণে একমত হয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও মিয়ানমার পুলিশ ফোর্স (এমপিএফ)।

“সীমান্তে শূন্য লাইনের আশপাশে পুঁতে রাখা আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) ও মাইন বিস্ফোরণে আহত ও নিহতের ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনা যেন না ঘটে ও সীমান্তে যেন সুষ্ঠু টহল পরিচালনা করা যায় সে জন্য এই বিস্ফোরকগুলো অপসারণে আমরা একমত হয়েছি।”

বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান বিজিবির অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আনিছুর রহমান।

বিজিবি ও এমপিএফ এর মধ্যে ১ থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলা বৈঠক শেষে পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

তবে এইসব বিস্ফোরক কারা পুঁতে রেখেছে এমন প্রশ্নের সুস্পষ্ট জবাব দেয়নি বিজিবি।

“সীমান্তবর্তী এলাকায় ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ কোনো সংগঠন বোমা পেতে রাখতে পারে। তাদের শনাক্ত করা যাচ্ছে না,” এক প্রশ্নের উত্তরে জানান আনিছুর রহমান।

সংবাদ সম্মেলনের প্রথম পর্বে বিজিবির অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. আনিছুর রহমান ও এমপিএফ এর প্রধান জেনারেল মেয়ো সেও উইন ক্রেস্ট বিনিময় ও করমর্দনের ছবি তোলার জন্য সাংবাদিকদের সামনে দাঁড়ান।

তবে, ‌‘বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ বৈঠক বিষয়ে বিস্তারিত বলবেন’- সাংবাদিকদের এই কথা জানিয়ে মূল পর্ব শুরুর আগেই মেয়ো সেও উইনের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের মিয়ানমার প্রতিনিধি দল সংবাদ সম্মেলন স্থল ছেড়ে যান।

সন্ত্রাস মোকাবেলায় ঐক্য

ছয় দিন ধরে চলা বৈঠকে দুই দেশ সন্ত্রাসীদের নিজ নিজ ভূমি ব্যবহার করতে না দেওয়ার ব্যাপারে একমত হয়েছে। এ সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন মো. আনিছুর রহমান।

“দুই দেশের সরকার অন্য কোনো দেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য তাদের ভূমি সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করতে দেয় না। সীমান্তের বিশেষ কোনো এলাকায় এ ধরনের অপরাধীদের অবস্থানের সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেলে সমন্বিত অপারেশন চালানোর বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি,” জানান বিজিবির অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আনিছুর রহমান।

তিনি বলেন, দুই দেশই গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় এবং সে অনুযায়ী কাজ করবে বলে রাজি হয়েছে।

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে বোমা পুঁতে রাখার বিষয়টিকে ‘নিঃসন্দেহে শঙ্কার’ বিষয় বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের গবেষণা পরিচালক শাহীন আফরোজ।

তিনি বেনারকে বলেন, “সীমান্তে বোমা পুঁতে রাখার বিষয়টি নতুন। মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তে বিভিন্ন ধরনের সমস্যাও রয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া নিন্দনীয়, সেখানে বোমা পুঁতে রাখা তো রীতিমতো শঙ্কার।”

তবে বিষ্ফোরক অপসারণে দুই দেশ একযোগে কাজ করার ঘোষণাটি প্রশংসাযোগ্য বলেও মন্তব্য করেন ওই গবেষক।

প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের ২৭১ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে।

প্রসঙ্গ রোহিঙ্গা, অবৈধ অনুপ্রবেশ

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মিয়ানমারের নাগরিকদের, বিশেষ করে গত বছরের অক্টোবর থেকে অস্বাভাবিক হারে অবৈধ অনুপ্রবেশের ব্যাপারে বাংলাদেশ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মিয়ানমার প্রতিনিধি জেনারেল মেয়ো সেও উইন মিয়ানমারের পরিস্থিতি এখন স্থিতিশীল ও স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছেন। তাঁর মতে, রাখাইনের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত অঞ্চল মিয়ানমারের মংডুর পরিস্থিতি এখন শান্ত ও স্বাভাবিক।

তবে নতুন কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে দু’দেশ তথ্য বিনিময় এবং একযোগে কাজ করার বিষয়ে একমত হয়েছে বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

ইয়াবা সমস্যা মোকাবেলায় আগ্রহী মিয়ানমার

মিয়ানমার প্রতিনিধি দল এবার ইয়াবাকে তাদের দেশের সমস্যা বলেও উল্লেখ করেছে। সে জন্য তারাও সীমান্তে তৎপরতা বাড়িয়েছে। বেশ কিছু বড় চালান তাঁরা বাংলাদেশে ঢোকার আগেই ধরার কথা বিজিবিকে জানিয়েছে। তারা ইয়াবা পাচারকারীদের সম্পর্কে বাংলাদেশের কাছে তথ্য চেয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে বিজিবি অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. আনিছুর রহমান বলেন, “আমরা এর আগে তাদের কাছে একটি তালিকা দিয়েছিলাম। তারা সেই তালিকা ধরে কোনো কারখানার খোঁজ পায়নি বলে জানায়। তবে এবার তারা নতুন করে তালিকা চায়। আমরা ৪৯টি কারখানার তালিকা দিয়েছি।”

বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ ইয়াবা পাচার বন্ধে মিয়ানমারের সহযোগিতা চেয়ে আসছিল। তবে সাড়া পাচ্ছিল না বলে জানান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশনস অ্যান্ড ইনটেলিজেন্স) সৈয়দ তৌফিক উদ্দীন আহমেদ।

“আমরা এর আগে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে মিয়ানমারের থেকে মাদক চোরাচালান কোন কোন পথে হচ্ছে এবং বাংলাদেশের কোন পয়েন্টে এসে থামছে সে সম্পর্কে জানিয়েছিলাম। তারা কোনো সাড়া দেয়নি। তবে ইদানীং তারা আমাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগে আগ্রহ দেখাচ্ছে,” বেনারকে জানান সৈয়দ তৌফিক উদ্দীন আহমেদ।

ঢাকার ছয় দিনব্যাপী সীমান্ত বৈঠকে বিজিবির কর্মকর্তারা ছাড়াও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কোস্ট গার্ড, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, সার্ভে জেনারেল অব বাংলাদেশ এবং প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

দুই দেশের পরবর্তী এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে এ বছরের নভেম্বরে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।