রোহিঙ্গা সংকটে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি ভিয়েতনামের

জেসমিন পাপড়ি
2018.03.05
ঢাকা
দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পরে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট ত্রান দাই কুয়াং। দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পরে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট ত্রান দাই কুয়াং। ৫ মার্চ ২০১৮।
সৌজন্যে: বাসস

চলমান রোহিঙ্গা সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানে ভিয়েতনামের সহযোগিতা কামনা করেছে বাংলাদেশ। ঢাকা সফররত ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট ত্রান দাই কুয়াংয়ের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত দু’দেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এই সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “বৈঠকে এ অঞ্চলের দেশগুলোর শান্তি ও স্থিতিকে হুমকির মুখে ঠেলে দেওয়া রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে আমরা ভিয়েতনামের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছি।”

ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট ত্রান দাই কুয়াং এ সমস্যার কার্যকর ও স্থায়ী সমাধানের জন্য তাঁর সমর্থন জানিয়েছেন বলেনও জানান শেখ হাসিনা।

প্রসঙ্গত, গত বছর ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নতুন করে দেশটির সেনাবাহিনীর দমন অভিযান শুরু করলে এ পর্যন্ত প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে আশ্রয় নেওয়া এসব রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ একটি চুক্তি করলেও এখনো প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। উপরন্তু সীমান্তে সেনা সমাবেশ ঘটিয়ে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ঝুলিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে।

এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থনের মাধ্যমে মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকেরা। তারই অংশ হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভিয়েতনামের সমর্থনও জরুরি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মুহম্মদ রুহুল আমিন বেনারকে বলেন, “আমি মনে করি মিয়ানমারের মতো প্রতিশ্রুতি নষ্ট করা দেশের সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতে যাওয়া বাংলাদেশের জন্য যুক্তিসংগত হয়নি।”

“তাই এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন নিয়ে বহুপাক্ষিকভাবে বিষয়টি সমাধান প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে পূর্ব এশিয়ার দেশ ভিয়েতনামও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তাই দেশটির সমর্থন পাওয়াটাও জরুরি,” বলেন তিনি।

তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে রোববার বাংলাদেশে আসেন ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট ত্রান দাই কুয়াং। গত ১৪ বছরে এটাই ভিয়েতনামের কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের প্রথম বাংলাদেশে প্রথম সফর। এর আগে ২০১২ সালে ভিয়েতনাম সফর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সোমবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে দু’দেশের রাজনৈতিক সম্পর্ককে আরো পাকাপোক্ত করার পাশাপাশি ব্যবসা, বিনিয়োগ এবং কারিগরি সহযোগিতা বৃদ্ধি করা বৈঠকের আলোচনার মূল বিষয় ছিল বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় জাতি সংস্থা- আসিয়ানের সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে রাজনৈতিক, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব সৃষ্টির আগ্রহ প্রকাশ করে এ ফোরামের সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার হতে ভিয়েতনামের সমর্থন চান শেখ হাসিনা।

এ ছাড়া ‘মেকং-গঙ্গা’ ফোরামে যোগদানের বিষয়েও দেশটির সহযোগিতা কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী।

দুই দেশের মধ্যকার সহযোগিতাকে এগিয়ে নিতে ফরেন অফিস কনসালটেশন এবং ব্যবসা সংক্রান্ত যৌথ কমিটির দ্বিতীয় বৈঠক এ বছর অনুষ্ঠানের বিষয়েও বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম একমত হয়েছে বলে যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়।

তিনটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর

দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, যন্ত্র প্রকৌশল খাতে সহযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ে তিনটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম।

দুই দেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের করবী হলে দুই নেতার উপস্থিতিতে এসব সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।

২০১২ সালের ২ নভেম্বর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে সহযোগিতার বিষয়ে দু’দেশের মধ্যে যে সমঝোতা স্মারক হয়েছিল, সেটি এবার নবায়ন করা হয়েছে। বাংলাদেশের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এবং ভিয়েতনামের কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রী নুয়েন জুয়ান সেউয়ং এই নবায়নকৃত সমঝোতা স্মারকে সই করেন।

মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশের শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ এবং ভিয়েতনামের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভাইস মিনিস্টার কাও চুয়ক হুয়াং সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন।

এ ছাড়া সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচি এগিয়ে নিতে দুই দেশের মধ্যকার তৃতীয় সমঝোতা স্মারকে সই করেন বাংলাদেশের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব ইব্রাহীম হোসেন খান ও ভিয়েতনামের সংস্কৃতি, ক্রীড়া ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি মিনিস্টার ড্যাং থাই বিচ লিয়েন।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।