আনসার কমান্ডার খুন ও অস্ত্র লুট, তিন রোহিঙ্গা শরণার্থী গ্রেপ্তার
2017.01.10

কক্সবাজারের টেকনাফে আনসার কমান্ডার খুন এবং অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুটের দায়ে তিনজন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আনসার বাহিনীর লুট হওয়া অস্ত্র গভীর জঙ্গল থেকে উদ্ধার করেছে র্যাব।
এর আগে গ্রেপ্তার হওয়া দুই রোহিঙ্গা শরণার্থীকে নিয়ে র্যাব এই অভিযান চালায়। এতে নতুন করে গ্রেপ্তার হয়েছে; কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের খায়রুল আমিন ওরফে বড় খায়রুল আমিন, মাস্টার আবুল কালাম আজাদ ও হাসান আহমদ।
এ ছাড়া মাটির নীচ থেকে খোয়া যাওয়া ১১টি অস্ত্রের মধ্যে পাঁচটি রাইফেল ও ১৮৯ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছে র্যাব।
গত বছরের ১২ মে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার নয়াপাড়ায় বেসামরিক আনসার বাহিনীর শালবন ক্যাম্পে কয়েকজন দুর্বৃত্ত হামলা চালায়। ওই হামলায় আনসার কমান্ডার আলী হোসেন নিহত হন এবং ক্যাম্পের ১১টি অস্ত্র ও ৬৭০টি গুলি লুট হয়।
হামলার এক মাসের মাথায় সন্দেহভাজন আসামি নুরুল আবছার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানায়, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নুরুল আলমের গুলিতে আনসার কমান্ডার খুন হন। সে ওই হামলায় জড়িত অন্যদের সম্পর্কেও তথ্য দেয়। এরপর থেকেই পুলিশ, র্যাব, পিবিআই, বিজিবি ও কোস্ট গার্ড অভিযুক্তদের খুঁজছিল ।
গতকাল মঙ্গলবার এই অভিযান সম্পর্কে গণমাধ্যমকে জানাতে র্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে তুমব্রু এলাকার জঙ্গলে সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি বলেন, অস্ত্র উদ্ধারের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।
“১২ মে লুট হওয়া ১১টি অস্ত্রের মধ্যে পাঁচটি রাইফেল আমরা উদ্ধার করতে পেরেছি। বাকি অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চলবে,” ব্রিফিংয়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান র্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ।
এর আগে গত বছরের ৩০ জুন র্যাব–৭ এর একটি দল কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলার কুতুপালং থেকে রফিক ডাকাত ওরফে মামুন মিয়া, আবদুর রাজ্জাক, জয়নাল, হারুন ও আবদুস সালামকে গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত ৯ জানুয়ারি তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
“নয়াপাড়া আনসার ক্যাম্পের ওপর আগে থেকেই তাদের নজরদারি ছিল। তারা চাইছিল অস্ত্র লুট করে সন্ত্রাসীদের কাছে বিক্রি করে দিতে,” বেনারকে জানান মুফতি মাহমুদ খান।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত তিন রোহিঙ্গা বলেন, গত ১২ মে ১৮ জন দুর্বৃত্ত আনসার ক্যাম্পে হামলা চালাতে গিয়েছিল। আনসার সদস্যরা ঘুমিয়ে পড়লে নুরুল আলম ও খায়রুল আমিন দা দিয়ে বেড়া কেটে আনসার সদস্যদের বেঁধে ফেলে। তাঁরা আনসার কমান্ডার আলী হোসেনের কাছ থেকে অস্ত্রাগারের চাবি চেয়েছিল। তিনি দিতে রাজি না হওয়ায় নুরুল আলম তাঁকে খুন করে। পরে প্লাটুন কমান্ডার আলমগীর হোসেন টেকনাফ থানায় মামলা দায়ের করেন।
ওই ঘটনায় বিভিন্ন সময় অভিযানে ১৮ জনের মধ্যে আট জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
উল্লেখ্য, নব্বইয়ের দশক থেকে বাংলাদেশের ভেতর রোহিঙ্গাদের ব্যাপক অনুপ্রবেশ ঘটতে থাকে। বিভিন্ন সময়ে তাঁদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি ২০১৫ সালে আসামি ছিনতাই এর চেষ্টা করার সময় পুলিশের গুলিতে আবদুল হাফেজ নামের এক রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীর মৃত্যু হয়।
গতকাল সংবাদ সম্মেলনে আনসার বাহিনীর মহাপরিচালক মিজানুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। তিনি র্যাবের উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে পাঁচটি আনসার বাহিনীর লুট হওয়া অস্ত্র বলে শনাক্ত করেন। দীর্ঘ সময় পর ১১টি অস্ত্রের মধ্যে পাঁচটি উদ্ধার করে দেওয়ায় তিনি র্যাব কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ দেন।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক সাখাওয়াত হোসেন খান রোহিঙ্গা শরণার্থীরা যাতে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িয়ে না পড়ে সেদিকে বিশেষ নজর রাখার তাগিদ দিয়েছেন।
“মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অনুপ্রবেশ বাংলাদেশের জন্য চিন্তার কারণ। তারা নানা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে লিপ্ত হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের সহানুভূতি কাজে লাগিয়ে তাদেরকেও বিপথগামী করার চেষ্টা চলছে,” বেনারকে বলেন সাখাওয়াত হোসেন।