অনুপ্রবেশকারী নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের প্রতি বাংলাদেশের আহ্বান
2017.01.11

বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করা মিয়ানমারের সব নাগরিককে ফিরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশে সফররত অং সান সুচির বিশেষ দূত ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিউ তিনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের সময়ে এ আহবান জানান প্রধানমন্ত্রী।
আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে বিশেষ দূত হিসেবে কিউ তিনকে পাঠিয়েছেন মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর ও নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী অং সান সু চি।
তবে দেশটির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে তেমন কোনো সিদ্ধান্ত গতকাল বুধবার জানানো হয়নি। বিষয়গুলো তারা দেশে গিয়ে আলোচনা করবেন বলে মিয়ানমারের তিন সদস্যের প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে সরকারকে জানানো হয়।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রী এ দেশে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার বিষয়ে জোর দিয়েছেন
“প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মিয়ানমার থেকে তাদের যেসব নাগরিক বাংলাদেশে মাইগ্রেট করেছে তাদেরকে ফেরত নিতে হবে,” জানান প্রেস সচিব।
এ সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের আগ্রহের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “আলোচনার মাধ্যমে দুদেশ মিলেই এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান করা সম্ভব।”
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা পুনর্ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে প্রতিবেশী কোনো দেশে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কর্মকাণ্ড চালাতে দেওয়া হবে না।
এ সময় সু চির একটি চিঠি প্রধানমন্ত্রীকে হস্তান্তর করে তাঁর দূত দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা আরও ঘনিষ্ঠ করার আগ্রহ ব্যক্ত করেন। দুই দেশের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানের প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরেন কিউ তিন।
এর আগে দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় দ্বিপাক্ষিক আলোচনায়ও রোহিঙ্গাদের বিষয়ে বাংলাদেশের জোরালো অবস্থান তুলে ধরা হয়। এসময় বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, বাংলাদেশে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি রাখাইন রাজ্য থেকে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বাংলাদেশের জন্য সমস্যা তৈরি করছে বলে বৈঠকে জানানো হয়।
পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠকের পরে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বিকেলে সেখানেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে এবং সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
এদিকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বৈঠক শেষে কোনো পক্ষই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি। এমনকি আলোচনার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও কোনো বিজ্ঞপ্তি প্রচার করেনি।
তবে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশটির সেনাবাহিনীর অত্যাচার থেকে প্রাণে বাঁচতে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে তিন লাখের বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। গত অক্টোবরে রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর সশস্ত্র বাহিনীর হামলা শুরুর পর নতুন করে অনুপ্রবেশ করেছে আরও প্রায় ৬৫ হাজার রোহিঙ্গা, যা বাংলাদেশকে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছে।
মিয়ানমারের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন
গত অক্টোবরে রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযানের পর থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ শুরু হলে দেশটির সঙ্গে আলোচনায় বসার আগ্রহ দেখিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু তাতে সাড়া মেলেনি মিয়ানমারের। তবে দেশটিতে সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গা নির্যাতনের ঘটনায় আন্তর্জাতিক উদ্বেগ বাড়তে থাকায় শেষমেষ আলোচনার জন্য বিশেষ দূত পাঠিয়েছে মিয়ানমার।
দেশটির এ উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও বৈঠক সূত্র বলছে, বাংলাদেশ নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করলেও এ সমস্যা নিয়ে মিয়ানামরের আগের অবস্থানের খুব বেশি পরিবর্তন লক্ষ করা যায়নি।
কঠোর অবস্থান নিতে হবে বাংলাদেশকে
দশকের পর দশক ধরে চলা রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশকে আরো কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এ প্রসঙ্গে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মহিউদ্দিন আহমেদ বেনারকে বলেন “বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে বলেছে, বিষয়টা অত্যন্ত ইতিবাচক। তবে আমি মনে করি শুরু থেকেই আমরা (বাংলাদেশ) মিয়ানমারের প্রতি নমনীয় ছিলাম।”
তাঁর মতে, “মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নির্যানতনের ঘটনা বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করছে। নিরুপায় হয়ে ঢুকে পড়া রোহিঙ্গারা এ দেশের জন্য বোঝা হয়ে উঠেছে। পাহাড় ও বন কেটে তারা বসতি তৈরি করছে; যা সামাজিক নানা সমস্যা তৈরির পাশাপাশি পরিবেশেরও ক্ষতি করছে।”
তবে বিশেষ দূতের এই সফরে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে সন্তোষজনক অগ্রগতি না হলে আন্তর্জাতিকভাবে চাপ অব্যাহত রাখতে কাজ করার পক্ষে মত দিয়েছেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী।
বেনারকে শমসের মবিন বলেন, “প্রতিশ্রুতি দিয়েও কথা না রাখার ইতিহাস মিয়ানমারের রয়েছে। সে বিষয়টি মাথায় রেখে দেশটির ওপর চাপ বাড়াতে হবে।”
তিনি বলেন, সম্প্রতি ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা বা ওআইসি রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমে দেশটির ওপর চাপ অব্যাহত রাখা উচিত।