রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন: চীনের মধ্যস্থতায় আসন্ন ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে ফলপ্রসূ সিদ্ধান্তের আশায় বাংলাদেশ

শরীফ খিয়াম
2021.01.13
ঢাকা
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন: চীনের মধ্যস্থতায় আসন্ন ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে ফলপ্রসূ সিদ্ধান্তের আশায় বাংলাদেশ বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজে করে নোয়াখালীর ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে রোহিঙ্গাদের। ২৯ ডিসেম্বর ২০২০।
[এএফপি]

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে চীনের মধ্যস্থতায় মিয়ানমারের সাথে আসন্ন ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে ফলপ্রসূ কোনো সিদ্ধান্তের আশা করছে বাংলাদেশ। 

আগামী ১৯ জানুয়ারি ঢাকায় চীনের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে সচিব পর্যায়ের এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে বুধবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। 

তিনি জানান, চীনের উদ্যোগে সর্বশেষ ত্রিপক্ষীয় বৈঠকটি গত বছরের ২০ জানুয়ারি ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই বৈঠকে মিয়ানমার প্রতিনিধিরা বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু করোনাভাইরাস পরিস্থিতি এবং তাঁদের নির্বাচনের কারণে আর বৈঠক হয়নি। 

প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এ পর্যন্ত মিয়ানমারকে আট লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গার তথ্য যাচাইর জন্য দেয়া হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “দুর্ভাগ্যজনকভাবে মিয়ানমার খুব ধীরগতিতে সত্যায়নের কাজটি করছে।” 

এর মধ্যে এখন পর্যন্ত দেশটি “মাত্র ৪২ হাজার জনকে সত্যায়ন করেছে,” জানিয়ে তিনি বলেন, “এখানে মিয়ানমারের আন্তরিকতার অভাব রয়েছে।” 

তবে আসন্ন বৈঠকে “প্রত্যাবাসন বিষয়ে ফলপ্রসূ কোনো সিদ্ধান্ত হবে,” আশা করেন ড. মোমেন। 

তিনি বলেন, “রোহিঙ্গা সংকট নিরসনের একমাত্র সমাধান প্রত্যাবাসন। এর কোনো বিকল্প নেই।” 

২০১৯ সালে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে বাংলাদেশ, চীন ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে প্রথম ত্রিপক্ষীয় বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও সেখানে উপস্থিতি ছিলেন। ওই বৈঠকে প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য ত্রিপক্ষীয় একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। 

এছাড়া গত বছরের অক্টোবরে ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত তিন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের নিয়ে বেইজিংয়ে একটি বৈঠক ডাকার প্রস্তাব দিয়েছেন বলে জানান ড. মোমেন। 

‘সুনির্দিষ্ট’ সিদ্ধান্তের প্রত্যাশা

অতীতের বৈঠকগুলোতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে ইতিবাচক ফল না মিললেও বর্তমান প্রেক্ষাপটকে একটু আলাদা বলে মনে করেন কূটনৈতিক বিশ্লেষক ড. দেলোয়ার হোসেন।

তাঁর মতে, “গত কিছুদিনের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে এক ধরনের ‘ডিপ্লোম্যাটিক মোমেন্টাম’ (কূটনৈতিক গতিশীলতা) তৈরি হয়েছে।” 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এই অধ্যাপক বলেন, “সম্প্রতি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে রোহিঙ্গাদের বিষয়টি দুবার (১৮ নভেম্বর এবং ৩১ ডিসেম্বর) এসেছে। সেখানে ১৩০টির বেশি ভোট মিয়ানমারের বিপক্ষে পড়েছে। পাশাপাশি চীন, ভারত এবং জাপানের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, তারা মিয়ানমারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করবে।” 

এছাড়া রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের বিপক্ষে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসের (আইসিজে) দেওয়া অন্তর্বর্তীকালীন রায়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এসবই ইতিবাচক।” 

তবে তাঁর মতে, “মিয়ানমার রাষ্ট্র বা শাসকদের যে চরিত্র তাতে আমরা আস্থা রাখতে পারি না। প্রত্যাবাসন শুরু করতে দেশটির ওপর আরো বড় ধরনের আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগের প্রয়োজন হবে।” 

“কূটনৈতিক এই প্রক্রিয়ায় চীনের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি হওয়াটা একটি ইতিবাচক দিক হলেও তারা এখনও মিয়ানমারের শাসকগোষ্ঠীকে সমর্থন করে যাচ্ছে। জাতিসংঘে তারা কিছুদিন আগেও মিয়ানমারের পক্ষে ভোট দিয়েছে,” বলেন ড. দেলোয়ার। 

তবে তাঁর প্রত্যাশা, তবে “এবারের বৈঠকে কোনো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত হবে।” 

“আমারা আশা করি বৈঠকে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে চীন ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে এবং শরণার্থীদের পাশে থাকবে,” বেনারকে বলেন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সংগঠন আরাকান ন্যাশনাল ইউনিয়নের সভাপতি মাস্টার মো. ইলিয়াছ। 

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের নভেম্বর ও ২০১৯ সালের আগস্টে দুই দফা প্রত্যাবাসনের দিন ঠিক হলেও রাখাইনে অনুকূল পরিবেশ না থাকায় কোনো রোহিঙ্গা ফিরতে রাজি হননি। 

কক্সবাজার থেকে প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন সুনীল বড়ুয়া।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।