হাজার ছাড়িয়ে গেছে ভারত থেকে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা

জেসমিন পাপড়ি
2019.01.17
ঢাকা
190117_INDIA_rohingya_1000.jpg ভারত থেকে বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাদের বহিষ্কারের দাবিতে নয়া দিল্লিতে সংযুক্ত হিন্দু ফ্রন্ট এর বিক্ষোভ। ৫ আগস্ট ২০১৮।
[এএফপি]

মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে—এমন ভয়ে গত ছয় সপ্তাহে ভারত থেকে ৩০০ পরিবারের প্রায় ১ হাজার ৩০০ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। রাখাইনে মিয়ানমার সেনাদের নিপীড়ন থেকে বাঁচতে তাঁরা ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম ভারত থেকে আসা রোহিঙ্গাদের এ সংখ্যাটি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বেনারকে বলেন, “২০১৮ সালের মাঝামাঝি অল্প কিছু রোহিঙ্গা ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছিল। কিন্তু হঠাৎ করে ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিক থেকে জানুয়ারির ১৬ তারিখ পর্যন্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ১ হাজার ৩০০ রোহিঙ্গা ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।”

তাঁদের কক্সবাজারের উখিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন আশ্রয় শিবিরে আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউএনএইচসিআরে তত্ত্বাবধানে রাখার পাশাপাশি বিষয়টি চিঠি দিয়ে সরকারকে অবহিত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য সুখকর নয়। তাই এখনই এ বিষয়ে ভারতের সাথে আলোচনা করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

শরণার্থী ও অভিবাসন বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর বেনারকে বলেন, “রোহিঙ্গারা ভারতে অনিরাপত্তায় ভোগার কারণেই বাংলাদেশে আসছে। বিষয়টা নিয়ে এখন ধীরে, সুস্থে, ভাবনা চিন্তার সুযোগ নেই। এই মুহূর্তে ভারতের সাথে আলোচনা করা দরকার।”

আসিফ মুনীর বলেন, “যে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা মিয়ানমারের সাথে চলছে সেটা ভালো মনে করলে ভারতকেও এ ধরনের আলোচনার জন্য অনুরোধ করতে পারে বাংলাদেশ।”

রোহিঙ্গা শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ভারত থেকে আসা রোহিঙ্গাদের কাছে ভারতের ইউএনএইচসিআর কার্ডও রয়েছে।

এদের বেশিরভাগই রয়েছেন উখিয়ার কুতুপালং রাবার বাগানের অন্তর্বর্তীকালীন আশ্রয় শিবিরে। এছাড়া কিছু রোহিঙ্গা নাইক্ষ্যংছড়ি, উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন শিবিরে তাঁদের নিকট আত্মীয়-স্বজনের কাছেও আশ্রয় নিয়েছেন।

সম্প্রতি ভারতে থাকা রোহিঙ্গাদের কয়েকজনকে দুই দফায় মিয়ানমার ফেরত পাঠায় ভারত সরকার।

টেকনাফের লেদা ক্যাম্পের ডেভেলপমেন্ট কমিটির আবদুল মতলব বেনারকে বলেন, “ভারতে যেসব এলাকায় রোহিঙ্গা রয়েছে তাঁরা সেখানে ভালো নেই। তা ছাড়া সেখানে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের থেকে দুই দফায় কিছু রোহিঙ্গাকে জোর করে মিয়ানমার ফেরত পাঠানো হয়েছে। এ কারণে আতঙ্কিত হয়ে বাকি রোহিঙ্গারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে চলে আসছে।”

প্রসঙ্গত, ১৯৭৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত মিয়ানমারের সেনা নির্যাতনের মুখে প্রাণ বাঁচাতে চার দফায় রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে রোহিঙ্গার ঢল নামে।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় অবস্থান করছে প্রায় ১১ লাখ ১৮ হাজার রোহিঙ্গা।

‘স্বেচ্ছায় ভারত ছাড়ছেন রোহিঙ্গারা’

সাম্প্রতিককালে ভারত থেকে অন্তত ১২৭০ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পাড়ি জমিয়েছেন বলে বেনারকে জানান ভারতে রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা এনজিও রোহিঙ্গা মানবাধিকার উদ্যোগ এর প্রধান কাও মিন। এই রোহিঙ্গাদের বেশিরভাগই জম্মু, হায়দ্রাবাদ ও রাজস্থান থেকে বাংলাদেশে গেছেন বলে জানান তিনি।

কাও মিন বেনারকে বলেন, “রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পাড়ি জমানোর দুটো কারণ রয়েছে; সাম্প্রতিককালে রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক তথ্য নেবার জন্য ভারত সরকারের ঘোষণার কারণে অনেকে মনে করছেন যে, তাঁদেরকে হয়ত মিয়ানমার ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হবে। দ্বিতীয় কারণটি হলো, শরণার্থী মর্যাদা থাকার পরেও সম্প্রতি পাঁচ রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে হস্তান্তরের ঘটনা, এর ফলে শরণার্থী মর্যাদা আছে এমন রোহিঙ্গারাও ভাবছেন যে তাঁদেরকে জোর করে মিয়ানমার ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হতে পারে।”

ভারত ছেড়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যাটি তিনি ভারত ও বাংলাদেশের রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে পেয়েছেন বলে জানান কাও মিন।

তবে কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গা হয়ত ‘স্বেচ্ছায়’ জম্মুর শরণার্থী শিবিরি ছেড়ে গেছেন বলে বেনারের কাছে মন্তব্য করেন জম্মুর ডিভিশনাল কমিশনার সঞ্জীব ভার্মা।

সঞ্জীব ভার্মা টেলিফোনে বেনারকে জানান, “তাঁরা অনেক বছর ধরে নিরাপদেই জম্মুতে বসবাস করছেন। আমি ঠিক জানি না সম্প্রতি তাঁদের কতজন জম্মু ছেড়ে গেছেন। তবে যদি কোনো পরিবার বা ব্যক্তি জম্মু ছেড়ে গিয়ে থাকেন, তবে তা কোনো চাপের কারণে নয়, বরং স্বেচ্ছায়। এখানকার কর্তৃপক্ষ তাঁদেরকে শিবির ছাড়ার জন্য কোনো চাপ দেয়নি।”

জম্মুতে প্রায় সাত হাজার রোহিঙ্গা রয়েছেন বলে জানান সঞ্জীব।

এদিকে ভারতের আসাম সীমান্ত এলাকায় রোহিঙ্গাদের চলাচল নজরে পড়েনি বলে বেনারকে জানিয়েছেন ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ এর গৌহাটির কর্মকর্তারা।

বিএসএফএ’র নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বেনারকে বলেন, “ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তগুলোতে লোকজনের কোনো ধরনের অস্বাভাবিক চলাচল আমাদের চোখে পড়েনি।”

প্রসঙ্গত, ভারত থেকে আসাম, ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তগুলো দিয়েই রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করে থাকেন।

প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন কক্সবাজার থেকে আবদুর রহমান, ভারতের জম্মু থেকে মোহাম্মদ আমিন পিরজাদা ও গৌহাটি থেকে ঝুমুর দেব।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।