রোহিঙ্গাদের হাতে বাংলাদেশি পাসপোর্ট, চিন্তিত প্রশাসন
2017.01.18

চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ২২ জনকে আটক করেছে ইমিগ্রেশন পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, তাঁদের জাতীয়তা রোহিঙ্গা। তাঁরা জাল পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি আরব যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন।
বিমানবন্দর ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার রিয়াজুল কবির সাংবাদিকদের কাছে এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান “বুধবার সকাল নয়টায় ২২ জনের একটি দলকে ইমিগ্রেশন পুলিশ আটক করে। তাঁরা ওমরা ভিসা নিয়ে এয়ার অ্যারাবিয়ার একটি বিমানে সৌদি আরবে যাচ্ছিলেন।”
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২২ জনের ওই দলটির কথাবার্তা শুনে ইমিগ্রেশন পুলিশের সন্দেহ হয়। ইসলাম ধর্ম মতে নারীরা বিবাহ বৈধ নয় এমন নিকটাত্মীয় ছাড়া কারও সঙ্গে হজ বা ওমরাহ পালন করতে পারেন না। দলে থাকা নারীদের সঙ্গে এমন কোনো পুরুষও ছিলেন না। এ ছাড়া তাঁরা কেউ বাংলায় কথা বলতে পারছিলেন না।
সাধারণত রোহিঙ্গারা চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলেন। তাঁরা প্রমিত বাংলায় কথা বলতে পারেন না। প্রথম দফায় ২২ জনকে আটক করা হলেও পরে ১৪ জনকে আটক দেখানো হয় গুরুতর সন্দেহের পরিপ্রেক্ষিতে। গত বুধবার বরিশাল থেকে চার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আটক করে পুলিশ।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সরকার বলছে এই মুহূর্তে তিন লাখ ৩৩ হাজার রোহিঙ্গা আছেন। তাঁদের মধ্যে মাত্র ৩৩ হাজার নিবন্ধিত। বাকিরা অনিবন্ধিত ও শরণার্থী শিবিরের বাইরে অবস্থান করছেন।
এ ছাড়া জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম বলছে, মায়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে গত বছরের অক্টোবর থেকে প্রায় ৫৬ হাজার শরণার্থী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। যদিও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এই সংখ্যা এখন ৬৬ হাজার।
রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ নিয়ে বৃহত্তর চট্টগ্রামের মানুষের মধ্যে অস্বস্তি রয়েছে। অভিযোগ আছে, বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করে রোহিঙ্গারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শ্রমিক হিসেবে যাচ্ছেন ও নানা অপরাধে জড়াচ্ছেন।
চট্টগ্রাম এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুর্তজা ওয়ালী গতকাল রাতে বলেন, এই ঘটনায় দুটি মামলার প্রস্তুতি চলছে।
“ইমিগ্রেশন পুলিশ দলটিকে শনাক্ত করার পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আমাদের হাতে সোপর্দ করেছে। দলে সাতজন পুরুষ ও সাতজন মহিলা আছেন। তাঁদের কাছে বাংলাদেশি পাসপোর্টও আছে। তাঁরা চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের ঠিকানা ব্যবহার করেছে,” বেনারকে বলেন মুর্তজা ওয়ালী।
তবে মুর্তজা ওয়ালী বলেছেন, আটককৃতরা রোহিঙ্গা কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাঁরা সবাই বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করছেন এবং এই পাসপোর্টগুলো মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে চিন্তিত প্রশাসন
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গারা নাফ নদী পেরিয়ে প্রথমেই এসে উঠছেন কক্সবাজারের টেকনাফে। সেখান থেকে তাঁরা বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছেন। তাঁদের ভাষা চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের আঞ্চলিক ভাষার মতো হওয়ায় প্রশাসনের পক্ষে সহজেই শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না।
দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেনারকে বলেন, তাঁরা যে বাংলাদেশি পাসপোর্ট বা জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করছেন না তা জোর গলায় বলা যাচ্ছে না।
অনুপ্রবেশকারীদের বড় অংশই শরণার্থী শিবিরের বাইরে থাকছেন। তাঁদের সব সময় নজরদারির মধ্যে রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন অবশ্য বলেছেন, রোহিঙ্গারা যাতে জাল পাসপোর্ট বা জাতীয় পরিচয়পত্র করতে না পারে, সেই বিষয়টি তাঁরা নজরদারির চেষ্টা করছেন।
তবে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি পাসপোর্ট নেওয়ার কারণে জনশক্তি রপ্তানিতে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে দাবি করেছেন জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রা। বাংলাদেশি পাসপোর্ট কী করে রোহিঙ্গাদের হাতে যাচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন জনশক্তি রপ্তানিকারকেরা।
“একজন বিদেশ গমনেচ্ছু যখন বাংলাদেশি পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে আমাদের কাছে আসে, তখন তাদের প্রকৃত পরিচয় খুঁজে বের করা আমাদের জন্য কঠিন হয়। আমার প্রশ্ন হলো তারা জাল কাগজপত্র পাচ্ছে কোথা থেকে? প্রশাসনের গাফিলতি আছে বলেই এমন হচ্ছে,” বেনারকে বলেন বায়রার যুগ্ম মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান।
শামীম আরও বলেন, এর আগে সৌদি আরবে বিভিন্ন অপরাধে ‘বাংলাদেশি’ পাসপোর্টধারীদের শাস্তি হয়েছে। পরে দেখা গেছে তাঁরা আসলে রোহিঙ্গা। তাঁরা রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। কারও জাতীয়তা নিয়ে সন্দেহ হলে সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের সহযোগিতা নিতে বলা হয়েছে।