শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গা নেতাসহ দশ দিনে ৩ খুন

কামরান রেজা চৌধুরী ও তুষার তুহিন
2018.01.22
কক্সবাজার
উখিয়ার বালুখালি রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের একাংশ। উখিয়ার বালুখালি রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের একাংশ। ১০ জানুয়ারি ২০১৮।
রয়টার্স

বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করার ঠিক আগ মুহূর্তে খুনোখুনি শুরু হয়েছে শরণার্থী শিবিরগুলোতে। গত দশ দিনে সেখানে রোহিঙ্গা নেতাসহ তিনজনকে হত্যা করেছে বিবদমান গ্রুপের সদস্যরা।

সোমবার সকালে মো. ইউসুপ আলী (৬৫) নামে এক রোহিঙ্গাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে বলে বেনারকে নিশ্চিত করেছে পুলিশ।

নিহত ইউসুপ আলী উখিয়ার বালুখালি শিবিরের বি-১০ নং ব্লকে থাকতেন।

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল খায়ের বেনারকে জানান, সোমবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বি-১০ ব্লকের মসজিদের পাশ থেকে ইউসুপ আলীর মৃতদেহটি উদ্ধার করা হয়।

তবে এখনো তাঁরা কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেননি বলে জানান তিনি।

“ফজরের নামাজ শেষে মসজিদ থেকে আসার সময় ছুরিকাঘাত করে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় কে বা কারা জড়িত তা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে,” বেনারকে বলেন খায়ের।

পূর্বশত্রুতার জেরে ইউসুপ আলীকে হত্যা করা হতে পারে বলে তাঁদের ধারণা। তবে পুলিশ তদন্ত করছে বলে তিনি জানান।

এর আগে শুক্রবার রাতে উখিয়ার থাইংখালী এলাকায় মোহাম্মদ ইউসুফ নামের এক রোহিঙ্গা নেতাকে (মাঝি) গুলি করে হত্যা করা হয়।

এছাড়া গত ১৩ জানুয়ারি কুতুপালংয়ের মধুরছড়ার গুলশান পাহাড়ে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে নিহত হন রোহিঙ্গা মমতাজ (৪৫)।

শুক্রবারের হত্যাকাণ্ড

ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল খায়ের জানান, গত ১৯ জানুয়ারী (শনিবার) উখিয়ার থাইংখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একদল মুখোশধারীর গুলিতে মোহাম্মদ ইউসুফ নামের এক রোহিঙ্গা নেতা (মাঝি) নিহত হন।

পুলিশ সূত্র জানায়, শুক্রবার রাত ৮টার দিকে ১০-১২ জনের একটি দল থাইংখালী তানজিমার খোলা রোহিঙ্গা শিবিরের ডি ব্লকের মাঝি ইউসুফকে মাথায় গুলি করে পালিয়ে যায়। মুমূর্ষু অবস্থায় তাঁকে কুতুপালং এমএসএফ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

আবুল খায়ের বলেন, “২০ জানুয়ারি রাত নয়টার দিকে বালুখালী শরণার্থী ক্যাম্পের ময়নারঘোনা থেকে বিদেশি পিস্তল ও গুলিসহ মোহাম্মদ আলম নামে এক রোহিঙ্গাকে আটক করেছে পুলিশ।”

১৩ জানুয়ারি হত্যাকাণ্ড

এর আগে ১৩ জানুয়ারি দুপুরে কুতুপালংয়ের মধুরছড়ার গুলশান পাহাড়ের লম্বারশিয়ার ঘোনায় প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে মমতাজ (৪৫) নিহত হন। এই ঘটনার হোতা আরিফুল্লাহকে আটক করেছে পুলিশ।

পুলিশ সূত্র জানায়, রাখাইনে থাকা অবস্থায় ধৃত আরিফের ভাইয়ের হত্যার সঙ্গে নিহত মমতাজ ও তাঁর পরিবার জড়িত ছিল বলে তাঁদের বিশ্বাস।

এর জের ধরে দুই পরিবারের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। প্রতিশোধ নিতেই আরিফ তাঁকে ছুরিকাঘাত করে খুন করেছে বলে পুলিশের ধারণা।

উখিয়া থানার ওসি আবুল খায়ের বলেন, ধৃতের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

রোহিঙ্গা শিবিরে অপরাধের কারণ সম্পর্কে কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরোজুল হক টুটুল বেনারকে বলেন, “আমাদের ধারণা অধিকাংশ হত্যাকাণ্ড হয় শরণার্থী শিবিরে আধিপত্য বিস্তার অথবা রাখাইনের পূর্বশত্রুতার কারণে।”

এদিকে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা ক্যাম্পের হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে কিছু বলতে নারাজ।

র‌্যাবের অভিযান

১৭ জানুয়ারী উখিয়া থেকে অস্ত্রসহ দুই রোহিঙ্গাকে আটক করেছে র‌্যাব। বুধবার সাড়ে তিনটার দিকে কুতুপালং কচুবনিয়া গ্রামের টেকনাফগামী মহাসড়ক থেকে তাঁদের আটক করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, বালুখালী শিবিরের খাইরুল আমিনের ছেলে মোঃ আব্দুর রহমান প্রকাশ জাবের ওরফে জাবেদ (২৮) এবং কুতুপালং শিবিরের মো. আবুল কালামের ছেলে মোঃ সেলিম (২৪)।

এ সময় তাঁদের কাছ থেকে দুই রাউন্ডগুলিসহ একটি আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশিয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র‍্যাব।

র‌্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মিতানুর রহমান জানান, ধৃত আসামীরা বিভিন্ন সময় ছিনতাই ও ডাকাতিসহ নানা ধরণের অপরাধে জড়িত থাকার কথা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে।

উদ্ধারকৃত অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ তাঁদের উখিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। সর্বশেষ ২০ জানুয়ারি উখিয়ার বালুখালী শিবিরের ময়নারঘোনা থেকে বিদেশি পিস্তল ও গুলিসহ মোহাম্মদ আলম নামে এক রোহিঙ্গাকে আটক করেছে পুলিশ।

শুক্রবার রাত নয়টার দিকে এসব উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ সূত্র জানায়, ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গারা মারধর করে বিদেশি পিস্তলসহ এক রোহিঙ্গাকে পুলিশে সোপর্দ করেছে। তাঁকে উখিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল খায়ের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।