বাংলাদেশের বাধায় সীমান্ত থেকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিলো ভারত

কামরান রেজা চৌধুরী ও জয়শ্রী বালাসুব্রামানিয়ান
2019.01.22
ঢাকা ও নয়াদিল্লি
190122-IN-BD-rohingya-620.jpg সীমান্তের শূন্যরেখা থেকে ফিরিয়ে নেবার পর ত্রিপুরায় ভারতীয় পুলিশের হাতে আটক শিশুসহ এক রোহিঙ্গা নারী। ২২ জানুয়ারি ২০১৯।
[এএফপি]

বাংলাদেশের বাধার কারণে ভারত থেকে অনুপ্রবেশে ব্যর্থ হয়ে তিন দিন সীমান্তের শূন্যরেখায় আটকে থাকা এক দল রোহিঙ্গাকে মঙ্গলবার সকালে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে ভারত।

ভারতের জম্মু থেকে আসা রোহিঙ্গাদের ৩১ সদস্যের ওই দলটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার কাজিয়াতল সীমান্ত দিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছিলেন। তবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) বাধার কারণে তাঁরা বাংলাদেশ প্রবেশ করতে পারেননি।

রোহিঙ্গাদের ওই দলটিতে ১৭ শিশু, ছয়জন নারী ও আটজন পুরুষ রয়েছেন।

“আজ সকাল সাড়ে আটটা থেকে শুরু করে সাড়ে দশটার মধ্যে সব রোহিঙ্গাকে ভারতীয় ভূখণ্ডে সরিয়ে নিয়ে গেছে বিএসএফ,” মঙ্গলবার বেনারকে জানান ২৫ বিজিবি’র কমান্ডিং অফিসার মোহাম্মদ গোলাম কবির।

এদিকে ফিরিয়ে নেওয়া রোহিঙ্গাদের ত্রিপুরার একটি পুলিশ স্টেশনে রাখা হয়েছে বলে বেনারকে জানিয়েছেন ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) কর্মকর্তারা। তাঁদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের দায়ে মামলা করা হয়েছে বলেও তাঁরা জানান।

“মঙ্গলবার সকাল এগারোটার দিকে ওই ৩১ রোহিঙ্গাকে ত্রিপুরার আমতলি পুলিশ স্টেশনে নেওয়া হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের দায়ে মামলা করা হয়েছে,” ত্রিপুরা থেকে টেলিফোনে বেনারকে বলেন বিএসএফ এর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা।

ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে আলাপের প্রেক্ষিতেই রোহিঙ্গাদের থানায় নেওয়া হয় বলে জানান তিনি। তবে ওই রোহিঙ্গাদের বিজিবি বাংলাদেশ থেকে এনে ভারতে ঠেলে দিয়েছে বলে এক বিবৃতিতে অভিযোগ করে বিএসএফ।

“জানুয়ারির ১৮ তারিখ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি)র পক্ষ থেকে আমাদেরকে ফোনে জানানো হয় যে, তাঁরা ভারত থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করা ৩১ জন রোহিঙ্গাকে আটক করেছে। তবে সরেজমিন তদন্ত করে আমরা অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমের এমন কোনো আলামত পাইনি। পাশাপাশি, বিশ্বস্ত সূত্র থেকে আমরা জানতে পেরেছি যে, ভারতে ঠেলে দেবার জন্য বিজিবি নিজেদের পাশ থেকে ওদের ধরে এনেছিল,” বলা হয় বিএসএফ’র সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।

তবে বিজিবির কর্নেল গোলাম কবির বলেন, “আমরা ওই রোহিঙ্গাদের কাছে ইউএনএইচসিআর এর দেয়া কার্ড দেখেছি এবং তারা জম্মু-কাশ্মিরে বসবাস করত। তারা জম্মু-কাশ্মিরে যেভাবে জীবনযাপন করত তা নিয়ে হতাশাগ্রস্ত ছিল। তারা সাত-আটদিন ভ্রমণ করে সীমান্তে এসেছে। বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য তাদেরকে এখানে এনে ট্রাক থেকে নামিয়ে দেয়া হয়।”

তিনি বলেন “রোববার থেকে আমরা বিএসএফ কর্মকর্তাদের সাথে দুই দফা সভা করেছি। আমরা তাদের বলেছি রোহিঙ্গারা এখনও তোমাদের সীমান্তে আছে। তারা ভারতের ইউএনএইচসিআর এর কার্ডধারী শরণার্থী। তাদেরকে আমাদের দেশে ঠেলে দিতে পারো না।”

“অবশেষে তাদের শূণ্যরেখা থেকে ভারতীয় ভূখণ্ডে নেয়া হয়,” যোগ করেন তিনি।

ওই ৩১ জন রোহিঙ্গা জম্মুতে বসবাস করা ছয়টি পরিবারের সদস্য ছিলেন বলে বেনারকে জানান ভারতে রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা এনজিও, রোহিঙ্গা মানবাধিকার উদ্যোগের প্রধান কেয়া মিন।

তিনি বেনারকে বলেন, “ভারতে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে রোহিঙ্গাদের তথ্য সংগ্রহের ঘোষণায় তাঁরা ভীত হয়ে বাংলাদেশে চলে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।”

এদিকে আসামের রাজধানী গৌহাটিতে সোমবার রাতে ১২ শিশুসহ ৩০ রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভারতীয় কর্মকর্তারা। ওই রোহিঙ্গারা একটি বাসে করে ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা যাচ্ছিলেন বলে বেনারকে নিশ্চিত করেছে গৌহাটি পুলিশ।

গত বছরের অক্টোবর ও চলতি জানুয়ারিতে মোট দুই দফায় ভারত ১২ রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার ফেরত পাঠিয়েছে। ভারত থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বলছেন, এর ফলে ভারতে থাকা রোহিঙ্গাদের অনেকেই জোর করে মিয়ানমার ফেরত পাঠানোর ভয়ে বাংলাদেশ পাড়ি জমানোর চেষ্টা করছেন।

ভারতে প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গা রয়েছেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগই জম্মু, হাদ্রাবাদ ও দিল্লিতে বসবাস করেন।

গত দেড় মাসে ভারত থেকে প্রায় দেড় হাজার রোহিঙ্গা বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের কর্মকর্তারা। বাংলাদেশে ইতিমধ্যেই মিয়ানমার থেকে আসা এগারো লাখের বেশি রোহিঙ্গা রয়েছেন।

আড়াইশো রোহিঙ্গা পাঠাচ্ছে সৌদি সরকার

আড়াইশো জন রোহিঙ্গাকে সৌদি আরব বাংলাদেশে পাঠানোর পরিকল্পনা করছে বলে মঙ্গলবার এক প্রতিবেদেনে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা।

এর আগে ৮ জানুয়ারি ১৩ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ ফেরত পাঠায় দেশটি। ওই রোহিঙ্গারা বাংলাদেশি জাল পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি আরবে বসবাস করছিলেন।

সৌদি আরবে ‘ফ্রি রোহিঙ্গা কোয়ালিশন’ এর ক্যাম্পেইন সমন্বয়ক স্যান লিউইন আল জাজিরাকে জানান, “বেশিরভাগ রোহিঙ্গারই বসবাসের অনুমতি রয়েছে, এবং তাঁরা সৌদিতে বৈধভাবেই বসবাস করতে পারেন।”

তিনি বলেন, “তবে সুমাইসির (জেদ্দা) ডিটেনশন কেন্দ্রে আটক এই রোহিঙ্গাদের সাথে অন্য রোহিঙ্গাদের মতো আচরণ করা হয়নি। বরং এদেরকে অপরাধী হিসেবেই গণ্য করা হয়েছে।”

সৌদিতে বেশ কয়েক বছর ধরে বসবাস করা এই রোহিঙ্গাদের ঢাকার বিমানে তুলে দেবার জন্য জেদ্দা বিমানবন্দরে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে, এমন একটি ভিডিও দেখেছেন বলে আল জাজিরাকে জানান স্যান লিউইন।

তিনি জানান, বেশিরভাগ রোহিঙ্গাই পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের জাল পাসপোর্ট নিয়ে সৌদিতে প্রবেশ করেছেন।

সৌদিতে প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা রয়েছেন। এদের মধ্যে ২০১১ সালের পরে দেশটিতে প্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের সৌদি সরকার বসবাসের অনুমতি দেয় না।

“সৌদি আরবের উচিত রোহিঙ্গা বহিষ্কার বন্ধ করা, এবং আগে আসা রোহিঙ্গাদের মতো এদেরকেও বসবাসের অনুমতি দেওয়া,” বলেন স্যান লিউইন।

প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন ভারতের গৌহাটি থেকে ঝুমুর দেব।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।