ভাসানচর দেখতে যাচ্ছেন জাতিসংঘের দূত
2019.01.23
কক্সবাজার

নোয়াখালীর ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের বসবাসের জন্য উন্নত সুবিধাসহ তৈরি আবাসন ব্যবস্থা দেখতে আগামীকাল দ্বীপটিতে যাচ্ছেন বাংলাদেশ সফররত মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংহি লি।
গত শনিবার বাংলাদেশে আসার পর টানা তিনদিন কক্সবাজারের বিভিন্ন শরণার্থী শিবির পরিদর্শন শেষে আগামীকাল তাঁর ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করার কথা ছিল। তবে ভাসানচর যাবার কথা জানিয়ে সেই সংবাদ সম্মেলন পরদিন অনুষ্ঠিত হবে বলে নিজেই বুধবার বিকেলে এক টুইট বার্তায় জানান ইয়াংহি লি।
“সংবাদ সম্মেলনের পরিবর্তিত তারিখ ২৫ জানুয়ারি। কারণ ভাসানচরে যাত্রা,” টুইটে জানান ইয়াংহি লি।
এদিকে নতুন সময়সূচি অনুযায়ী তাঁর সংবাদ সম্মেলন শুক্রবার বিকেল পাঁচটায় অনুষ্ঠিত হবে বলে বুধবার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে জাতিসংঘের ঢাকা অফিস।
গত ৩ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরের মাধ্যমে উদ্বোধনের পর ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল বলে এর আগে বেনারকে জানিয়েছিলেন নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক তন্ময় দাস।
তবে সেই সফর বাতিল হয়ে যাবার পর দ্বীপটি উদ্বোধনের নতুন কোনো তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি। ফলে রোহিঙ্গা স্থানান্তরও শুরু হয়নি।
গত বছর ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যে সামরিক অভিযান শুরু হলে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশের কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ায় পালিয়ে আসে।
সেখানে আগে থেকে অবস্থান করা আরও প্রায় তিন লাখসহ কমপক্ষে এগারো লাখ বাড়তি মানুষ এখন উপজেলা দুটির শরণার্থী শিবিরে অস্বাস্থ্যকর ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করছে।
কক্সবাজারের ওপর চাপ কমাতে গত বছর ফেব্রুয়ারিতে উন্নত সুবিধাসহ নোয়াখালীর ভাসানচরে ৪৫০ একর জমির ওপর আশ্রয় শিবির নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয় সরকার।
প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয় বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীকে।
সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ২,৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।
ভাসানচরের শতকরা ৯০ ভাগ কাজ শেষ বলে গত ডিসেম্বরে বেনারকে জানান সরকারের রোহিঙ্গা সেলের প্রধান শাহ্ রেজওয়ান হায়াত।
তবে ভাসানচরের আবাসন বসবাসের জন্য কতটা উপযোগী তা নিয়ে রোহিঙ্গাসহ বিভিন্ন আন্তজার্তিক সংস্থার আশঙ্কা ছিল শুরু থেকেই। এর আগে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার কিছু সদস্য ভাসানচর পরিদর্শন করলেও আগামীকাল লির পরিদর্শনটিই হবে জাতিসংঘের কোনো উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তার প্রথম ভাসানচর সফর।
ইয়াংহি লি তাঁর বাংলাদেশ সফরের প্রতিবেদন আগামী মার্চে মানবাধিকার কাউন্সিলের সভায় উপস্থাপন করার কথা রয়েছে।
রোহিঙ্গা শিবিরে লি
রোহিঙ্গাদের বর্তমান পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখার জন্য গত সোমবার কক্সবাজারে পৌঁছান লি।
সফরের তিন দিনে তিনি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখার রোহিঙ্গা শিবির, কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালির ট্রানজিট ক্যাম্প এবং কুতুপালং এ শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেন।
এ সময় তিনি মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলে তাঁদের বর্তমান অবস্থার খোঁজ খবর নেন। এছাড়া শরণার্থী শিবিরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকও করেন লি। তবে তিনি সাংবাদিকদের সাথে কোনো কথা বলেননি।
“বর্তমানে আমাদের জরুরি কী সমস্যা আছে তা তিনি জানতে চান। আমরা তাঁকে বলেছি, রোহিঙ্গা শিবিরে আমাদের দিন ভালো যাচ্ছে না। এখানে আমাদের ছেলে মেয়েরা লেখা-পড়া করতে পারছে না,” বেনারকে বলেন শূন্যরেখায় অবস্থানকারী রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ।
“আমরা তাঁকে বলেছি, আমরা যত দ্রুত সম্ভব এখান থেকে চলে যেতে চাই। তবে মিয়ানমারে আমাদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি হতে হবে। আমরা সব অধিকার নিয়ে জাতিসংঘের মাধ্যমে মিয়ানমারে ফিরে যেতে চাই,” যোগ করেন তিনি।
দিল মোহাম্মদ বলেন, “তিনি বলেছেন, আমাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা শুনে তাঁর খুব কষ্ট লাগছে, তিনি খুব ব্যথিত। তিনি (ইয়াংহি লি) রোহিঙ্গাদের এসব সমস্যার কথা জাতিসংঘকে জানাবেন। এবং রোহিঙ্গাদের কীভাবে নিরাপদে ও মর্যাদার সাথে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো যায়, সে বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘ কাজ করছে বলেও তিনি আমাদের জানিয়েছেন।”