প্রতিবেদন প্রতিক্রিয়া: ধর্ষিতা রোহিঙ্গা নারীদের প্রতি বাংলাদেশি নেতৃবৃন্ধের সহমর্মিতা
2017.01.24
বাংলাদেশে শরণার্থী তিনভাগের একভাগ রোহিঙ্গা নারী সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, তারা মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর ধর্ষণের শিকার, এ ঘটনা শুনে আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া।
তিনি বলেন “এমনটি হয়ে থাকলে তা খুবই দুঃখজনক। তবে এ ধরনের পরিস্থিতি সম্পর্কে আমরা এখনো অবগত নই।”
গত সপ্তায় ৫৪জন নতুন শরণার্থী রোহিঙ্গা নারীর সাক্ষাৎকার ভিত্তি করে বেনার নিউজ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যেখানে তাদের ১৭ জন জানিয়েছেন যে তারা মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।
গত অক্টোবরে রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী একটি দলের আক্রমণে মিয়ানমারের ৯ পুলিশ সদস্য নিহত হন। এর প্রতিক্রয়ায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে সহিংস অভিযান শুরু করে। অভিযানের সময় মিয়ানমার সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগ উত্থাপিত হলেও এ বিষয়ে সাক্ষাৎকারভিত্তিক প্রতিবেদন বেনার নিউজেই প্রথম প্রকাশিত হয়।
তবে মিয়ানমার সরকার শুরু থেকেই রোহিঙ্গাদের উপর কোনো ধরনের নির্যাতনের বিষয় সম্পূর্ণ অস্বীকার করে আসছে।
রোহিঙ্গাদের উপর মানবিক বিপর্যয় এবং বেনার নিউজে প্রকাশিত ধর্ষিতা নারীদের উপর প্রতিবেদন প্রসঙ্গে মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, “বিষয়টি জেনে আলোচনার মাধ্যমে আমরা করণীয় নির্ধারণ করব।”
সম্পূর্ণ দায় মিয়ানমারের
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক রোহিঙ্গাদের উপর সব ধরনের নির্যাতনের জন্য মিয়ানমারেক দায়ী করেছেন। যদিও মানবাধিকার কমিশনের পক্ষে ধর্ষণ বিষযে রোহিঙ্গা নারীদের অভিযোগ সম্পর্কে কোনো তদন্ত করা হবে কি না সে প্রসঙ্গে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
তিনি বলেন, “রোহিঙ্গাদের সঙ্গে যা ঘটছে, তার জন্য সম্পূর্ণ দায়ী মিয়ানমার। বাংলাদেশে যেসব রোহিঙ্গা এসছে, মিয়ানমারে থাকলে তাদেরকে জীবন হারাতে হতো।”
তিনি আরো বলেন “আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদেরকে আমাদের সামর্থের মধ্যে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে। এবং সরকার সে চেষ্টাও করছে।”
জাতিসংঘের হিসাব মতে গত অক্টোবরের পর এখন পর্যন্ত প্রায় ৬৫ হাজার নতুন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছেন। এর বাইরে বাংলাদেশ সরকারের হিসাবে আগে থেকেই আরো প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে বসবাস করছেন।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সমস্যা সমাধান প্রসঙ্গে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বেনারকে বলেন, “এর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে তাদেরকে নিজ দেশে নাগরিকের মর্যাদা দিতে মিয়ানমারের উপর চাপ বাড়াতে হবে।”
ওআইসির বিশেষ সভা
গত সপ্তাহে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে রোহিঙ্গাদের উপর মানবিক বিপর্যয় বিষয়ে একটি বিশেষ সভা করেছে আন্তর্জাতিক ইসলামী সংস্থা-ওআইসি। সভা থেকে মিয়ানমারের প্রতি রোহিঙ্গাদের উপর সব ধরনের নির্যাতন ও মানবাধিকার লংঘন বন্ধের আহ্বান জানানো হয়। বাংলাদেশের পক্ষে এতে অংশ নেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
সেই বৈঠক প্রসঙ্গে তিনি বেনারকে বলেন, “মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিকভাবেও সম্পর্ক জোরদার করার চেষ্টা করছি জানিয়ে ওআইসিকে আমরা বলেছি, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আমরা মিয়ানমারকে সাহায্য করার আশ্বাসও দিয়েছি। কিন্তু মিয়ানমারের পক্ষ থেকে তেমন ইতিবাচক সাড়া পাইনি।"
তিনি বলেন, “বৈঠকে সদস্য দেশগুলোর মতামতের ভিত্তিতে বেশ কিছু রেজুলেশন আনা হয়েছে, সেগুলো মিয়ানমার সরকারের কাছে পৌঁছানো হবে।”
ওআইসি সম্মেলনের আগে রোহিঙ্গা সমস্যা বিষয়ে বাংলাদেশ ও সফররত মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের মধ্যে মাসের শুরুতে ঢাকায় বেশ কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এসব সভায় রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আলোচনা চালিয়ে যাবার বিষয়ে দুই পক্ষই একমত হয়। তবে বাংলাদেশ এ পর্যন্ত আশ্রয় নেওয়া সব রোহিঙ্গাকে ফেরত নেওয়ার ওপর জোর দিয়েছে।
এ বিষেয়ে জানতে চেয়ে ইন্টরন্যাশনাল অরর্গানাইজেশন অব মাইেগ্রশন-ওআইএম, ঢাকা অফিসের একজন কর্মকর্তার সাথে সোমবার বেনার-এর পক্ষ থেকে ইমেইল যোগাযোগ করে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। উল্লেখ্য যে ওআইএম কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা।