রোহিঙ্গাদের জন্য মালয়েশিয় ত্রাণবাহী জাহাজের মিয়ানমার যাত্রা শুরু, আসবে বাংলাদেশেও
2017.02.03
কুয়ালালামপুর

নির্ধারিত দিনের প্রায় একমাস পর রোহিঙ্গাদের জন্য বহুল আলোচিত মালয়েশিয় ত্রাণবাহী জাহাজ ইয়াঙ্গুন ও টেকনাফের উদ্দেশ্যে বন্দর ছেড়ে যাত্রা শুরু করেছে।
শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেল চারটায় কালাঙ বন্দরে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজ্জাক নটিক্যাল আলিয়া নামের ত্রাণবাহী এই জাহাজটির যাত্রা উদ্বোধন করেন। জাহাজটি রোহিঙ্গাদের জন্য প্রায় বারো লক্ষ ডলার মূল্যের ২,২০০ টন খাদ্য, চিকিৎসা, পোশাক ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী বহন করে নিয়ে যাচ্ছে।
জাহাজটির গত ১০ জানুয়ারি মালেয়িশয়ান বন্দর ছেড়ে যাবার কথা থাকলেও মিয়ানমার থেকে অনুমতি, মালামাল ও নাবিকদের নিপরাপত্তাসহ বিভিন্ন কূটতৈনিক প্রক্রিয়ার কারণে যাত্রা বিলম্বিত হয়।
মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে মিয়ানমার সরকারের কাছে জাহাজটিকে রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিত্তের আশপাশে নোঙর করে ত্রাণ বিতরণের অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান করে জাহাজটিকে শুধু ইয়াঙ্গুন বন্দরে ভিড়ার অনুমতি দিয়েছে।
কুয়ালালামপুরে মিয়ানমার দূতাবাসের একজন মুখপাত্র বৃহস্পতিবার ত্রাণবাহী জাহাজটির ইয়াঙ্গুন বন্দরে নোঙর করার অনুমতি পাবার বিষয়টি বেনার নিশ্চিত করেন।
“ মিয়ানমারের মালয়েশিয়ান দূতাবাস থেকে আবেদনটি করা হয়েছিল। আবেদনের প্রেক্ষিতে মিয়ানমার সরকার অনুমোদন দিয়েছে।” জানান কুয়ালালামপুরে মিয়ানমার দূতাবাসের মুখপাত্র।
পরিকল্পনামতে ত্রাণবাহী জাহাজটি ৭ ফেব্রুয়ারি ইয়াঙ্গুন বন্দরে ভিড়ার কথা রয়েছে। ফেরার পথে ১০ তারিখ জাহাজটি নোঙর করবে বাংলাদেশে।
জাহাজটিতে প্রায় ৮ লাখ ডলার মূল্যের খাদ্যসামগ্রী, পঞ্চাশ হাজার ডলার মূল্যের কাপড়চোপড় এবং সাড়ে তিন লক্ষ ডলার মূল্যের অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী রয়েছে।
মিয়ানমার সরকারের মাধ্যমে রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিত্তের আশপাশের এলাকায় বিতরণের জন্য ৫০০ টন ত্রাণ সামগ্রী ইয়াঙ্গুন বন্দরে নামানো হবে বলে বেনারকে জানিয়েছেন ত্রাণ মিশনের প্রধান আব্দুল আজিজ আব্দুল রহিম।
“মিয়ানমার সরকারের পরিবহণ মন্ত্রণালয় ইয়াঙ্গুন থেকে আমাদের পাঁচজন স্বেচ্ছাসেবকসহ ত্রাণগুলো সিত্তে পাঠানোর ব্যবস্থা করবে। এর পরে সেখান থেকে জাহাজটি ১০ ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে পৌঁছাবে”, বেনারকে জানান আব্দুল রহিম।
রোহিঙ্গা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আক্রমণে নয়জন সীমান্তরক্ষী নিহত হবার প্রতিক্রিয়ায় রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনী ব্যাপক অভিযান শুরু করে। অভিযানের সময় হত্যা, ধর্ষণ, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া এবং গণগ্রেফতারের মতো বিভিন্ন নির্যাতনের অভিযোগ উঠলেও ন্যাপিদো কর্তৃপক্ষ বরাবরই রোহিঙ্গাদের উপর মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
জাতিসংঘের হিসাবে সহিংসাতায় অক্টোবরের পর থেকে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৯০জন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। প্রাণভয়ে ৬৬ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়া আগে থেকে আরো তিন লক্ষের মতো রোহিঙ্গা বহু বছর ধরে বাংলাদেশে বসবাস করছেন।
বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক বিবেচনায় শরণার্থী মর্যাদা দিতে রাজি নয়। অন্যদিকে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী হিসেবে গণ্য করে তাদেরকে নাগরিকত্বসহ অন্যান্য রাষ্ট্রীয় অধিকার থেকে বঞ্চিত করে আসছে।
উল্লেখ্য, মালয়েশিয়াতে ৯০ হাজারের মতো রোহিঙ্গা বসবাস করেন। যাদের মধ্যে ৫৬ হাজার জাতিসংঘের শরণার্থী মর্যাদাপ্রাপ্ত।