রোহিঙ্গা সংকট: আর্থিক সহায়তা দেবে সুইজারল্যান্ড

জেসমিন পাপড়ি
2018.02.05
ঢাকা
ঢাকায় যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রপতি অ্যালেইন বেরসে। ঢাকায় যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রপতি অ্যালেইন বেরসে। ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮।
ফোকাস বাংলা

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তায় এই বছরেই ১ কোটি ২৮ লাখ ৪০ হাজার ডলার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সুইজারল্যান্ড।

সোমবার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন বাংলাদেশ সফররত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রপতি অ্যালেইন বেরসে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে নিজ দেশের পূর্ণ সমর্থনের কথাও জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এই সংকট নিরসনে এ বিষয়ে কফি আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন এবং একই সঙ্গে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ জোরদার করতে সুইজারল্যান্ডের প্রতি আহ্বান জানান।

রোববার দুপুরে চার দিনের সফরে ঢাকায় পৌঁছান প্রেসিডেন্ট অ্যালেইন বেরসে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান। এটাই কোনো সুইস রাষ্ট্রপ্রধানের প্রথম বাংলাদেশে সফর।

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য সুইজারল্যান্ডের এই আর্থিক সহায়তাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকেরা। তবে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানোর মাধ্যমে সকল রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন জরুরি বলে মত দিয়েছেন তাঁরা।

“এই সংকটকালীন সময়ে সুইজারল্যান্ডের মতো বাংলাদেশের অনেক বন্ধু রাষ্ট্রই এগিয়ে এসেছে। এটা ভীষণ ইতিবাচক। কিন্তু রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনে দেশটির ওপর কতটুকু চাপ আমরা দিতে পেরেছি সেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ,” বেনারকে বলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তারেক শামসুর রেহমান।

সোমবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দুদেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর একান্ত বৈঠক করেন শেখ হাসিনা ও অ্যালেইন বেরসে। পরে তাঁরা যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন।

এ সময় নিপীড়নের শিকার রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক সহায়তার জন্য শেখ হাসিনা সরকারের প্রশংসা করেন সুইজারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট।

প্রসঙ্গত, গত কয়েক দশক ধরে মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়ে পালিয়ে আসা প্রায় চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থানে করছিল। এরই মধ্যে গত বছরের আগস্টে দেশটির রাখাইন রাজ্যে নতুন করে সহিংসতা শুরু হলে আবারও বাংলাদেশে আসতে শুরু করে রোহিঙ্গারা। জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থাগুলোর জরিপ অনুসারে ইতিমধ্যে নতুন আসা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা প্রায় পৌনে সাত লাখ ছাড়িয়েছে।

এই বিরাট সংখ্যক রোহিঙ্গাদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ। এই অবস্থায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ক একটি চুক্তিও করেছে দুদেশ। বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের মধ্যে রোহিঙ্গাদের সফল প্রত্যাবাসনের জন্য সম্পাদিত চুক্তিকে সমস্যা সমাধানের জন্য একটি কার্যকরী পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেছেন বেরসে।

এছাড়া রাখাইনের বাস্তুহারা এসব নাগরিকদের প্রতি সংহতি, সহায়তা এবং সুরক্ষা প্রদানের জন্য জন্য বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি।

যৌথ সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেন, “সুইজারল্যান্ডের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছি। আমি জানিয়েছে এই সমস্যার মূল মিয়ানমারে। তাই মিয়ানমারকেই এর সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।”

রাখাইনে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে কফি আনান কমিশনের প্রতিবেদন অবিলম্বে বাস্তবায়নের ওপরও গুরুত্ব দেন শেখ হাসিনা। এই সংকট সমাধানে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে সুইজারল্যান্ডের অবস্থানের জন্য বেরসেকে ধন্যবাদ দেন তিনি।

রোহিঙ্গা সংকট ছাড়াও দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা ও বাণিজ্য, এসডিজি বাস্তবায়নে সহযোগিতাসহ দ্বিপক্ষীয় নানা বিষয়ে আলোচনা করেন তাঁরা।

“দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশ ও সুইজারল্যান্ডের মধ্যে সব ধরনের সম্পর্ক উন্নয়নের আকাঙ্ক্ষা লক্ষ করা গেছে” সাংবাদিকদের বলেন পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক।

ইউরোপের এই দেশটি বাংলাদেশের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে চায় বলেও জানান তিনি।

সুইস রাষ্ট্রপতি সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গেও বৈঠক করেন।

কক্সবাজারে যাবেন মঙ্গলবার

চলমান রোহিঙ্গা সংকটে সংহতি প্রকাশের জন্য সুইস প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে সরকারি সফর করছেন বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় ঢাকার সুইস দূতাবাস।

তাই এ সফরের অপরিহার্য অংশ হিসেবে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের অবস্থা সরেজমিনে দেখতে মঙ্গলবার সকালে কক্সবাজার যাবেন সুইস প্রেসিডেন্ট।

কক্সবাজার পৌঁছানোর পরে তিনি কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প অবস্থারত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলবেন। কক্সবাজার সদর হাসপাতালও পরিদর্শন করার কথা রয়েছে তাঁর।

এদিন বিকেলে ঢাকায় ফিরে সুশীল সমাজ ও বাংলাদেশে কর্মরত সুইজারল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন সুইস প্রেসিডেন্ট। তিনি ঢাকা আর্ট সামিটও পরিদর্শন করবেন। এই সামিটের পার্টনার হচ্ছে সুইজারল্যান্ডের আর্ট কাউন্সিল ‘প্রো হেলভেসিয়া’।

বুধবার সফর শেষে ঢাকা ছাড়বেন প্রেসিডেন্ট অ্যালেইন বেরসে।

“রোহিঙ্গা নির্যাতন আঞ্চলিক সংঘাতের জন্ম দিতে পারে"

এদিকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নির্যাতন ঘটনা আঞ্চলিক সংঘাতের জন্ম দিতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার সংঠনের প্রধান।

সোমবার ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় এই মন্তব্য করেন জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের (ইউএনএইচআরসি) হাই কমিশনার জাইদ আল-হুসেইন।

“আমার দপ্তর মনে করে সেখানে হয়ত গণহত্যা ও জাতিগত নিধনের মতো ঘটনা ঘটে থাকতে পারে,” ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে সাথে এক আলোচনায় বলেন জাইদ।

তিনি বলেন, “মিয়ানমার কঠিন সংকটের মধ্যে রয়েছে, যা এই অঞ্চলের নিরাপত্তার ওপর মারাত্মক প্রভাব বিস্তার করতে পারে। অনেক সময় এই কথাটা সত্য যে, আজকের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা, ভবিষ্যৎ সংঘাতের সূতিকাগার।”

তিনি মিয়ানমার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি জরুরি ভিত্তিতে রোহিঙ্গাদের মানবিক সংকট সমাধানে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন জাকার্তা থেকে রিনা খাদিজা।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।