নতুন দলসহ ভাসানচরে রোহিঙ্গা বাসিন্দার সংখ্যা পৌঁছাল প্রায় দশ হাজারে
2021.02.16
কক্সবাজার

কক্সবাজারের উখিয়ার বিভিন্ন শরণার্থী শিবির থেকে আরও তিন হাজার রোহিঙ্গাকে বঙ্গোপসাগরের দ্বীপ নোয়াখালীর ভাসানচরে নেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম থেকে নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সোমবার বিকেলে দুই হাজার পাঁচ জন এবং মঙ্গলবার বিকেলে এক হাজার নয়জন রোহিঙ্গা ভাসানচরে পৌঁছেন বলে বেনারকে জানান কক্সবাজারের অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. শামসু দ্দৌজা নয়ন।
এর আগে গত রবি ও সোমবার এসব রোহিঙ্গাদের কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে চট্টগ্রামে নেওয়া হয় বলেও জানান তিনি।
“ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের যাওয়ার আগ্রহ বাড়ছে, মানে যারা সেখানে গেছেন তাঁরা ভালো আছেন। ভিন্ন দেশের বিরাট সংখ্যক জনগোষ্ঠীর জন্য মানসম্মত থাকার ব্যবস্থা করে বাংলাদেশ পৃথিবীতে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে,” এ প্রসঙ্গে বেনারকে বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন।
“তবে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নেওয়া অস্থায়ীভাবে। তাঁদেরকে অবশ্যই নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরতে হবে,” বলেন তিনি।
জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর আপত্তির মুখে এর আগে তিন দফায় কক্সবাজারের বিভিন্ন শরণার্থী শিবির থেকে ছয় হাজার ৬৮৮ জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়।
এর মধ্যে গত বছর ৪ ডিসেম্বর প্রথম দফায় এক হাজার ৬৪২ জনকে, ২৯ ডিসেম্বর এক হাজার ৮০৪ জন এবং চলতি বছরের ২৯ ও ৩০ জানুয়ারি তৃতীয় দফার তিন হাজার ২৪২ জনকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়।
এ ছাড়া অবৈধভাবে সাগরপথে মালয়েশিয়া যেতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসা ৩০৬ জন রোহিঙ্গাকে গত মে মাসে ভাসানচরে নিয়ে যায় সরকার, তাঁরাও সেখানে রয়েছেন। সব মিলিয়ে বর্তমানে ভাসানচরে রোহিঙ্গা বাসিন্দার সংখ্যা প্রায় দশ হাজার।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা ও নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা।
এ ছাড়া নতুন-পুরাতন মিলে বর্তমানে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের পাহাড়ি এলাকায় শরণার্থী শিবিরগুলোতে ঘিঞ্জি পরিবেশে বসবাস করছেন। শরণার্থীদের চাপ কমাতে দুই বছর আগে অন্তত এক লাখ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেয় সরকার।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে তিন হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ১৩ হাজার একর আয়তনের ওই চরে এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে।
ভাসানচরের পুরো আবাসন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।
চতুর্থ দফায় রোহিঙ্গা স্থানান্তরের লক্ষ্যে গত শনি, রবি ও সোমবার একাধিক বাস ও ট্রাকে করে বিভিন্ন শিবির থেকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে প্রথমে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে অস্থায়ী ট্রানজিট ক্যাম্পে রাখা হয়।
ক্যাম্প থেকে রোববার প্রথম দফায় দুই হাজার পাঁচজন রোহিঙ্গাকে বাসে করে চট্টগ্রাম নেওয়া হয়। একইভাবে পরদিন সোমবার নেওয়া হয় এক হাজার নয়জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে।
উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে অস্থায়ী ট্রানজিট ক্যাম্পে কথা হয় রোহিঙ্গা মো. লিয়াকত আলীর সাথে। উখিয়ার বালুখালীর ১২ নম্বর ক্যাম্প ছেড়ে ভাসানচরে যাচ্ছেন তিনি।
লিয়াকত বেনারকে বলেন, “ভাসানচরের বিপক্ষে অনেকের কাছেই শুনেছি। কিন্তু আমার অনেক আত্মীয় বর্তমানে সেখানে আছেন। তারা বলেছে, ভাসানচর অনেক সুন্দর।”
“এখানে সব সময় মারামারি কাটাকাটি লেগে থাকে। ওখানে গেলে অনেক নিরাপদে থাকতে পারব। এই আশা নিয়েই যাচ্ছি,” যোগ করেন লিয়াকত।
উখিয়ার লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা শিবিরের মাঝি নুর মোহাম্মদ বেনারকে বলেন, “শুরুতে ভাসানচর নিয়ে অনেকের অনাগ্রহ ছিল। কিন্তু প্রথম দল যাওয়ার পরে অনেকের আগ্রহ বেড়েছে।”
“ভাসানচর থেকে অনেকে ছবি পাঠিয়েছে। দ্বীপটি দেখতে অনেক সুন্দর। অনেকে ভিডিও কল দিয়ে আত্মীয়–স্বজনদের সাথে কথা বলে। এসব দেখে বাকিরাও ওই দ্বীপে যেতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে,” বলেন এই রোহিঙ্গা নেতা।
নুর বলেন, “সবাই খুশি মনে, স্বেচ্ছায় সেখানে যাচ্ছে। তালিকায় নাম দেওয়ার পরেও কেউ না যেতে চাইলে তাকে পাঠানো হচ্ছে না।”
প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি।