টেকনাফে কথিত বন্দুকযুদ্ধে তিন রোহিঙ্গা ‘ডাকাত’ নিহত
2021.02.23
কক্সবাজার ও ঢাকা

কক্সবাজারের টেকনাফে শরণার্থী শিবির সংলগ্ন পাহাড়ি এলাকায় বন্দুকযুদ্ধে তিনজন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন, যাদের একজন শীর্ষ ডাকাত ও বাকিরা তাঁর সহযোগী বলে দাবি করেছে র্যাব।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় টেকনাফের নয়াপাড়া মৌচনি রোহিঙ্গা শিবিরের পশ্চিম পাহাড়ে এই বন্দুকযুদ্ধের খবর বেনারকে নিশ্চিত করেন কক্সবাজার র্যাব-১৫ অধিনায়ক উইং কমান্ডার আজিম আহমেদ। এ ঘটনায় র্যাবের এক সদস্য গুলিবিদ্ধ এবং একজন আহত হয়েছেন বলেও জানান তিনি।
নিহতরা হচ্ছেন; টেকনাফের নয়াপাড়ার সি ব্লকের বাসিন্দা মো. জকির আহমদ ওরফে জকির, মো. জহির মো. হামিদ ও শালবন রোহিঙ্গা শিবিরের মো. জহির।
র্যাব কর্মকর্তারা জানান, জকির একজন চিহ্নিত ডাকাত ও ইয়াবা গডফাদার। তাঁর নেতৃত্বাধীন ডাকাত দলটি টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কাছাকাছি পাহাড়ের ভেতরে আশ্রয়স্থল গড়ে তুলে দীর্ঘদিন ধরে শরণার্থী শিবিরগুলোতে নানা ধরনের অপরাধ চালিয়ে আসছে।
র্যাবের তথ্য অনুযায়ী, তাঁরা খুন, ধর্ষণ, ইয়াবা কারবার, মানবপাচার, অপহরণসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত।
তবে অভিবাসন ও শরণার্থী বিষয়ক বিশ্লেষক আসিফ মুনীরের মতে, “ক্রসফায়ার কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
“কেউ অপরাধ করলে তাঁকে দেশের প্রচলিত বিচারের আওতায় আনতে হবে,” জানিয়ে তিনি বেনারকে বলেন, “রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে অস্ত্র ঢুকছে। সেটা কেন নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী? এ বিষয়ে কঠোর নজরদারি থাকা দরকার।”
র্যাব-১৫ অধিনায়ক আজিম আহমেদ বলেন, “টেকনাফের নয়াপাড়া মৌচনি রোহিঙ্গা শিবিরের পশ্চিম পাহাড়ে শীর্ষ ডাকাত গ্রুপ জকির বাহিনী অস্ত্র-সশস্ত্রসহ অবস্থান করছে জানতে পেরে মঙ্গলবার বিকেলে র্যাবের একটি দল দ্রুত সেখানে অভিযান চালায়।”
“এ সময় র্যাব মাইকিং করে তাদের বারবার আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়। কিন্তু র্যাবকে লক্ষ্যে করে জকির বাহিনীর সদস্যরা গুলি চালায়। র্যাবও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায়,” বলেন তিনি।
“ঘন্টাখানেক গোলাগুলির পর ডাকাতেরা পাহাড়ি এলাকায় ঢুকে পড়ে। পরে ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালিয়ে জকিরসহ তিনজনের গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায়,” বলেন আজিম আহমেদ।
র্যাব জানায়, ঘটনাস্থল থেকে ২টি পিস্তল, ২টি বন্দুক, ৫টি ওয়ান শুটারগান ও ২৫ রাউন্ড বন্দুক ও পিস্তলের গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।
নিহত শীর্ষ ডাকাত জকিরসহ তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, ডাকাতি, হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। কেবল জকিরের বিরুদ্ধেই ২০টির বেশি মামলা রয়েছে বরে জানায় র্যাব।
টেকনাফের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শিবিরের নেতা মো. ইসলাম জানান, “জকিরসহ তিন ডাকাত নিহতের খবরে শিবিরে লোকজনের মাঝে স্বস্তি এসেছে। তবে ডাকাত দলের আরো লোকজন পালিয়ে যাওয়ায় শিবিরের বাসিন্দারা ভয়ভীতির মধ্যে রয়েছে।”
তিনি জানান, সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে ডাকাতিসহ অন্যান্য অপরাধ বেড়েছে।
আড়াই মাসে ১০ রোহিঙ্গা নিহত
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে মোট ২২২ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে জুলাই পর্যন্ত মারা গেছেন ২১০ জন।
গত ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভে বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ।
ওই ঘটনায় বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলি এবং টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাসসহ সাত পুলিশ সদস্যকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এসব পুলিশ সদস্য এখন হত্যা মামলায় বিচারের মুখোমুখি।
ওই ঘটনার পর ঢেলে সাজানো হয় কক্সবাজার জেলা পুলিশকে। এসপি থেকে শুরু করে প্রায় সব কর্মকর্তাকে সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর কয়েকমাস বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা বন্ধ থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে এমন ঘটনা আবারও বাড়তে থাকে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ তিনজনসহ গত ডিসেম্বর থেকে বন্দুকযুদ্ধে এ পর্যন্ত মোট দশজন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন।
গত দুই সপ্তাহ আগে বান্দরবানের ঘুমধুম সীমান্তে বিজিবির সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন দুই রোহিঙ্গা। তাঁদের কাছ থেকে এক লাখ পিস ইয়াবা ও দুটি দেশি বন্দুক উদ্ধারের কথা জানায় বিজিবি।
পরে ৯ ফেব্রুয়ারি টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে বিজিবির সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে একজন রোহিঙ্গা নিহত হন। সেসময় ৫২ হাজার ইয়াবাসহ একটি বন্দুক উদ্ধার করা হয়।
“যাদের ক্রসফায়ারে নিয়ে যাওয়া হয় বা অপরাধী হিসেবে আইডেন্টিফাই করা হয় তাদের বিষয়ে নিশ্চয়ই গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য থাকে। আর তথ্য থাকলে প্রমাণও নিশ্চয়ই থাকবে,” মন্তব্য করে আসিফ মুনীর বলেন, “তাহলে কেন তাদের প্রচলিত বিচারের আওতায় আনা হচ্ছে না?”