রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত স্থগিত
2020.02.26
ঢাকা

বঙ্গোপসাগরের দূরবর্তী দ্বীপ নোয়াখালীর ভাসানচরে এক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে এসেছে বাংলাদেশ সরকার। পরিকল্পনাটি আগে গৃহীত হলেও তা বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষ কয়েকদফা হোঁচট খেয়েছিল।
বেনারকে তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন একজন মন্ত্রী।
“আমরা সাময়িকভাবে ভাসানচরে এক লাখ রোহিঙ্গা স্থানান্তরের পরিকল্পনাটি স্থগিত করেছি। আমরা জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো থেকে সাড়া পাচ্ছিলাম না,” বুধবার বেনারকে বলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান।
এর আগে গত অক্টোবরে মন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ভাসানচরে প্রয়োজনীয় সব স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে এবং নভেম্বর থেকেই রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের কাজ শুরু হবে।
২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে সরকার কক্সবাজারের জনবহুল শরণার্থী শিবির থেকে এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়। জাতিসংঘের সহায়তা না থাকায় সে পরিকল্পনা পিছিয়ে যায়।
“এখন আমাদের মূল লক্ষ্য প্রত্যাবাসন, স্থানান্তর নয়,” এনামুর রহমান বলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন মঙ্গলবার পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সঙ্গে এক বৈঠকে বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের মিত্র চীন ও রাশিয়ার সুর এখন কিছুটা নরম। পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে এ খবর জানান ওই কমিটির চেয়ারম্যান ফারুক খান।
“আন্তর্জাতিক আদালতের অন্তর্বর্তীকালীন রায় ঘোষণা ও করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর চীন আগের মতো শক্ত অবস্থানে নেই। আশা করি এখন আমরা চীনকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে চাপ দিতে পারব,” ফারুক খান বেনারকে বলেন।
তিনি বলেন, “বৈশ্বিক পরিস্থিতির পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে, আমাদেরও কূটনৈতিক চালটা ভালোভাবে খেলতে হবে, যেন চীন ও রাশিয়া তাদের (মিয়ানমারকে) শতভাগ সমর্থন না দেয়।”
ফারুক খান আরও বলেন, মিয়ানমারের অবস্থানও আগের মতো শক্ত নয় বলে মনে করছেন তাঁরা।
“আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কমিটিকে বলেছেন, বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীনকে নিয়ে তৃতীয় ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে এবার চীন মধ্যস্থতা করবে। বৈঠকটি মার্চে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে,” বলেন ফারুক খান।
এর আগে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াংহি লি ভাসানচর পরিদর্শনে যান। বিশদ কারিগরি মূল্যায়নের আগে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর না করার অনুরোধ করেন তিনি।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার এক মুখপাত্র লুই ডোনোভান গত অক্টোবরে বেনারকে জানান, “ঘূর্ণিঝড় ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি ও পানির প্রাপ্যতার বিষয়গুলো ওই মূল্যায়নে খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছিল।”
এদিকে শরণার্থীদের ভাসানচরে স্থানান্তর স্থগিতের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন রোহিঙ্গারা।
কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরের এক নেতা মোহাম্মদ শফিক বুধবার বেনারকে বলেন, “আমরা এই শরণার্থী শিবিরে মানবেতর জীবনযাপন করছি, কিন্তু যে জায়গাটা কখনও চোখেই দেখিনি সেটা কেমন হবে বুঝতে পারছি না।”
“আমি মনে করি স্থানান্তর স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকার ঠিক কাজটাই করেছে। তাদের উচিত ইউএনএইচসিআর ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে আলোচনা করে ভাসানচরে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা,” বলেন শফিক।
তিনি বলেন, “ইউএনএইচসিআরের সম্মতি ছাড়া একজন রোহিঙ্গাও শিবির ছেড়ে যাবে না।”
“আমরা রোহিঙ্গারা আরাকানে ফিরতে চাই,” যোগ করেন তিনি।