রোহিঙ্গাদের জন্য সাহায্য মিলল ৮৫০ কোটি টাকার
2020.03.04
ঢাকা
বাংলাদেশে অবস্থানকারী রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং সংশ্লিষ্ট স্থানীয় মানুষদের জন্য চলতি বছরে প্রায় সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকার আবেদনের প্রেক্ষিতে ৮৫০ কোটি টাকা মানবিক সহয়তার ঘোষণা দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় কমিশন ও সুইডেন।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা ও সহযোগী এনজিওরা জেনেভায় চলতি বছরে সাড়ে আট লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং সাড়ে চার লাখ স্থানীয় জনগণের জন্য ৮৭৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা চায়।
রোহিঙ্গা সম্পর্কিত মানবিক সংকট মোকাবেলায় ২০২০ সালের যৌথ কর্ম পরিকল্পনা (জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান-জেআরপি) ঘোষণা করে বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও রাষ্ট্রের কাছে এই অর্থ চাওয়া হয়।
এর প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র ৫০০ কোটি (৫৯ মিলিয়ন ডলার), ইউরোপীয় কমিশন ২৯২ কোটি (৩১ মিলিয়ন ইউরো) ও সুইডেন ৫৮ কোটি টাকা (৬৫ মিলিয়ন সুইডিস ক্রোনা) দেবার ঘোষণা দিয়েছে।
বুধবার মার্কিন দূতাবাসের আমেরিকান সেন্টারে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে বাংলাদেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার তাঁর দেশের পক্ষে ৫০০ কোটি টাকা সহায়তার ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, “মিয়ানমার ও বাংলাদেশের এই সংকটে মানবিক সহায়তায় সাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র এখনো শীর্ষস্থানে রয়েছে। ২০১৭ সালের আগস্টে সহিংসতা শুরুর পর থেকে প্রতিবছরই আমরা এ অবস্থানে রয়েছি।”
“এই নতুন তহবিল ঘোষণার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকটে যুক্তরাষ্ট্রের মোট মানবিক সহায়তা দাঁড়াল প্রায় ৮২ কোটি ডলারে। এর মধ্যে প্রায় ৬৯ কোটি ৩০ লাখ ডলারই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন কর্মসূচির জন্য দেওয়া হয়েছে,” বলেন মিলার।
তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের তহবিল বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীদের জরুরি প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি চলমান সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত কক্সবাজারের স্থানীয় অধিবাসীদের প্রয়োজনেও ব্যবহৃত হবে।
“যুক্তরাষ্ট্র এই সংকটের বিশালমাত্রার প্রয়োজন একা পূরণ করতে পারবে না,” মন্তব্য করে রাষ্ট্রদূত মিলার অন্যান্য দেশকেও এ বিষয়ে অবদান রাখার আহ্বান জানান।
“এছাড়াও আমরা জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ এবং টেকসই প্রত্যাবর্তনের পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য মিয়ানমারের প্রতি অব্যাহতভাবে আহ্বান জানাচ্ছি,” বলেন মিলার।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিষ্ঠুর সামরিক অভিযান থেকে বাঁচতে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে দলে দলে রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে সীমান্তবর্তী কক্সবাজার জেলার টেকনাফ ও উখিয়ায় আশ্রয় নেয়। বিশাল এই জনগোষ্ঠীর ভরণপোষণের দায়িত্ব নেয় জাতিসংঘ ও দাতা সংস্থাগুলো।
তাঁদের খাওয়াসহ সকল সুযোগ নিশ্চিত করতে প্রতিবছর সাহায্যের আবেদন জানায় জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা এবং সহযোগী এনজিওরা।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের শুধু খাদ্য সহায়তার জন্য প্রতি মাসে ৯২ কোটি টাকার বেশি (১১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) প্রয়োজন হয় বলে বুধবার এক সাক্ষাৎকারে বেনারকে জানান বিশ্ব খাদ্য সংস্থার বাংলাদেশ প্রধান রিচার্ড রেগ্যান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রোহিঙ্গা ইউনিটের মহাপরিচালক দেলোয়ার হোসেন বেনারকে বলেন, “রোহিঙ্গা সংকটের শুরুর পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র লাখ লাখ ডলার মানবিক সহয়তা দিয়ে আসছে। আমরা তাদের এই সহয়তাকে স্বাগত জানাই।”
“তবে আমরা শুধু মানবিক সহয়তা আশা করি না। আমরা আরও সহয়তা কামনা করি,” মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমরা চাই রোহিঙ্গারা যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশ থেকে তাঁদের দেশে চলে যাক। আমরা তাঁদের প্রত্যাবাসনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহয়তা চাই।”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমান বেনারকে বলেন, “রোহিঙ্গাদের জন্য আমেরিকার সাহায্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বাংলাদেশ এতগুলো মানুষকে বসে খাওয়াতে পারবে না।”
“তবে, রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য চীনের পাশাপাশি আমেরিকাসহ পশ্চিমা বিশ্বের সাথে একযোগে কাজ করতে হবে বাংলাদেশকে। কারণ যত কিছুই বলা হোক না কেন পশ্চিমারা বিশ্বের নেতৃত্ব দেয়,” বলেন তিনি।
বুধবার জেনেভায় জেআরপি ঘোষণা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। রোহিঙ্গাদের জন্য নিরবচ্ছিন্ন আর্থিক সাহায্য প্রদানের জন্য আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাসমূহ ও দেশকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
তবে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে আরও জোর দেয়া জরুরি বলে মন্তব্য করেন প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত মিয়ানমার সরকারের সাথে কাজ করা যাতে (রোহিঙ্গাদের) স্বেচ্ছায়, নিরাপদে, মর্যাদাপূর্ণ এবং টেকসই প্রত্যাবাসনের পরিবেশ সৃষ্টি হয়।”
শাহরিয়ার আলম বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের একমাত্র টেকসই সমাধান হলো তাঁদের মূল আবাসস্থলে প্রত্যাবাসন। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এব্যাপারে দায়িত্ব রয়েছে।
রোহিঙ্গাদের কক্সবাজারের ঝুঁকিপূর্ণ শিবির থেকে বঙ্গোপসাগরের ভাসানচরে স্থানান্তরের জন্য জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে সরকার কাজ করে যাবে বলে জানান তিনি।
এছাড়া শরণার্থী শিবিরে মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক পুনরায় চালু করার বিষয়টি বাংলাদেশ সরকার বিবেচনা করবে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।