মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাবার পরিবেশ নেই: জাতিসংঘ কর্মকর্তা

বেনারনিউজ স্টাফ
2018.03.06
ওয়াশিংটন ডিসি
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন শেষে অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সহকারী মহাসচিব অ্যান্ড্রু গিলমোর। কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন শেষে অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সহকারী মহাসচিব অ্যান্ড্রু গিলমোর। ৪ মার্চ ২০১৮।
সৌজন্যে: জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়]

রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারে এখনো চলমান নিয়মতান্ত্রিক সহিংসতার মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচেছ না বলে মঙ্গলবার মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের এক শীর্ষ কর্মকর্তা।

সম্প্রতি কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে তিন দিনের পরিদর্শন শেষে এক বিবৃতিতে এই মন্তব্য করেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সহকারী মহাসচিব অ্যান্ড্রু গিলমোর।

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গত বছরের ব্যাপক "গণহত্যা ও গণধর্ষণ" জাতীয় নির্যাতন এখন “আতঙ্ক ছড়ানো অভিযান” ও “উপাসে মারার” নির্যাতনের রূপ নিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

গিলমোর তাঁর সফরে কক্সবাজারের কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে নতুন আসা রোহিঙ্গা ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকার নেন। রাখাইনে বর্তমানে চলমান নতুন ধরনের এই নির্যাতন রোহিঙ্গদের উচ্ছেদের জন্যই করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

“মিয়ানমার সরকার একদিকে বিশ্ববাসীকে বলছে যে তাঁরা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে প্রস্তুত, আবার অন্যদিকে তাঁদের বাহিনী অব্যাহতভাবে রোহিঙ্গাদের উচ্ছেদ করে বাংলাদেশ পাঠাচ্ছে,” বিবৃতিতে বলেন তিনি।

তিনি বলেন, “চলমান পরিস্থিতিতে নিরাপদ, সম্মানজনক ও স্থিতিশীল প্রত্যাবাসন অসম্ভব।”

“এই মুহূর্তে আলোচনার মূল বিষয় অবশ্যই হওয়া উচিত, রাখাইনে সহিংসতা বন্ধ, দায়ীদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা এবং প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারকে যেসব শর্ত মানতে হবে তা ঠিক করা,” বলেন গিলমোর।

তিনটি কারণে রোহিঙ্গাদের এখনই রাখাইনে ফেরত পাঠানো উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এগুলো হলো, প্রথমতো এখনো সেখানে হত্যা, ধর্ষণ ও অন্যান্য নির্যাতনের আশঙ্কা রয়েছে।

এছাড়া সেখানে খাদ্যসহ জীবন ধারণের প্রয়োজনীয় উৎস ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে, অথবা এখনো সেখানে থাকা রোহিঙ্গাদের ওসব জায়গায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

“মনে হচ্ছে তাঁদের (রোহিঙ্গাদের) জীবনযাত্রার ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাও ধ্বংস করে দেবার জন্য প্রায় পরিকল্পিত একটি কর্মসূচি চলছে,” বলেন গিলমোর।

তৃতীয় বিষয়টি হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বৈষ্যমের মূল কারণ; কয়েক দশকের রাষ্ট্রীয় নীতিমালা সংশোধনের কোনো সদিচ্ছা দেখা যাচ্ছে না, বিশেষত রোহিঙ্গাদের জাতিগত পরিচয় ও নাগরিকত্বের স্বীকৃতি বিষয়ে মিয়ানমার সরকারের অস্বীকৃতি।

প্রসঙ্গত, মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের দেশটির নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে না। তাঁরা সব সময়ই রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ‘জাতিগত নিধন’ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে।

“রোহিঙ্গাদের তাঁদের নিজের দেশে নিজের বাড়িতে প্রত্যাবাসন ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, একই সাথে তাঁদের বিরুদ্ধে ঘটা অমানবিক অপরাধের জন্য দায়ীদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করাও জরুরি,” বলেন গিলমোর।

তিনি বলেন, “তবে যতদিন শরণার্থীরা বাংলাদেশে আছে, আমরা বাংলাদেশ সরকারের কাছে আহ্বান জানাই যেন, সব শিশুর শিক্ষা ও জীবন-ধারণের সুযোগসহ তাঁরা এখানে সম্মানের সাথে থাকতে পারে।”

প্রসঙ্গত গত নভেম্বরে মিয়ানমার সরকারের সাথে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। ওই চুক্তি অনুযায়ী মিয়ানমারের সহিংসতায় ২০১৬ সালের অক্টোবরের পরে বাংলাদেশে আসা প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার ফিরিয়ে নেবার কথা রয়েছে।

এর ধারাবাহিকতায়, গত মাসে বাংলাদেশ তথ্য যাচাইর জন্য আট হাজার রোহিঙ্গার এক তালিকা মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তর করেছে।

গিলমোর লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দেবার জন্য বাংলাদেশের প্রসংশা করেন। একই সাথে দীর্ঘ মেয়াদে শরণার্থী রোহিঙ্গা ও আশ্রয়দাতা বাংলাদেশকে সহায়তা করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।

মানবসৃষ্ট দুর্যোগ থেকে বেঁচে আসা রোহিঙ্গাদের আসন্ন বর্ষা মৌসুমে প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হবার আশঙ্কা রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।