দু’পক্ষের গোলাগুলিতে এক রোহিঙ্গা নিহত

জেসমিন পাপড়ি ও আবদুর রহমান
2018.03.08
ঢাকা ও কক্সবাজার
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তে টহল দিচ্ছে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড সদস্যরা। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তে টহল দিচ্ছে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড সদস্যরা। ৭ মার্চ ২০১৮।
আবদুর রহমান/বেনারনিউজ

কক্সবাজারের একটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুপক্ষের গোলাগুলিতে একজন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। টেকনাফের নয়াপাড়া ক্যাম্পে বৃহস্পতিবার ভোর ৬টার দিকে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ‘দুই ডাকাত দলের’ মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে বলে বেনারকে জানান টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রনজিত কুমার বড়ুয়া।

এদিকে পতাকা বৈঠকের পরেও সীমান্তে বর্ডার গার্ড পুলিশ—বিজিপির টহল অব্যাহত রেখেছে মিয়ানমার। এমন অবস্থায় সীমান্তে পাহারা জোরদার করেছে বাংলাদেশও।

তবে পতাকা বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সীমান্তে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে নাফ নদীতে যৌথ টহল শুরু করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)। যদিও তাতে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্ধ হয়নি।

দুই ডাকাত সদস্য আটক

বৃহস্পতিবার নিহত রোহিঙ্গা হোসেন আলী (৩২) ওরফে বাইল্লা ক্যাম্পের বাসিন্দা প্রয়াত বাছা আলীর ছেলে।

ওসি রণজিৎ জানান, নিহত ব্যক্তি দুর্ধর্ষ রোহিঙ্গা ডাকাত সর্দার আবদুল হাকিমের প্রধান সহযোগী। এ ঘটনায় ডাকাত দলের দুই সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ। এরা হলেন; আবদুর রাজ্জাক (২৬) ও আবদুস সালাম (৩২)। তারা দুজন আপন ভাই।

তবে নয়াপাড়া আনসার ক্যাম্প থেকে অস্ত্র লুট মামলার অন্যতম আসামি নুরুল আলম ডাকাত গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পালিয়ে যায়।

নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার মর্গে পাঠানো হয়েছে। আটক ব্যক্তিদের নিয়ে পাহাড়ে অভিযান পরিচালনা করা হবে বলেও জানান ওসি।

রোহিঙ্গা নেতারা জানান, বহুল আলোচিত আসামি নূরুল আলম কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হয়ে এসে রোহিঙ্গাদের নিয়ে একটি ডাকাতদল সংগঠিত করছিল।

উখিয়া থানার ওসি আবুল খায়ের বেনারকে বলেন, গত এক মাসে বিভিন্ন সময়ে রোহিঙ্গা শিবিরে ছুরির আঘাত ও গুলিতে অন্তত পাঁচজন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। এসব ঘটনায় বেশ কয়েকজন অপরাধীও গ্রেপ্তার করা করা হয়। বাকিদের গ্রেপ্তারের অভিযান চলছে।

যৌথ টহল শুরু

রোহিঙ্গা নিয়ে সীমান্তে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়ানোর লক্ষ্যে সোমবার সকাল ১০টার দিকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার জলসীমানার মাঝামাঝি নাফ নদীতে বিজিবি ও বিজিপি’র যৌথ টহল শুরু হয়েছে বলে বেনারকে জানান টেকনাফ বিজিবির ২ নম্বর ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আসাদুজ্জামান চৌধুরী। স্পিডবোটে ওই টহলে বিজিবির ১৩ ও বিজিপির ১৬ জন সদস্য অংশ নেন।

“দু’দেশের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী টেকনাফের হ্নীলা থেকে শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তের নাফ নদীর প্রায় ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত এ যৌথ টহল শুরু করা হয়। তবে নিয়মিত নয়, কয়েক দিন পর পর এ যৌথ টহল চলবে। শুক্রবার পরবর্তী যৌথ টহল দেওয়ার কথা রয়েছে।” বলেন তিনি।

এদিকে দু’দেশের মধ্যকার চলমান এই সীমান্ত পরিস্থিতির মধ্যেই বুধবার রাতে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেনকে প্রত্যাহার করে সেনাবাহিনীতে ফিরিয়ে নিয়েছে সরকার। এখন পর্যন্ত ওই পদে কাউকে নিয়োগ করা হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে তাঁকে প্রত্যাহারের কারণ জানানো হয়নি।

আবদুর রহমান/বেনারনিউজ
আবদুর রহমান/বেনারনিউজ

 

এখনো আসছে রোহিঙ্গারা

গত তিন দিনে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত দিয়েই প্রায় ছয় শ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে বলে বেনারকে জানান হারিয়াখাল ত্রাণকেন্দ্রে দায়িত্বরত জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি ও টেকনাফ উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন।

“এদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। পরে তাদের মানবিক সহায়তা দিয়ে টেকনাফের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শিবিরে পাঠানো হয়েছে,” বলেন দেলোয়ার।

অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা নুর নাহার বেনারকে বলেন, “তারা রোহিঙ্গাদের ঘর থেকে বের হতে দিচ্ছে না। বের হলেই মেরে ফেলছে। এ অবস্থায় খাবার ও চিকিৎসা সংকটে পড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছি।”

মহড়া অব্যাহত

এদিকে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার এক সপ্তাহ পরেও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তের ওপারে এখনো মহড়া অব্যাহত রেখেছে মিয়ানমার।

তুমব্রু শূন্য রেখায় অবস্থান করা রোহিঙ্গা দিল মোহাম্মদ বেনারকে বলেন, “নো-ম্যান্স ল্যান্ডে আশ্রয় নেওয়া ছয় হাজার রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে ঠেলে দিতে কয়েক দিন ধরে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী।”

নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে জাহাঙ্গীর আজিজ বেনারকে বলেন, “শূন্যরেখার ওপারে সব সময় বিজিপি, সেনা, নাটালা বাহিনীসহ রাখাইন যুবকেরা ঘোরাঘুরি করছে। তাদের উপস্থিতির কারণে এপারের গ্রামগুলোর লোকজনকেও আতঙ্কে থাকতে হয়।”

“তারা সেখান থেকে দুরবিন দিয়ে এপারের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। এ ছাড়া শ্রমিকদের দিয়ে সীমান্তের ওপারে পাহাড়ের ওপর নতুন করে বাংকারও খনন করা হচ্ছে। পাশাপাশি গাছের ওপর বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা,” বলেন তিনি।

তবে কক্সবাজারের ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খান বেনারকে বলেন, “এটা তাদের রুটিন ওয়ার্ক। নতুন করে বাংকার খনন তাদের নিরাপত্তার জন্য করতে পারে। এ ব্যাপারে শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। সীমান্ত পরিস্থিতি আগের তুলনায় ভালো।”

“শুক্রবারের পতাকা বৈঠকে শূন্য রেখায় সেনা টহল সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হওয়ার পাঁচ দিনেও সেনা টহল অব্যাহত রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আবারও পতাকা বৈঠকের প্রস্তাব দেওয়া হবে। তবে বিজিবি যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে এবং বিজিবিও টহল জোরদার করেছে,” বলেন তিনি।

একে-৪৭ রাইফেল উদ্ধার

বান্দরবানের রুমার গালেংগ্যা ইউনিয়নের জয়তুনপাড়ার দুর্গম পাহাড় থেকে একটি একে-৪৭ রাইফেল উদ্ধার করেছে বিজিবি। এর আগে সেখানে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে প্রায় ১০ মিনিট গোলাগুলি হয় বিজিবির। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।

বিজিবির বলীপাড়া ৩৩ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল হাবিবুল হাসান স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, তাঁরা কয়েক দিন ধরেই শুনছিলেন মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী আরাকান লিবারেশন পার্টির (এএলপি) দলছুট পাঁচ-ছয়জন সন্ত্রাসী থানচি ও রুমা উপজেলার দুর্গম বিভিন্ন পাড়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। থানচির একটি পাড়ায় গত বুধবার তাদের অবস্থান করার তথ্য ছিল। তবে সেখানে অভিযান চালিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।