বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে স্থলমাইন বিস্ফোরণ: নিহত ১
2018.03.15
ঢাকা ও কক্সবাজার

রাখাইন থেকে প্রাণভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের পুনঃপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে পুঁতে রাখা স্থলমাইন বিস্ফোরণে এবার প্রাণ হারালেন বাংলাদেশি এক আদিবাসী বৌদ্ধ।
নিহত ব্যক্তির নাম পাওয়াই ম্রো (৪৫) বলে জানিয়েছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কর্মকর্তারা।
তিনি বৃহস্পতিবার প্রথম প্রহরের দিকে বান্দরবান জেলার আলীকদম উপজেলায় কুরুকপাতা ইউনিয়নের রালাইপাড়া সীমান্ত এলাকা দিয়ে তাঁর স্ত্রী চংরে ম্রো (৩৪) এবং চার সন্তান নিয়ে মিয়ানমার প্রবেশ করছিলেন।
বিস্ফোরণে চংরে ম্রো (৩৪) ও তাঁদের সন্তান সিতু ম্রো (৯), ইয়া ইয়ং ম্রো (৫), তনকো ম্রো (৩) ও তংরুং ম্রো (২) আহত হয়েছে। বিজিবি তাদের চিকিৎসা দিচ্ছে বলে বেনারকে জানিয়েছেন বান্দরবান বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল ইকবাল হোসেন।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে তিনি জানান, তাঁরা গত বুধবার গভীর রাতে (বৃহস্পতিবার প্রথম প্রহরের দিকে) সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের সীমান্ত পেরিয়ে মিয়ানমার চলে যাচ্ছিলেন।
এই সময় সীমান্তে পুঁতে রাখা স্থলমাইন বিস্ফোরণে পাওয়াই ম্রো নিহত হন এবং আহত হন তার পরিবারের সদস্যরা। ঘন জঙ্গল থেকে নিহত পাওয়াই ম্রোর লাশ উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
সেক্টর কমান্ডার কর্নেল ইকবাল আরও জানান, আহতদের উদ্ধার করে কুরুকপাতা সেনাবাহিনী ক্যাম্পে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম সরওয়ার কামাল বেনারকে বলেন, মিয়ানমার সেনারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে সীমান্তে অনেক স্থানে মাইন পুতে রেখেছে। তাই প্রায়ই সীমান্তে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে থাকে।
মিয়ানমারে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত অনুপ কুমার চাকমা বেনারকে বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে একটি মানবপাচারকারী চক্র গড়ে উঠেছে। তারা বাংলাদেশের সংখ্যালঘু বৌদ্ধদের মিয়ানমারে যেতে উদ্বুদ্ধ করছে।
“বাংলাদেশে বৌদ্ধদের নির্যাতন করা হচ্ছে না। তাঁরা এখানে ভালো আছে। কিন্তু তাঁদের মিয়ানমার চলে যাওয়া উদ্বেগের বিষয়। দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে আরও সমস্যা সৃষ্টি করবে,” বলেন অনুপ চাকমা।
তিনি বলেন, দুই দেশের উচিত যৌথ কার্যক্রমের মাধ্যমে এই মানব পাচারকারী চক্রকে ধ্বংস করা।
মিয়ানমারে বাংলাদেশ দূতাবাসের আরেক সাবেক কূটনীতিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেনারকে বলেন, মিয়ানমার সরকার বাংলাদেশের বৌদ্ধদের রাখাইনে প্রবেশে উদ্বুদ্ধ করছে।
বাংলাদেশ থেকে রাখাইনে পালিয়ে যাওয়া বৌদ্ধদের রোহিঙ্গাদের ফেলে আসা বসতবাড়িতে বসিয়ে দেবে। ফলে রোহিঙ্গাদের তাদের বসতবাড়িতে ফিরে যাওয়া আরও জটিল আকার ধারণ করবে।
তা ছাড়া, বিষয়টি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তির ব্যাপার।
মাইনে নিহত ১২, আহত ২৫
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে স্থলমাইন বিস্ফোরণে পাওয়াই ম্রোসহ এ পর্যন্ত ১২ জন প্রাণ হারিয়েছেন বলে বেনারকে জানিয়েছেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন। আরও কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়েছে। নিহতদের পাঁচজন বাংলাদেশি ও বাকিরা রোহিঙ্গা।
“আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, সীমান্তে স্থলমাইন পোঁতা নিষিদ্ধ। তারপরও মিয়ানমার তা লঙ্ঘন করে স্থলমাইন পুঁতে রাখছে। ফলে, রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয়রাও স্থলমাইনের ফাঁদে পড়ে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হারাচ্ছেন,” বেনারকে বলেন আসলাম হোসেন।
নাইক্ষ্যংছড়িতে বসবাসকারী রোহিঙ্গা দিল মোহাম্মদ বলেন স্থলমাইন বিস্ফোরণের সর্বশেষ ঘটনা ঘটেছে ৫ ফেব্রুয়ারি।
এর আগে ঘটেছিল গেলো বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর। ওই দিন বিকেলে নাইক্ষ্যংছড়ির চাকঢালা সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকালে ওপারে এক রোহিঙ্গা যুবক প্রাণ হারান।
বাগেরহাটে চার রোহিঙ্গা আটক
জেলা পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার শহরের রাহাতের মোড় এলাকা থেকে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার জাগিরাঘোনা গ্রামের তোফায়েল আহমেদের ছেলে মো. ইলিয়াস নামে এক বাংলাদেশিসহ চার রোহিঙ্গাকে আটক করেছে।
চার রোহিঙ্গার মধ্যে তিনজন নারী। তারা হলেন: মিনারা, বেবি, সোনা আলী (৬৫) ও তাঁর মেয়ে রাশিদা।
আটক রোহিঙ্গাদের টেকনাফে শিবিরে ফেরত পাঠাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে সাংবাদিকদের জানান বাগেরহাট সদর থানার ওসি মাহাতাব উদ্দিন।
এদিকে বিয়ে করার প্রলোভন দেখিয়ে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প থেকে এক রোহিঙ্গা নারীকে পাচারের সময় আবদুল হাকিম (৪০) নামে এক বাংলাদেশিকে আটক করেছে উখিয়া পুলিশ।
আবদুল হাকিম রামু উপজেলার পূর্ব ধেছুয়া গ্রামের নুর আহমদের ছেলে। তাঁকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে চার মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে উখিয়া পুলিশ।
যৌথ টহল
নাফ নদীর সীমান্তে যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়ানোর লক্ষ্যে মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে বিজিবি ও বিজিপি যৌথভাবে টহল দিয়েছে বলে বেনারকে জানান টেকনাফ বিজিবির ২ নম্বর ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আসাদুজ্জামান চৌধুরী।
তিনি বলেন, “দু’দেশের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী টেকনাফের হ্নীলা থেকে শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তের নাফ নদীর প্রায় ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত এ যৌথ টহল শুরু করা হয়।”
স্পিডবোটে ওই টহলে বিজিবির ১৩ ও বিজিপির ১৬ জন সদস্য অংশ নেন বলে তিনি জানান।
এর আগে গত ৫ মার্চ যৌথ টহল দেওয়া হয় জানিয়ে তিনি বলেন, “কয়েক দিন পর পর এ যৌথ টহল চলবে। শুক্রবার পরবর্তী যৌথ টহল দেওয়ার কথা রয়েছে।”