রোহিঙ্গাদের জন্য প্রায় একশো কোটি ডলার চাইল জাতিসংঘ
2018.03.16
ওয়াশিংটন ডিসি

বাংলাদেশে বসবাসকারী প্রায় নয় লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে সহায়তার জন্য শুক্রবার নতুন করে প্রায় একশো কোটি ডলারের সহায়তা চেয়েছে জাতিসংঘ ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো।
জাতিসংঘের মতে, চলতি বছর রোহিঙ্গা শরণার্থী ও তাঁদের আশ্রয়দানকারীদের জরুরি সহায়তার জন্য এই ৯৫১ মিলিয়ন ডলার তহবিল গঠনের চেষ্টা করা হচ্ছে।
প্রস্তাবিত এই সহায়তার মধ্যে রয়েছে খাদ্য, সুপেয় পানি, পয়োনিষ্কাষণ, শিক্ষাকেন্দ্র নির্মাণ ও আসন্ন বর্ষা মৌসুম মোকাবেলা।
“রোহিঙ্গাদের দুর্দশা অনেক কঠিন, অসহনীয় এবং অব্যাহত রয়েছে। যার ফলে পৃথিবীর সবচে দ্রুত বর্ধনশীল এই শরণার্থী সংকট মোকাবেলা করছে বাংলাদেশ,” শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টনিও গুতেরেস।
“রোহিঙ্গারা একটি গোষ্ঠী হিসেবে এক জায়গায় আটক অবস্থায় আছে। অনেক শরণার্থী শারীরিক ও মানসিকভাবে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার শিকার, নিজের দেশ ও বাস্তুভিটা থেকে বিতাড়িত, যা পরিস্কারভাবে একটি জাতি নির্মূল কর্মসূচির উদাহরণ,” বলেন তিনি।
এই অর্থ সহায়তা গত অক্টোবরে চাওয়া ৪৪৩ মিলিয়ন ডলারের অতিরিক্ত।
জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা ও এনজিও মিলে প্রায় শ' খানেক প্রতিষ্ঠানের সাথে এই আর্থিক সহায়তার আবেদন জানাতে শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এর হাই কমিশনার ফিলিপো গ্রান্ডি, ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন এর প্রধন এবং বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি শুক্রবার জেনেভায় এক বৈঠকে মিলিত হন।
“বাংলাদেশের জনগণ যারা মানবিকতা দেখিয়ে দরোজা খুলে দিয়েছে এবং পৃথিবীর সবচে বিপদাপন্ন দেশহীন শরণার্থী, যাদের মধ্যে সাম্প্রতিক সংকট শুরু হবার আগে আসা লোকজনও রয়েছেন, তাঁদের সবার জরুরি প্রয়োজন বিষয়ে আমরা এখানে কথা বলছি,” শুক্রবার বলেন গ্রান্ডি, এক বিবৃতিতে জানায় জানায় ইউএনএইচসিআর।
জাতিসংঘের এই তহবিল সংগ্রহ চেষ্টার বিষয়টি অবগত নন বলে মন্তব্য করলেও এই প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মহসিন।
তিনি বেনারকে বলেন, “আমরা তাঁদের এই তহবিল সংগ্রহ চেষ্টাকে স্বাগত জানাই, কারণ আমাদের জন্য রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এক বিশাল বোঝা।”
“তবে আমরা ঠিক নিশ্চিত না, কতদিন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের ভরণ পোষণ করবে,” যোগ করেন তিনি।
যেসব খাতের জন্য তহবিল
আবেদিত নতুন তহবিলের শতকরা ৫৪ ভাগ খাদ্য, বাসস্থান, পানি, পয়োনিষ্কাষণ ও অন্যন্যা প্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় করা হবে বলে জানায় জাতিসংঘ।
তাদের হিসাবে শরণার্থীদের জন্য দৈনিক এক কোটি ৬০ লাখ লিটার খাবার পানি ও প্রতি মাসে ১২,২০০ মেট্রিকটন খাদ্য সামগ্রী প্রয়োজন।
এই সহায়তা থেকে প্রায় ২০০ স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও ৬ লাখ ১৪ হাজার রোহিঙ্গা শিশুর জন্য ৫ হাজার শিক্ষাকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে।
এছাড়া প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা শিশুর রাখাইনের সহিংসতার ভীতি কাটিয়ে ওঠার জন্য ট্রমা সেন্টারও খোলা হবে এই সহায়তা থেকে।
জাতিসংঘের মতে, বর্তমান জরুরি সহায়তার প্রয়োজনীয়তা এবং রোহিঙ্গাদের চলমান দুর্দশা আরো ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে।
“দেড় লাখের বেশি রোহিঙ্গা ভূমিধস ও বন্যার হুমকিতে রয়েছে, যা বর্তমান পরিস্থিতির ওপর একটি দুর্যোগ হিসেবে দেখা দিতে পারে,” জানায় জাতিসংঘ।
“এইসব সংকটের সমাধান রয়েছে মিয়ানমারে, সেক্ষেত্রে সকল শরণার্থীর প্রত্যাবাসনের যুক্তি প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। তবে আজকে আমরা এই মুহূর্তের জরুরি চাহিদার জন্য আবেদন জানাচ্ছি, যার পরিমাণও বিশাল,” বলেন ইউএনএইচসিআর প্রধান গ্রান্ডি।
তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন ঢাকা থেকে কামরান রেজা চৌধুরী।