প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গাদের দেখতে আসছেন মিয়ানমারের মন্ত্রী
2018.04.02
ঢাকা
বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গাদের দেখতে আগামী সপ্তায় প্রথমবারের মতো মিয়ানমারের কোনো মন্ত্রী আসছেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
এদিকে আসন্ন বর্ষা মৌসুমের কথা বিবেচনা করে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান থেকে রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া ডেস্কের মহাপরিচালক তারিক মোহাম্মদ সোমবার বেনারকে বলেন, “মিয়ানমারের সমাজকল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী উইন মিয়াট আই আগামী ১১ এপ্রিল তিন দিনের আনুষ্ঠানিক সফরে বাংলাদেশে আসছেন।”
আই মিয়ানমারের মন্ত্রীদের মধ্যে প্রথম যিনি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেখতে আসছেন, যদিও রোহিঙ্গারা দেশটির সেনাবাহিনীর জাতিগত নিধন অভিযানের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আসার পর আরো দুজন মন্ত্রী বাংলাদেশে এসেছিলেন।
গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) আক্রমণের জবাবে দেশটির সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নিধনের ওই অভিযান শুরু করে।
“মাননীয় মন্ত্রী আই এর আগামী ১২ এপ্রিল কক্সবাজার সফরের কথা রয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে তাঁর আসন্ন সফরকে ঘিরে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে,” তারেক মোহাম্মদ বলেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন মন্ত্রী আই পররাষ্ট্র মন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গেও দেখা করবেন।
এর আগে মিয়ামারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চির পক্ষে মিয়ানমারের ইউনিয়ন মিনিস্টার কিয়াও টিন্ট সোয়ে গত বছরের অক্টোবরে বাংলাদেশ সফর করেন।
ওই সফরে তিনি ২০১৬ সালের অক্টোবরের পর যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছেন তাঁদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
এছাড়া মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ সফরে আসেন। এ সময় বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আট হাজার ৩২ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীর একটি তালিকা যাচাই-বাছাই এর জন্য মিয়ানমারের মন্ত্রীকে হস্তান্তর করেন। প্রত্যাবাসনের প্রাথমিক শর্ত হিসেবে তিনি এ তালিকা দেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসেবে এখন ১১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে বসবাস করছেন। তবে রোহিঙ্গা শরণার্থী অনুপ্রবেশ এখনো থামেনি। যদিও, এখন কমসংখ্যক শরণার্থী বাংলাদেশে আসছেন।
গত বছরের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী যে ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’ চালায় তার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে সাত লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী।
থাই উপকূলে মালয়েশিয়াগামী রোহিঙ্গা নৌকা
রাখাইন থেকে ৫৬ জন রোহিঙ্গাকে নিয়ে একটি নৌকা সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া যাবার সময় খারাপ আবহাওয়ার কারণে রোববার ভোররাতে আন্দামান সাগরের কাছে থাই উপকূলে এসে ভিড়েছিল বলে জানিয়েছেন থাই কর্মকর্তারা।
তবে রোহিঙ্গাদের থাইল্যান্ডে আশ্রয় দেবার কোনো সুযোগ না থাকায় দলটিকে প্রথামিক মানবিক সাহায্য দিয়ে রোববারই সমুদ্রে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে বেনারকে জানিয়েছেন থাই পুলিশের কর্নেল এমএল পাতানাচাক চাকরাভান।
এদিকে থাইল্যান্ড ত্যাগ করার পর রোহিঙ্গা নৌকাটি মালয়েশিয়ার সমুদ্রসীমায় প্রবেশ করেছে কি না তা খুঁজে দেখার জন্য বাহিনী পাঠানো হয়েছে বলে সোমবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন দেশটির নৌ বাহিনীর উত্তরাঞ্চলের পরিচালক ফার্স্ট অ্যাডমিরাল হাজি রোজালি মোহাম্মদ।
“তবে এখন পর্যন্ত ওই নৌকাটির প্রবেশের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি,” বলেন হাজি রোজালি।
বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে কোনো নৌকা সমুদ্রপথে যাবার ঘটনা ঘটেনি বলে বেনারকে নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরোজুল হক টুটুল।
ঝুঁকিপূর্ণ স্থান থেকে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর
আসন্ন বর্ষা মৌসুমে বন্যা ও ভূমি ধসের আশংকায় থাকা রোহিঙ্গাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে বেনারকে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের রোহিঙ্গা সেলের যুগ্ম সচিব হাবিবুল কবির চৌধুরী।
“জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের মূল্যায়ন অনুযায়ী উখিয়ার পাহাড়ে অবস্থানরত ২৫ হাজার শরণার্থী ভূমি ধস, বন্যা ও সাইক্লোনে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে বলে চিহ্নিত করা হয়,” বেনারকে বলেন হাবিবুল কবির।
তিনি বলেন কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের কাছে নতুন করে যে ১২৩ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে সেখানে ১১ হাজার ব্যক্তিকে স্থানান্তর করা হয়েছে।
“চলতি সপ্তাহে ঝুঁকিতে থাকা আরও অতিরিক্ত ছয় হাজার মানুষকে নতুন জমিতে স্থানান্তর করা হবে। ভূমিধস, বন্যা ও সাইক্লোন থেকে সুরক্ষার জন্যই এ ব্যবস্থা”, বলেন হাবিবুল কবির।
তিনি আরও জানান এপ্রিলের মাঝামাঝি নাগাদ ঝুঁকিতে থাকা ২৫ হাজার ব্যক্তিকে স্থানান্তর করা হবে।
এছাড়া যারা অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকিতে আছে তাদের ধীরে ধীরে স্থানান্তর করা হবে বলেও জানান তিনি।
বন্য হাতির আক্রমণ রোধের চেষ্টা
বাংলাদেশর পাহাড়ি অঞ্চলে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের বন্য হাতির আক্রমণ থেকে সুরক্ষা দেবার জন্য ইউএনএইচসিআর ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার (আইইউসিএন) এর সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে বলে সোমবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে।
গত বছরের আগস্ট থেকে বাংলাদেশে দলে দলে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রবেশ শুরু হওয়ার পর কুতুপালং ও বালুখালি শরণার্থী শিবিরে হাতির আক্রমণে কমপক্ষে ১০ জন রোহিঙ্গা নিহত হন।
বর্তমানে রোহিঙ্গা শিবিরের স্থানগুলো আগে ছিল বন্য হাতিদের অভয়ারণ্য। এছাড়া এই অঞ্চলটি মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে হাতি আসার অন্যতম প্রধান পথ বলেও বিবৃতিতে জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, এশিয়ান এলিফ্যান্ট বাংলাদেশে অত্যন্ত বিপন্ন প্রজাতি। বাংলাদেশে এই প্রজাতির মাত্র ২৬৮ টি হাতি আছে বলে ধারণা করা হয়।
পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এরই মধ্যে ২৫টি এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে।
হাতি যাওয়ার পথ ও অলিগলিগুলো পরিষ্কারভাবে চিহ্নিত করা হবে যেন মানুষ বুঝতে পারে কোন পথটি এড়িয়ে চলতে হবে।
ঝুঁকি এড়াতে প্রচার কর্মসূচিও চালানো হবে। এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমের প্রশিক্ষণ ও পর্যবেক্ষণ টাওয়ার তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।
তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন থাইল্যান্ডের পাতানি প্রদেশ থেকে মরিয়ম আহমাদ ও মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর থেকে হাতা ওয়াহারি।