স্কুল থেকে রোহিঙ্গা শিক্ষার্থীদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ
2019.04.02
ঢাকা ও কক্সবাজার

বাংলাদেশে বসবাস করা রোহিঙ্গা শিশুদের মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
মঙ্গলবার ব্যাংকক থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, এ বছর জানুয়ারি মাস থেকে কয়েক শত রোহিঙ্গা শিক্ষার্থীকে মাধ্যমিক স্কুল থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।
এদিকে রোহিঙ্গা শিশুদের বাংলাদেশি স্কুলে ভর্তির কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে আগে কেউ কেউ ভর্তি হলেও যাচাইর পর তাঁদেরকে স্কুল থেকে বের করে দেয়া হচ্ছে।
তবে মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, রোহিঙ্গাদের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করা ‘অপরাধের শামিল’। তারা রোহিঙ্গাদের শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের শিশু অধিকার বিষয়ক জেষ্ঠ্য গবেষক বিল ভ্যান এসভেল্দ ওই বিবৃতিতে জানান, “শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করার পরিবর্তে রোহিঙ্গাদের খুঁজে খুঁজে স্কুল থেকে বের করে দেয়ার যে নীতি বাংলাদেশ সরকার গ্রহণ করেছে সেটি ভুল, মর্মান্তিক, আইন বিরোধী।”
তিনি বলেন, “শিক্ষা মৌলিক মানবাধিকারের একটি। শিক্ষা গ্রহণের জন্য যারা মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভর্তি হয়েছে, তাদের স্কুল থেকে বের করে না দিয়ে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ দেওয়া উচিত।”
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, গতবছর নভেম্বরে রোহিঙ্গা শিশুদের স্কুলে ভর্তির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রীর অফিস। এরপর কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তদন্ত শুরু করে।
২৩ জানুয়ারি উখিয়া ও টেকনাফের সাত শিক্ষা কর্মকর্তাকে রোহিঙ্গা শিশুদের ভর্তি না করাতে নির্দেশ জারি করা হয়।
এ বিষয়ে কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম বেনারকে বলেন, “রোহিঙ্গা শিশুদের বাংলাদেশি বিদ্যালয়ে ভর্তি করানোর জন্য অনেক সংস্থা বলতে পারে, এটা তাদের দাবি। কিন্তু সরকারিভাবে এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত হয়নি। হলে সেটা পরে দেখা যাবে।”
কক্সবাজার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সালেহ উদ্দিন চৌধুরী বেনারকে বলেন, “কোনো রোহিঙ্গা শিশুকে আমাদের স্কুলে ভর্তির অনুমতি নেই। এছাড়া ভর্তি হতে হলে পিএসসি ও জন্মনিবন্ধন সনদ এবং বাবা মায়ের জাতীয়তা সনদ অবশ্যই লাগে।”
তিনি বলেন, “অতীতে ভুয়া সনদ দিয়ে অনেক ভর্তির ঘটনা ঘটেছে। তখন রোহিঙ্গারা স্থানীয়দের সঙ্গে মিশে ছিল। এখন তো তারা ক্যাম্পের বাইরে আসতে পারে না। তাই এমন পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা শিশুদের স্কুলে ভর্তি করানোর কোনো সুযোগ নেই। আর এ ধরনের কোনো খবর পেলেই আমরা সাথে সাথে ব্যবস্থা নেব। এবং ওই ভর্তি বাতিল করা হবে।”
ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. খাইরুল বশর বেনারকে বলেন, “২০১২ সালে ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ভুয়া জন্ম নিবন্ধন সনদ নিয়ে সাত শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিল। চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে এক ইউপি মেম্বার টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশি জন্ম নিবন্ধন সনদ দিয়েছিল। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে আমরা ওই সাত শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করেছি।”
তবে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খানের মতে, “কোনো শিশুকে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করা অপরাধের শামিল। সে রোহিঙ্গা শরণার্থী হোক, আর বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিকই হোক।”
“সুতরাং, রোহিঙ্গাদের স্কুল থেকে বের করে দেয়ার বাংলাদেশ সরকারের যে নীতি, সেটি নিন্দার যোগ্য। আমরা এই নীতির তীব্র বিরোধিতা করি,” যোগ করেন তিনি।
নূর খানের মতে, “শুধু শরণার্থী হওয়ার কারণে অশিক্ষিত থেকে যাবে তা গ্রহণযোগ্য নয়। তাছাড়া, তারা যেখানেই থাকুক না কেন, শিক্ষা না থাকলে তারা সমাজের বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের শিক্ষার অধিকার কেড়ে নিয়ে তাদের হতদরিদ্রে পরিণত করেছে। আমরা সেটা করতে পারি না।”
এদিকে তিন চার বছর আগে হ্নীলা, লেদা, জাদীমুরা এলাকার কিছু কিছু স্কুলে কিছু রোহিঙ্গা শিশু ভর্তি হলেও পরে তাদের ভর্তি বাতিল করা হয় বলে বেনারকে জানান উখিয়ার নয়াপাড়া রেজিস্টার্ড ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা আবু ছৈয়দ।
তিনি বলেন, “এখন তাদের মধ্যে কিছু ছাত্র ক্যাম্পের ভেতরের স্কুলে পড়ছে, কিছু ছেলে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছে, আর কিছু ছাত্রের বাবা-মা নিজেরা শিক্ষক দিয়ে লেখাপড়া করাচ্ছে।”
“আমরা এদেশে থাকব না। তবে, যতদিন আমরা এখানে আছি ততদিন আমাদের সন্তানদের শিক্ষার সুযোগ দিলে তারা তাদের ভবিষ্যত গড়তে পারত,” যোগ করেন ছৈয়দ।
খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রোহিঙ্গারাও
গত বছর জলবায়ু পরিবর্তন, রাজনৈতিক সংঘাত ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিশ্বের ৫৩টি দেশের ১১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ চলতি বছরে খাদ্য নিরাপত্তার ঝুকিতে রয়েছেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ।
এর মধ্যে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করা রোহিঙ্গা শরণার্থীরাও রয়েছেন।
মঙ্গলবার প্রকাশিত জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার বার্ষিক প্রতিবেদনে এই আশঙ্কা করা হয়।