জুনের মধ্যে ভাসানচরে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে এক লাখ রোহিঙ্গা

কামরান রেজা চৌধুরী
2018.04.05
ঢাকা
উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের সামনে ঘর নির্মাণের অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রী বাঁশ সংগ্রহ করে সাজিয়ে রাখছেন রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের সামনে ঘর নির্মাণের অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রী বাঁশ সংগ্রহ করে সাজিয়ে রাখছেন রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। ৫ এপ্রিল ২০১৮।
AFP

এ বছর জুনের মধ্যেই শুরু হচ্ছে এক লাখ রোহিঙ্গাকে কক্সবাজার থেকে নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার অদূরে অবস্থিত ভাসানচরে সরিয়ে নেওয়ার কাজ।

আর এ লক্ষ্যে সেখানে বাড়িঘরসহ প্রয়োজনীয় রাস্তাঘাট, টয়লেট, সাইক্লোন আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ শেষ পর্যায়ে বলে বৃহস্পতিবার বেনারকে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন রোহিঙ্গা সেলের প্রধান ও যুগ্ম-সচিব মোহাম্মদ হাবিবুল কবির চৌধুরী।

পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, গত ২৩ নভেম্বর মিয়ানমারের সাথে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তি সই করেছে করেছে বাংলাদেশ। এরপর সেই আইন অনুযায়ী, জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠিত হয়েছে এবং ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

২৩ নভেম্বর তারিখে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী পুনর্বাসন দুই মাসের মধ্যে শুরু হওয়ার কথা।

কিন্তু এখন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাকেও পুনর্বাসিত করা সম্ভব হয়নি। রোহিঙ্গাদের আগমন এখনো বন্ধ করা যায়নি। রাখাইন রাজ্যে নির্যাতন বন্ধ হয়নি বলে অভিযোগ করছে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, রাখাইনে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা মৌলিক চাহিদার সংকটে ভুগছে।

তাই, রোহিঙ্গা সমস্যার সহসা সমাধান হবে না বলে মনে করছে সরকার। এমতাবস্থায় কক্সবাজার থেকে তাঁদের ভাসানচরে সরিয়ে নেওয়া দরকার বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের শরণার্থী শিবিরগুলোতে বসবাস করছে।

উখিয়ার স্থানীয় জনসংখ্যা পাঁচ লাখ। সেখানে আরও প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। স্থানীয় জনগণ ইতিমধ্যে রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের দাবিতে রাস্তায় নেমেছে।

রোহিঙ্গা সেলের প্রধান মোহাম্মদ হাবিবুল কবির চৌধুরী বৃহস্পতিবার বেনারকে বলেন, “ভাসানচরের উন্নয়নের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। আশা করি আমরা জুনের মধ্যে সেখানে রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করতে পারব।”

তিনি বলেন, ভাসানচরে কমপক্ষে এক লাখ রোহিঙ্গাকে সরিয়ে নেওয়া হবে এবং সেখানকার থাকার পরিবেশ উখিয়া বা টেকনাফের ক্যাম্পগুলোর চেয়ে অনেক সুন্দর ও পরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে।

হাবিবুল কবির চৌধুরী বলেন, বুধবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সচিব ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের ব্রিফ করেছেন।

তিনি বলেন, আগামী বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই ভূমিধস, বন্যা, সাইক্লোনসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করতে উখিয়ার পাহাড়ে চরম ঝুঁকির মুখে বসবাসকারী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেছে সরকার।

তাঁর মতে, উখিয়ার পাহাড়ে চরম ঝুঁকিতে বসবাসকারী ২৫ হাজার রোহিঙ্গাকে ১৫ এপ্রিলের মধ্যে পাশের একটি নিরাপদ ভূমিতে সরিয়ে নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, চরম ঝুঁকিতে থাকা ১১ হাজার রোহিঙ্গাকে ইতিমধ্যে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

হাবিবুল কবির চৌধুরী বলেন, এশিয়ান ডিডাসটার প্রিপেয়ার্ডনেসের ওই গবেষণায় যে দুই লাখ মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাস করছে বলে চিহ্নিত করা হয়েছে তাদের মধ্যে কমপক্ষে এক লাখ রোহিঙ্গাকে উখিয়ার বিভিন্ন স্থানে সরিয়ে নেওয়া হবে। আর বাকিদের নেওয়া হবে নোয়াখালী জেলার ভাসানচর এলাকায়।

শরণার্থী ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম বেনারকে বলেন, ভাসানচরে রোহিঙ্গারা নিরাপদে ও আরও সুযোগ-সুবিধাসহ বসবাস করতে পারবে। উখিয়ার বিভিন্ন শিবিরে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের মতামত নিয়েই তাঁদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে ও হবে। আমরা চাই না বর্ষা মৌসুমে কোনো প্রাণহানি হোক।

তিনি বলেন, কোনো রোহিঙ্গাকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ভাসানচরে পাঠানো হবে না।

ভাসানচরে রোহিঙ্গা পল্লী উন্নয়নের কাজ করছে বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী।

প্রকল্পের সাথে জড়িত নৌ-বাহিনীর একজন পদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেনারকে বলেন, “আমরা ডিসেম্বরের কাজ শুরু করেছি। আশা করি মে মাসের শেষ নাগাদ আমাদের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ শেষ করা সম্ভব হবে। সেখানে সব মিলিয়ে এক হাজার ৪৪০টি বিল্ডিং থাকবে।”

তিনি বলেন, ভাসানচর উন্নয়নের জন্য ১২ হাজারের বেশি কর্মী দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে। বুধবার নৌ-বাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তারা ভাসানচর উন্নয়নের কাজ দেখে গেছেন।

ওই কর্মকর্তা বলেন, সেখানে ১২০টি ক্লাস্টার থাকবে। প্রতিটি ক্লাস্টারে ৪৮টি ঘর থাকবে। রোহিঙ্গাদের সাইক্লোন থেকে নিরাপদ রাখতে সেখানে ১২০টি সাইক্লোন সেন্টার থাকবে।

রোহিঙ্গা সমস্যা দীর্ঘায়িত হবে

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে বাস্তবে কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৃহস্পতিবার অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব সলিল শেঠি সকালে গণভবনে শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন বলে জানিয়েছেন তাঁর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।

প্রেস সচিব বলেন, শেঠির সাথে বৈঠকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর এবং দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের সফরের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে উদ্ধৃত করে প্রেস সচিব করিম বেনারকে বলেন, ‘আমরা বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু, বাস্তবে কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না।’

মিয়ানমারেই রোহিঙ্গা সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে মন্তব্য করে সলিল শেঠি বলেন, রোহিঙ্গারা যেন নিজ দেশে ফিরে যেতে পারে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সে জন্য তাদের কাজ অব্যাহত রেখেছে।

শলিল শেঠির মতামত সম্পর্কে প্রেস সচিব বলেন, “মিয়ানমারে যা হয়েছে তা, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অপরাধ।”

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য বিশ্বজুড়ে জনমতের চাপ সৃষ্টি করতে হবে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।