রোহিঙ্গা শিবিরে গোলাগুলিতে এক নারীসহ দুজন নিহত
2023.04.14
কক্সবাজার

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে সন্দেহভাজন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) এক সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। গোলাগুলির মধ্যে পড়ে এক রোহিঙ্গা নারীও নিহত হন।
আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) দাবি করেছে, আরসা সদস্যদের গুলিতে নূর হাবা (৫০) নামে এক রোহিঙ্গা নারী নিহত হন, যিনি ঘটনার সময় ওই এলাকা দিয়ে যাচ্ছিলেন।
এপিবিএন আরও জানিয়েছে, এ সময় পুলিশের গুলিতে আরসার সদস্য মো. হাসিম (৩২) নিহত হন। গোলাগুলির সময় দুই পুলিশ সদস্য আহত হন বলে জানায় এপিবিএন।
শুক্রবার দুপুরে উখিয়ার ১৮ নম্বর ক্যাম্পে মসজিদের পাশে পাহাড়ের পাদদেশে গোলাগুলির ওই ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় অস্ত্রসহ একজনকে আটকও করার কথা জানিয়েছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দায়িত্ব পালন করা করা ৮-আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সহকারী পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মো. ফারুক আহমেদ।
“শুক্রবার দুপুরে পাহাড়ের পাদদেশে সশস্ত্র আরসা সদস্য লালুর নেতৃত্বে ২০-২৫ জনের একটি গ্রুপ অবস্থান করছিল। খবর পেয়ে এলাকাটি ঘিরে ফেলে এপিবিএন পুলিশ। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে এলোপাথাড়ি গুলি ছোড়ে আরসার সন্ত্রাসীরা,” জানান ফারুক।
সহকারী পুলিশ সুপার জানান, “এসময় আরসা সদস্যদের গুলিতে নুর হাবা নামে এক রোহিঙ্গা নারী নিহত হন। তিনি ওই ক্যাম্পের নুরুল ইসলামের স্ত্রী।”
নুর হাবা কীভাবে এবং কার গুলিতে নিহত হয়েছেন সে বিষয়ে পুলিশ ছাড়া অন্য কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
গুলিতে নিহত নুর হাবার ছোট বোন সমুদা খাতুন (৩১) জানান, “আমি ও আমার বোন দুপুরে আরও কয়েকজনের সাথে কলসি নিয়ে টিউবওয়েল থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করতে গিয়েছিলাম। পানি নেওয়ার জন্য আমরা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলাম। হঠাৎ গুলির শব্দ শুনতে পাই। পিছনে তাকিয়ে দেখি রক্তাক্ত অবস্থায় আমার বোন মাটিতে পড়ে আছে। ঘটনাস্থলেই সে মারা যায়।”
“আমার বোনের তো কোনো দোষ নেই। তবুও তাকে মরতে হলো কেন? ক্যাম্পে আমাদের কোনো নিরাপত্তা নেই, যখন তখন মরতে হচ্ছে,” বলেন তিনি।
সমুদা খাতুন জানান, “আমরা মাত্র দুই বোন। আমাদের আর কেউ নেই। প্রাণ বাঁচাতে ২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে এখানে আশ্রয় নেই। তারপরও বোনের জীবন বাঁচল না, নির্মমভাবে বোনকে প্রাণ দিতে হলো। তাঁর ছয় সন্তান রয়েছে, তাদের কী অবস্থা হবে ভাবতেও পারছি না।'
নিহত রোহিঙ্গা নারীর বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়ার কথা জানিয়ে ৮-আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সহকারী পুলিশ সুপার মো.ফারুক আহমেদ জানান, “কেন তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, আরসার সাথে তার পরিবারের পূর্ব শত্রুতা ছিল কিনা, সেসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী জানান, ক্যাম্পে পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের মধ্য গোলাগুলির ঘটনায় মহিলাসহ দুইজনের মৃত দেহ উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।”
আরসার গোলাগুলির বিপরীতে পুলিশ “নিজেদের জীবন রক্ষায় সশস্ত্র আরসা সদস্যদের উপর পাল্টা গুলি” ছুড়লে, আরসা সদস্যরা গুলি করতে করতে পালিয়ে যায় বলে জানান ফারুক।
“পালানোর সময় আরসা সদস্য মো. সাদেক (৩১) অস্ত্রসহ আটক হয়েছে। তার কাছ থেকে হামলা পরিকল্পনা বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে,” জানান ওই সহকারী পুলিশ সুপার।
তিনি বলেন, সন্ত্রাসীরা চলে যাবার পর ঘটনাস্থলে আরসার শীর্ষ সন্ত্রাসী হাসিমের গুলিবিদ্ধ মৃতদেহ পাওয়া যায়। নিহত হাসিমকে আরসার শীর্ষ সন্ত্রাসী উল্লেখ করে তিনি দাবি করেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সংঘটিত বিভিন্ন হত্যাকাণ্ড, মাদক ব্যবসা, অপহরণ ও চাঁদাবাজির সঙ্গে সে জড়িত ছিল।
সাধারণ রোহিঙ্গারা আতঙ্কে
সাধারণ রোহিঙ্গাদের অভিযোগ, মিয়ানমারভিত্তিক সশস্ত্র সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। শিবিরে আরো অন্তত ১০-১২টি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ সক্রিয় আছে। তারা একের পর এক হত্যা ও হামলায় জড়িয়ে পড়ছে।
এর আগে মঙ্গলবার সকালে উখিয়ার ১৯ নম্বর ক্যাম্পে আরসার সশস্ত্র সদস্যদের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আরসা কমান্ডার আব্দুল মজিদ ওরফে লালাইয়া (৩২) নামে এক রোহিঙ্গা নিহত হন। সে সময় তিন আরসার সদস্যকে আটক করার কথা জানিয়েছিল এপিবিএন।
উখিয়ার ১৮ নম্বর ক্যাম্পের বাসিন্দা নুর কামাল বেনারকে বলেন, “আমরা সব সময় চাই ক্যাম্পে সাধারণ রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হোক। আমাদের চেষ্টা ও সম্পৃক্ততার কারণে সন্ত্রাসীরা আগের মতো মাদক-মানব পাচারসহ চাঁদাবাজি করতে পারছে না। ফলে তাদের আর্থিক নেটওয়ার্ক দুর্বল হয়ে গেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে হত্যা ও হামলা চালিয়ে তারা আতঙ্ক সৃষ্টি করতে চাচ্ছে।”
রোহিঙ্গা নারী লালা পুতু জানান, “দুপুরে হঠাৎ করে আমার বাড়ির পাশে এলোপাথাড়ি গুলির শব্দ শুনে ক্যাম্পের লোকজন ছোটাছুটি করে। পরে জানতে পারি মহিলাসহ দুজন মারা গেছেন। এ ঘটনায় ক্যাম্পের লোকজন ভয়ের মধ্য রয়েছে।"
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৩১টি হত্যাকাণ্ড হয়েছে।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত অন্তত ২৬টি হত্যাকাণ্ড হয়েছে।