রোহিঙ্গাদের ‘অনেক বিদ্রোহী' আটক, জানালেন বাংলাদেশি কর্মকর্তারা
2018.04.18
ঢাকা ও কক্সবাজার

সশস্ত্র রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের ‘অনেক’ সন্দেহভাজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে বেনারকে জানিয়েছেন বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা।
কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরগুলোতে সাধারণ রোহিঙ্গাদের সাথে মিশে থাকা বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সদস্যদের ওপর নজর রাখা প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেনারকে এই তথ্য জানান বাংলাদেশ সরকারের এক শীর্ষ কর্মকর্তা।
“আমরা মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলাকারীসহ বেশ কয়েকজন আরসা সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছি,” বলেন তিনি।
তবে এখন পর্যন্ত মোট কতজনকে গ্রেপ্তর করা হয়েছে সে তথ্য দিতে তিনি অস্বীকার করেন।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো আরসা সদস্যকে গ্রেপ্তারের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করা হয়নি। তবে শরণার্থী শিবিরের এক রোহিঙ্গা নেতা বেনারকে জানান, শুধু তাঁর টিমই গত জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারিতে ১৫ জন আরসা সদস্যকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে।
এদিকে গত ৯ এপ্রিল গোলাবারুদ ও একটি সাব-মেশিনগানসহ আরসা সদস্য শাহেদকে (২৬) পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে বলে বেনারকে জানিয়েছেন রোহিঙ্গা নেতারা।
“সে (শাহেদ) কোনো সাধারণ অপরাধী নয়। তবে আমি জানি না সে আরসা বা এ ধরনের কোনো সংগঠনের সাথে যুক্ত কি না,” বেনারকে বলেন পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তা আবুল খায়ের।
তিনি বলেন, “আমরা তাকে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। তার এক বন্ধু তাকে বুলেটগুলো বহন করার জন্য দিয়েছিল বলে সে জানিয়েছে।”
মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি
মিয়ানমার সরকার গত আগস্টে রাখাইনের পুলিশ ফাড়িতে আক্রমণের জন্য আরসাকে দায়ী করে থাকে।
ওই আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ‘জাতিগত নিধন’ অভিযানের প্রেক্ষিতে এখন পর্যন্ত প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে।
বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের মতে, মিয়ানমার থেকে আসা শরণার্থী ঢলের সাথে আটক হওয়া এইসব আরসা সদস্যও বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। তবে আটকের পর তাঁদেরকে মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি বলে জানান তাঁরা।
আটকদের ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে কিছু ঝুঁকি রয়েছে জানিয়ে ওই বাংলাদেশি কর্মকর্তা বলেন, “আমরা যদি তা করি, তবে সাধারণ রোহিঙ্গারা ফিরে যাবার ব্যাপারে আতঙ্কিত হয়ে পড়তে পারে। এতে পুরো প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটিই জটিলতার মধ্যে পড়বে।”
তবে “আমরা কোনো মতেই আরসা কিংবা অন্য কোনো বিদ্রোহী সংগঠন দ্বারা মিয়ানমারের ক্ষতি সমর্থন করি না,” যোগ করেন তিনি।
কক্সবাজারের এক শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তাও এই মতকে সমর্থন করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বেনারকে বলেন, “আমরা কোনো মতেই বাংলাদেশের ভেতর থেকে আরসাকে কার্যক্রম পরিচালনা করতে দিতে পারি না। শরণার্থী শিবিরগুলোতে আমাদের অন্তত সাতটি গোয়েন্দা সংস্থা আরসার কার্যক্রম নজরদারি করছে।”
এদিকে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে বলে গত নভেম্বরে জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তবে এর ফলে মিয়ানমার সরকারের সরবরাহ করা কয়েক শ আরসা সদস্যর তালিকা থেকে কাউকে চিহ্নিত করার কথা জানা জায়নি। মিয়ানমার সরকারে দাবি, ওই আরসা সদস্যরা সাধারণ রোহিঙ্গাদের ভেতর লুকিয়ে রয়েছে।
এর আগে গত অক্টোবরে কুতুপালং শিবির থেকে অস্ত্রসহ এক রোহিঙ্গাকে আটক করে র্যাব। তবে ওই রোহিঙ্গা আরসা সদস্য নয় বলে তখন জানিয়েছিলেন কর্মকর্তারা।
আরসা আটক
গত সপ্তায় গ্রেপ্তার শাহেদকে আরসার শীর্ষ নেতা আতাউল্লা আবু জুনুনির নেতৃত্বে সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে সাম্প্রতিক একটি ইউটিউব ভিডিওতে দেখা গেছে বলে বেনারকে জানিয়েছেন রোহিঙ্গা নেতারা।
“অনলাইনে থাকা ভিডিওতে শাহেদকে নীল শার্ট পরা অবস্থায় দেখা গেছে,” বেনারকে বলেন কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের রোহিঙ্গা নেতা জাফর আলম। শাহেদকে আটক করতে তিনি পুলিশকে সহায়তা করেছেন বলেও জানান।
বিকেলের পর শরণার্থী শিবিরের ‘শান্তি শৃঙ্খলা’ রক্ষার জন্য যে কয়েকশ রোহিঙ্গা নেতা কাজ করেন জাফর তাঁদের মধ্যে একজন।
জাফর বলেন, “শাহেদকে আমি বিকেল চারটার দিকে একটা ছোরা নিয়ে ঘোরাফেরা করতে দেখি। তখন সে আমাকে আক্রমণের চেষ্টা চালায়। সাথে সাথে আমি আওয়াজ দিলে অন্যরা এসে তাকে ধরে ফেলে।”
শাহেদকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করার বিষয়টি অন্য রোহিঙ্গা নেতা জাহিদ হোসেনও নিশ্চিত করেন।
জাহিদ বেনারকে বলেন, “শাহেদ আরসার সাবেক সদস্য আব্দুল হাকিম (ওরফে হাকিম ডাকাত) এর নেতৃত্বে একটি সশস্ত্র দলের সাথে যুক্ত।”
আরেক রোহিঙ্গা নেতা মো. সেলিম জানান, চলতি বছরের প্রথম দু মাসে শুধু তাঁর টিম ১৫ জন আরসা সদস্যকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেছে।
“শিবিরে আরসা সক্রিয় ছিল। জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারির ভেতর আমরা তিন কিস্তিতে ১৫ জন আরসা সদস্যকে আটক করে পুলিশের জিম্মায় দেই,” বলেন সেলিম।
তবে পুলিশ সেলিমের এই দাবি অস্বীকার করেছে।
এদিকে কক্সবাজারের বালুখালী শরণার্থী শিবিরেই আরসার উপস্থিতি সবচে বেশি বলে গত ৯ ও ১০ এপ্রিল বিভিন্ন রোহিঙ্গা নেতারা এই প্রতিবেদকের সাথে সাক্ষাৎকারে জানান।
“আরসা দুই ভাগ হয়ে গেছে; একভাগের নেতৃত্ব রয়েছেন আতাউল্লা এবং আরেক ভাগের নেতৃত্বে আছেন টেকনাফে বসবাসকারী আবদুল হাকিম,” নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেনারকে জানান এক রোহিঙ্গা নেতা।