রোহিঙ্গাদের দেখতে শনিবার আসছেন নিরাপত্তা পরিষদের রাষ্ট্রদূতেরা

কামরান রেজা চৌধুরী
2018.04.25
ঢাকা
রাখাইন রাজ্যের মংডু জেলার সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার বাইরে শূন্য রেখায় বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের একাংশ। রাখাইন রাজ্যের মংডু জেলার সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার বাইরে শূন্য রেখায় বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের একাংশ। ২৫ এপ্রিল ২০১৮।
AFP

রোহিঙ্গা সমস্যার গভীরতা বুঝতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রের কূটনীতিকরা আগামী ২৮ এপ্রিল কক্সবাজার সফরে আসছেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

গত বছর আগস্টের শেষের দিকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশে আসার ঢল শুরু হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের এ ধরনের সফরের জন্য জাতিসংঘে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে আসছিল।

নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিদের আসন্ন সফরকে সামনে রেখে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বুধবার এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার আয়োজন করে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স বিষয়ক সেলের সচিব খুরশেদ আলম বেনারকে বলেন, “নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রের কূটনীতিকদের ২৮ এপ্রিল সফরকে সামনে রেখে আজকের প্রস্তুতি সভায় আমাদের করণীয় ঠিক করেছি। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে আমরা কী ধরনের সমস্যায় আছি সেসব ব্যাপার আমরা পরিষদের সদস্যদের কাছে তুলে ধরব।”

তিনি বলেন, মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের বিতাড়নের পক্ষে যেসব অসত্য কথা বলছে সেগুলো তাঁদের কাছে তুলে ধরা হবে।

খুরশেদ আলম বলেন, “আমরা নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের কাছে বাংলাদেশের সন্ত্রাস বিরোধী অবস্থান সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করব। আরসার ব্যাপারে আমাদের অবস্থান হলো, বাংলাদেশে কোনো আরসা সদস্য নেই। আমরা কোনো অবস্থায়ই আমাদের মাটি কারও বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের কাজে ব্যবহৃত হতে দেব না।”

কূটনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা রোহিঙ্গা শিবির সফরের মাধ্যমে মিয়ানমার কী ধরনের জাতিগত নিধনের কাজ করেছে সে ব্যাপারে জানতে পারবেন। এর ভিত্তিতে নিরাপত্তা পরিষদে আলোচনা হলে মিয়ানমারের ওপর কূটনৈতিক চাপ বাড়বে।

নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তরেখায় আটকে পড়া রোহিঙ্গাদের দেখতে যাবেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তাঁরা কুতুপালং শরণার্থীশিবির সফর করবেন ও রোহিঙ্গাদের সাথে মত বিনিময় করবেন। বাংলাদেশে তিন দিনের সফর শেষে ৩০ এপ্রিল তাঁরা মিয়ানমার যাবেন।

সভায় অংশ নেওয়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সিনিয়র কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেনারকে বলেন, “মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের যে জাতিগত নিধন করেছে, গণহত্যা চালিয়েছে, ধর্ষণ করেছে, শিশু হত্যা করেছে সেসব বিষয়ে প্রমাণ তুলে ধরবে বাংলাদেশ।”

“বাংলাদেশ চাইবে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপ হোক,” তিনি বলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন বেনারকে বলেন, “রোহিঙ্গা শিবির সফরের মাধ্যমে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিরা প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারবেন।”

“মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে কী ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়েছে সেব্যাপারে পরিষ্কার ধারণা পাবেন তাঁরা। আর এর মাধ্যমে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি হবে। আর চাপ সৃষ্টি হলেই কেবল মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে রাজি হবে,” বলেন দেলোয়ার হোসেন।

যারা আসছেন

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৈরি সফরসূচি অনুযায়ী, মোট ২৪ জনের একটি দল বাংলাদেশ সফর করবেন।

এই প্রতিনিধি দলে রয়েছেন, জাতিসংঘে ব্রিটেন, সুইডেন, পোল্যান্ড, বলিভিয়া, ইকুটেরিয়াল গিনি, কাজাখস্তান, কুয়েত, পেরু, নেদারল্যান্ডস, চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী অথবা উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি এবং জাতিসংঘের কয়েকজন কর্মকর্তা।

সম্ভাব্য সফরসূচি

সফরসূচি অনুযায়ী, জাতিসংঘ প্রতিনিধিরা আগামী ২৮ এপ্রিল বিকেল পাঁচটায় বিশেষ বিমানে করে কক্সবাজার পৌঁছে রাতে স্থানীয় একটি হোটেলে অবস্থান করবেন।

২৯ এপ্রিল সকালে তাঁরা কোনারপাড়া জিরো পয়েন্টে গিয়ে আটকে পড়া রোহিঙ্গা এবং পরে কুতুপালং বর্ধিত ক্যাম্পে শরণার্থীদের সাথে মত বিনিময় করবেন।

এছাড়া শরণার্থী ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিশনার, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক ও বিজিবি কর্মকর্তাদের সাথেও রোহিঙ্গা বিষয়ে আলোচনা করবেন তাঁরা।

ওই দিন দুপুরে মিডিয়ার সাথে কথা বলে প্রতিনিধিরা সন্ধ্যায় কক্সবাজার থেকে ঢাকায় ফিরবেন।

তাঁরা পরদিন সকাল আটটায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করে সাড়ে দশটায় মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোর উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করবেন।

নিরাপত্তা পরিষদ সদস্যদের রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবির সফর সম্পর্কে জিরো পয়েন্টে আটকে পড়া রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ আলম বেনারকে বলেন, “আমরা তাঁদের কাছে তুলে ধরব মিয়ানমার সরকার কী রকম নৃশংসভাবে রোহিঙ্গাদের নির্যাতন করেছে, হত্যা করেছে, নারীদের ধর্ষণ করেছে, শিশুদের মেরেছে।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।