রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে হতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
2018.04.30
ঢাকা

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে হতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া এই সংকট সমাধানে জোরালো ভূমিকা নিতে রাশিয়া ও চীনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের (ইউএনএসসি) প্রতিনিধিদল ঢাকা ছাড়ার আগে গণভবনে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে তাঁর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বেনারকে বলেন, “আমরা আশা করি, চীন, রাশিয়া, ভারত ও জাপান রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ভূমিকা পালন করবে।”
“রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে হতে হবে,” বলে প্রতিনিধিদলের কাছে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী, জানান তাঁর প্রেস সচিব।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য কফি আনান কমিশনের প্রতিবেদন বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।
“আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা,” বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিন আরও বলেন, বাংলাদেশ কোনো দেশের সাথে সংঘর্ষে না জড়িয়ে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয় মানুষ মারাত্নক কষ্টে আছে। তাছাড়া, রোহিঙ্গাদের আগমনের কারণে আশেপাশের বন ও পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সোমবার সকালে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করেন। নিরাপত্তা পরিষদের প্রেসিডেন্ট ও পেরুর রাষ্ট্রদূত গুস্তাভো মেজা কুয়াদরা ভেলাসকেজ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বলে বেনারকে জানান প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।
রোহিঙ্গাদের এই অবস্থা চলতে পারে না
তিন দিনের বাংলাদেশ সফর শেষে প্রতিনিধি দলটি মিয়ানমারের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার আগে সোমবার সকালে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে বক্তব্য রাখেন।
রোহিঙ্গা সংকট সমাধান ধীর গতিতে চলছে বলেই নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফরে এসেছেন বলে এ সময় জানান গুস্তাভো অ্যাডোলফো মেজা কুয়াদরা ভেলাসকেজ।
নিরাপত্তা পরিষদের মতে, তাঁরা বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের যে অবস্থা দেখেছেন তা চলতে পারে না। নিরাপত্তা পরিষদ বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সম্পাদিত প্রত্যাবাসন চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়নের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে বদ্ধপরিকর বলেও মন্তব্য করেন তাঁরা।
জাতিসংঘে কুয়েতের স্থায়ী প্রতিনিধি মনসুর আয়াদ আল-ওতাইবি বিমানবন্দরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নিরাপত্তা পরিষদের মূল বক্তব্য পেশ করেন।
নিরাপত্তা পরিষদ প্রধান ও পেরুর স্থায়ী প্রতিনিধি গুস্তাভো অ্যাডোলফো মেজা কুয়াদরা ভেলাসকেজ সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
ভেলাসকেজ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে “নিরাপত্তা পরিষদ ঐক্যবদ্ধ”। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সফরে আসার বিষয়টি নিরাপত্তা পরিষদের সকল ১৫ সদস্যের সম্মতিতেই হয়েছে।
তিনি বলেন, গত বছর নভেম্বরে নিরাপত্তা পরিষদ এব্যাপারে বিবৃতি দিয়েছে। সেই আলোকে আমরা নিরাপত্তা পরিষদের সকল সদস্য ঐক্যবদ্ধ।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে খুব ধীরে চলছে এ কথা স্বীকার করে ভেলাসকেজ বলেন, “আমাদের এখানে আসার অন্যতম কারণ এটি। আমাদের উদ্বেগ হলো, সবকিছু ধীরে চলছে। আর সে কারণেই নিরাপত্তা পরিষদ এখানে।”
তিনি বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিব রোহিঙ্গা বিষয়ে একজন বিশেষ দূত নিয়োগ করেছেন। কাজেই বিষয়টি থেমে নেই। আমরা আলোচনা চালিয়ে যাব। এবং এটি আমাদের অন্যতম আলোচনার বিষয়বস্ত।
জাতিসংঘে কুয়েতের স্থায়ী প্রতিনিধি যা বললেন
কুয়েতের স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, “আমরা কক্সবাজার সফর করেছি ও শরণার্থীদের সাথে মত বিনিময় করার সুযোগ পেয়েছি। সেখানে আমরা যা দেখেছি, এটি একটি মানবিক বিপর্যয় ও মানবাধিকার ইস্যু।”
তিনি বলেন, আমরা খুব দ্রুত কোনো সমাধান আশা করছি না। সমস্যার দ্রুত সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে আন্তরিকতা দেখাতে হবে।
তাঁর মতে, বাংলাদেশ এই সমস্যা শুরু করেনি। আমরা চাই বাংলাদেশ যা করছে তা করতে থাকুক। এটি খুবই মহৎ কাজ। বাংলাদেশ দশ লাখ মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে। এটি সহজ কাজ নয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশের সাথে আছে।
রাষ্ট্রদূত আল-ওতাইবি বলেন, “আমরা এ ব্যাপারে নীরব থাকতে পারি না। এবং আমরা নিউ ইয়র্ক ফিরে গিয়ে শরণার্থীদের নিরাপদে, স্বাধীনভাবে, স্বেচ্ছায় ও মর্যাদার সাথে প্রত্যাবাসনের লক্ষে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করতে চেষ্টা চালাব।”
তিনি বলেন, “আমরা যা দেখেছি সেটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা সমাধান দেখতে চাই, যদিও সমাধান দ্রুত হবে না। এর জন্য সময় প্রয়োজন। আমরা আশা করি দুদেশের মধ্যে সম্পাদিত প্রত্যাবাসন চুক্তি বাস্তবায়িত হবে।”
রাষ্ট্রদূত আল-ওতাইবি বলেন, আমরা মিয়ানমান যাচ্ছি। আমরা তাঁদের কথা শুনব। আমরা ফিরে গিয়ে নিরাপত্তা পরিষদকে জানাব।
মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোনো রেজুলেশন আসলে নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়া ও চীন বিরোধিতা করছে এমন অভিযোগের ব্যাপারে আল-ওতাইবি বলেন, আমি চীন ও রাশিয়ার কোনো বিরোধিতা দেখি না। তাঁরা নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য এবং তাঁরা আমাদের সাথে আছে।
তাঁরা গতকাল আমাদের সাথে ছিলেন এবং আজ প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের সময়ও তারা আমাদের সাথে ছিলেন। তাঁরাও এই সমস্যার সমাধান দেখতে চায়।
ব্রিটেনের স্থায়ী প্রতিনিধি ক্যারেন এলিজাবেথ রক্সবার্গ বলেন, মিয়ানমার সরকারও রোহিঙ্গা বিষয়ে তদন্ত করছে। যদিও দেরি হয়েছে তারপরও আমরা তাঁদের কাছে জানতে চাইব তাঁরা কীভাবে দোষীদের জবাবদিহি করবে।
এদিকে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারের রাজধানী নোপিদোতে পৌঁছে সোমবার বিকেলে নিরাপত্তা পরিষদ সদস্যরা দেশটির নেত্রী আং সান সু চির সাথে বৈঠক করেছেন বলে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।
আগামীকাল তাঁরা রোহিঙ্গাদের আবাসস্থল উত্তর রাখাইন পরিদর্শন করবেন বলেও জানায় এফপি।