রোহিঙ্গা নিপীড়নের ‘যথাযথ’ তদন্তের আহ্বান জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের

বিশেষ প্রতিবেদন
2018.05.01
রাখাইনের রাজধানী সিত্তের বিমানবন্দরে অবতরণ করছেন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা। রাখাইনের রাজধানী সিত্তের বিমানবন্দরে অবতরণ করছেন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা। ১ মে ২০১৮।
AFP

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য পরিদর্শন করে মঙ্গলবার দেশটির কাছে সেনা অভিযানকালে রোহিঙ্গাদের প্রতি সহিংসতার ‘যথাযথ’ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা।

“দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার জন্য সেখানে অবশ্যই যথাযথ তদন্ত থাকতে হবে,” রাখাইন পরিদর্শন শেষে সংবাদ সম্মেলনে বলেন জাতিসংঘে ব্রিটেনের স্থায়ী প্রতিনিধি ক্যারেন এলিজাবেথ রক্সবার্গ।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টের (আইসিসি) সহায়তায় মিয়ানমার এই তদন্ত শুরু করতে পারে, অথবা তাঁরা নিজেরাই এই বিষয়ে তদন্ত চালাতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশে তিনদিন সফর শেষে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের প্রতিনিধি দলটি সোমবার মিয়ানমার পৌঁছে দেশটির নেত্রী আং সান স সুচি ও সেনা প্রধান মিন অং হ্লাইয়াং এর সাথে বৈঠক করেন।

ওই বৈঠকগুলোর আলোচানায় বাংলাদেশে শরণার্থী রোহিঙ্গাদের নিরাপদে রাখাইন রাজ্যে প্রত্যাবাসন শুরু করার বিষয়টি প্রাধান্য পায়।

এর পর মঙ্গলবার তাঁরা রোহিঙ্গাদের আবাসস্থল রাখাইন পরিদর্শনে আসেন। সেখানে তাঁরা স্থানীয় কর্মকর্তাসহ হিন্দু, বৌদ্ধ ও মুসলিম জনগোষ্ঠীর বাসিন্দাদের সাথে সাক্ষাৎ করেন।

প্রসঙ্গত গত আগস্টের পর রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিপীড়নমূলক অভিযানে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশ আশ্রয় গ্রহণ করেন।

গত বছরের শেষ দিকে শরণার্থী রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বিষয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার চুক্তি স্বাক্ষর করলেও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এখনো শুরু করা যায়নি।

এর আগে বিভিন্ন সময় জাতিসংঘের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের দেশটির নাগরিক স্বীকার করে না, বরং অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী হিসেবে গণ্য করে থাকে।

অনেক রোহিঙ্গাই জানিয়েছেন, নিরাপত্তাহীনতার কারণে তাঁরা রাখাইন ফিরতে আগ্রহী নন।

“শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনের জন্য নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নয়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ, একই সাথে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাথে সমন্বয় বাড়ানোও জরুরি, বিশেষত জাতিসংঘের সাথে,” সংবাদ সম্মেলনে বলেন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো মেজা কুয়াদরা।

“একই সাথে শরণার্থীরা বাংলাদেশে যাবার আগে এখানে কী ঘটেছিল তা তদন্তের গুরুত্বের কথাও আমরা আগে বলেছি,” যোগ করেন তিনি।

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বিষয়ে জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) সাথে বাংলাদেশের সমঝোতা চুক্তি থাকলেও মিয়ানমারের সাথে সংস্থাটির এখনো সেই ধরনের কোনো চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি।

এদিকে মিয়ানমারের সাথে অচিরেই এরকম চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন জাতিসংঘে কুয়েতের স্থায়ী প্রতিনিধি মনসুর আয়াদ আল-ওতাইবি।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দ্রুততার সাথে সম্পন্ন হউক, এটাই জাতিসংঘ বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের কাছে প্রত্যাশা করে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে কফি আনান কশিনের সুপারিশের বাস্তবায়ন প্রত্যাশা করে বলেও জানান ব্রিটেনের স্থায়ী প্রতিনিধি ক্যারেন এলিজাবেথ রক্সবার্গ।

তিনি বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি যদি দ্রুত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়, এবং জাতিসংঘের সংস্থাগুলোকে অবাধে প্রবেশের (রাখাইনে) সুযোগ দেওয়া হয়, তবে সমস্যা সমাধানে সেটাই হবে সবচে ভালো ব্যবস্থা।”

“এতে যদি দীর্ঘ সময়ও লাগে, তবুও আমাদের শুরু করা উচিত,” যোগ করেন তিনি।

এদিকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পরিদর্শনের কারণে পুরো পরিস্থিতি নিয়ে তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হতে পারে বলে বেনারের সহযোগী প্রতিষ্ঠান রেডিও ফ্রি এশিয়ার কাছে মন্তব্য করেন রাখাইন রাজ্য সরকারের সচিব তিন মং সুয়ে।

তিনি বলেন, “এখানে প্রতিনিধিদল রাখাইনের স্থানীয়দের সাথে মত-বিনিময় করেছেন। এ থেকে তাঁরা বুঝতে পেরেছেন যে তাঁরা আগে যা শুনেছেন তার থেকে সত্য ঘটনা ভিন্ন।”

“তাঁরা বুঝতে পেরেছেন যে রাখাইনে সত্যি কী ঘটেছিল। যেহেতু তাঁরা সত্য ঘটনা শুনতে ও বুঝতে পেরেছেন, তাই আমরা মনে করি কিছুটা হলেও অন্তত তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তিত হবে,” বলেন মং সুয়ে।

রাখাইন ওমেনস নেটওয়ার্কের কর্মী নিও আয়ে প্রতিনিধি দলের সাথে সাক্ষাৎ করেন।

তিনি রেডিও ফ্রি এশিয়াকে বলেন, “তাঁরা (প্রতিনিধিরা) আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন কেন আমরা পরষ্পরকে ঘৃণা করি, এবং কীভাবে আমরা আবার একসাথে বসবাস করতে পারি। আমরা বলেছি যে, আমরা (রাখাইন) সব সময়ই এই বিষয়টা নিয়ে সতর্ক এবং এখনো এই অঞ্চলে তাঁদের (মুসলিম) সাথে আমাদের সুসম্পর্ক রয়েছে।”

“আমরা তাঁদেরকে জানিয়েছি যে রাখাইনের পরিস্থিতি সম্পর্কে আন্তর্জাতিক মিডিয়ার ভুয়া সংবাদের কারণেই আমাদের ভেতর ঘৃণার জন্ম হয়েছে,” যোগ করেন নিও আয়ে।

তথ্য সহায়তা: মিয়ানমার সার্ভিস, রেডিও ফ্রি এশিয়া।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।