রোহিঙ্গা শিবিরে বলিউড অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া

জেসমিন পাপড়ি ও আবদুর রহমান
2018.05.21
ঢাকা ও কক্সবাজার
টেকনাফ শামলাপুর শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গা শিশুদের সঙ্গে কথা বলছেন বলিউড তারকা প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। টেকনাফ শামলাপুর শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গা শিশুদের সঙ্গে কথা বলছেন বলিউড তারকা প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। ২১ মে ২০১৮।
আবদুর রহমান/বেনারনিউজ

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি দেখতে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করলেন বলিউড অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে বাংলাদেশ সফর করছেন তিনি।

চার দিনের সফরের প্রথম দিনে এ ভারতীয় অভিনেত্রী টেকনাফের শামলাপুর অস্থায়ী রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন। এ সময় প্রিয়াঙ্কা চোপড়া ক্যাম্পে অবস্থানরত শিশুদের সার্বিক খোঁজ খবর নেন। তিনি রোহিঙ্গা শিশুদের সঙ্গে বাংলায়ও কথা বলেন।

এর আগে সোমবার সকাল আটটার দিকে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান প্রিয়াঙ্কা। সেখান ঘণ্টা তিনেক অবস্থান করার পর কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে সড়কপথে প্রিয়াঙ্কাকে উখিয়ায় রয়েল টিউলিপ হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সাবেক বিশ্ব সুন্দরী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া কক্সবাজারে চার দিন অবস্থান করবেন।

সোমবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে টেকনাফের বাহারছড়ার শামলাপুর মনখালি ব্রিজের পাশে অস্থায়ী রোহিঙ্গা শিবিরে যান প্রিয়াঙ্কা। এ সময় তাঁর সঙ্গে ইউনিসেফ ও স্থানীয় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছিলেন।

রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনকালে প্রিয়াঙ্কা চোপড়া রোহিঙ্গা শিশু রিফাত হোসেনকে জিজ্ঞাসা করেন সে ক্যাম্পটি তাঁকে ঘুরে দেখাবে কিনা। শিশুটি তাঁর প্রস্তাবে রাজি হলে তার হাত ধরে রোহিঙ্গা শিবিরে হাঁটেন এই বলিউড তারকা।

আরও একটি শিশুকে প্রিয়াঙ্কা চোপড়া বাংলায় জিজ্ঞেস করেন, ‘তোমার নাম কী?’ উত্তরে ছেলেটি জানায়, মো. রফিক। সে স্কুলে যায় কিনা জিজ্ঞেস করলে মাথা নেড়ে রফিক জানায়, সে স্কুলে যায়।

মিনিট দশেক এই শিবিরে অবস্থানকালে আরও বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা শিশুর সঙ্গে কথা বলেন প্রিয়াঙ্কা।

টেকনাফ শামলাপুর রোহিঙ্গা শিবিরের নেতা আবদুল আজিজ বেনারকে জানান, হিন্দি চলচ্চিত্র অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া শিবির পরিদর্শন করেছেন। সেখানে তাঁকে এক নজর দেখার জন্য ভিড় করে মানুষ। তিনি রোহিঙ্গা শিশুদের সঙ্গে কথা বলেন এবং আবার দেখতে আসার অঙ্গীকারও করেন।

তবে তিনি প্রাপ্তবয়স্ক কোনো রোহিঙ্গা নারী ও পুরুষের সঙ্গে কথা বলেননি বলে জানান আবদুল আজিজ।

রোহিঙ্গা শিবির থেকে প্রিয়াঙ্কা চোপড়াকে নিয়ে ইউনিসেফ পরিচালিত হাসপাতালে যাওয়া হয়। এ সময় হাসপাতালের ভেতরে বাইরের কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

জানা গেছে, প্রিয়াঙ্কা সেখানে রোগীদের সঙ্গে কথা বলেন। হাসপাতালের চিকিৎসকদের কাছে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেন। পানিবাহিত রোগের ব্যাপারেও জানতে চান তিনি। এই অস্থায়ী শিবিরে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে বলে এ সময় তাঁকে জানানো হয়।

হাসপাতালের ইনচার্জ রিয়াজুল ইবনে হাসান বেনারকে বলেন, “প্রিয়াঙ্কা চোপড়া জানতে চেয়েছেন রোহিঙ্গা শিশুরা কোন কোন ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এবং ডায়রিয়া কেন হচ্ছে। এসব শিশুদের সার্বিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।”

বিকেল ৪টার কিছু পরে রোহিঙ্গা শিবির ত্যাগ করেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। বিদায় নেওয়ার সময় তিনি বাংলায় বলেন, ‘আবার আসব।’

প্রিয়াঙ্কার সফরসূচি থেকে জানা যায়, আগামীকাল মঙ্গলবার সকালে উখিয়ার বালুখালী ও জামতলী রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন তিনি।

এদিন বিকেলে টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করার কথা রয়েছে তাঁর। একইভাবে বুধবার উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন তিনি। বৃহস্পতিবার সকালে কক্সবাজার ছাড়বেন এই বলিউড তারকা।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে এসে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। এর আগে পুরোনো রোহিঙ্গা ছিল প্রায় পাঁচ লাখের মতো।

গত ৮ মাসে প্রায় ১০ লাখ ১৭ হাজার রোহিঙ্গার নিবন্ধন হয়েছে বলে জানিয়েছেন বহিরাগমন পাসপোর্ট অধিদপ্তর উপপরিচালক আবু নোমান মো. জাকের হোসেন। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে নতুন পুরাতন মিলে ১০ লাখ ১৭ হাজার রোহিঙ্গা নিবন্ধন হয়েছে। এর মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাটা বেশি।

রোহিঙ্গা শিবিরের প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড পেজে তুলে ধরেছেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে বিরাট সংখ্যক শিশু থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, রোহিঙ্গাদের এই প্রজন্মের শিশুগুলোর সামনে ভবিষ্যৎ বলে কিছু নেই।

“যদিও তারা হাসছিল, তবে তাদের চোখে আমি দেখেছি নিঃসীম শূন্যতা," লিখেছেন এই সাবেক বিশ্ব সুন্দরী।

প্রিয়াঙ্কা লিখেছেন, “এখানে মানবিক সঙ্কট যে কতটা গভীর, তার নজির এই শিশুরা। আমাদের সাহায্য তাদের খুব দরকার।"

বর্তমানে বিশ্বে শরণার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বড় জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের সহায়তায় ইউনিসেফের পাশে বিশ্ববাসীকে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান এই অভিনেত্রী। প্রিয়াঙ্কা চোপড়া বলেন, “এই শিশুরাই আমাদের ভবিষ্যৎ।”

মাত্র দুদিন আগে ১৯ মে ব্রিটিশ রাজপরিবারের আমন্ত্রণে প্রিন্স হ্যারি আর মেগান মার্কেলের রাজকীয় বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। সেখান থেকে দুবাই হয়ে এমিরেটস এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজে ঢাকায় এসেছেন তিনি।

ইউনিসেফের শুভেচ্ছা দূত প্রিয়াঙ্কা চোপড়া প্রকৃতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারী অধিকার ইত্যাদি বিষয়ে কাজ করে চলেছেন। এর আগে গত বছর জর্ডানে গিয়েছিলেন প্রিয়াঙ্কা। সেখানে সিরিয়ান শরণার্থী শিশুদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।