বিশ্ববাসীকে রোহিঙ্গা শিশু ও নারীদের পাশে চান প্রিয়াঙ্কা
2018.05.24
ঢাকা

বিশ্ববাসীকে মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর শিশু ও নারীদের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানিয়েছেন ইউনিসেফের শুভেচ্ছা দূত, সাবেক বিশ্ব সুন্দরী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া।
“রোহিঙ্গা শিশু ও নারীদের জন্য তহবিল গঠনে সামার্থ্য অনুযায়ী অর্থ, সময় আর সমর্থন নিয়ে এগিয়ে আসা উচিত,” কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মাঝে চারদিন কাটিয়ে বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন এই বলিউড অভিনেত্রী।
ইউনিসেফ বাংলাদেশের কমিউনিকেশন অফিসার ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বেনারকে বলেন, “প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার এই সফর থেকে বেশ কিছু সুফল আশা করা হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের জন্য যে ত্রাণ ও তহবিল প্রয়োজন সেটা সংগ্রহেও তিনি আমাদের সাহায্য করবেন।”
সোমবার বাংলাদেশে আসা প্রিয়াঙ্কা চোপড়া তাঁর সফরে কক্সবাজারের শামলাপুর, লেদা, উনচিপ্রাং, জামতলি, বালুখালি ও কুতুপালংয়ের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির ও আশ্রয়কেন্দ্র এবং ইউনিসেফের সহায়তাপ্রাপ্ত শিক্ষাকেন্দ্র পরিদর্শন করেন।
সাংবাদিকদের তিনি জানান, সাত বছরের রোহিঙ্গা শিশু মনসুর আলীর কথা। ছয় মাসের ব্যবধানে যে শিশুটির ড্রয়িংয়ের খাতায় বোমা-বিস্ফোরণের বদলে ঠাঁই পেয়েছে সূর্যোদয়ের দৃশ্য।
প্রিয়াঙ্কা বলেন, “বিভিন্ন গণমাধ্যমে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢলের খবর জেনেছিলাম আমি। কিন্তু এর ভয়াবহতা উপলব্ধি করেছি এই সফরে এসে। এ সফর আমার জীবন বদলে দিয়েছে।”
প্রিয়াঙ্কা বলেন, “আমি নৃশংস ও নিষ্ঠুর হৃদয়বিদারক কাহিনীগুলো শুনেছি, যা তাদের বাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য করেছে। আমি দেখেছি তাদের অসহনীয় পরিস্থিতি, যেখানে এখন লাখ লাখ শিশু বসবাস করছে।”
“একটি প্রজন্ম অশিক্ষিত হয়ে গড়ে উঠছে। তাদের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই,” বলেন প্রিয়াঙ্কা।
“শিশুদের সহায়তা ও সুরক্ষা প্রদানে ইউনিসেফ ও তার অংশীদারের পক্ষে করা সম্ভব এমন সবকিছুই তারা করেছে। কিন্তু আমাদের আরও অনেক কিছু করতে হবে,” যোগ করেন তিনি।
“পুরো বিশ্ববাসীকে তাদের পাশে এসে দাঁড়ানো প্রয়োজন,’ বলেন তিনি।
প্রিয়াঙ্কা বলছিলেন, “সারা পৃথিবী জুড়েই এই উদ্বাস্তু সমস্যা বিরাজ করছে। যুদ্ধসহ নানা ইস্যুতে আমরা শিশুদেরও বিভক্ত করছি। তাদের মাঝে ঘৃণার জন্ম দিচ্ছি।”
রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের উপরে চাপ দিতে জাতিসংঘ বা ভারত সরকারের কাছে আহ্বান জানাবেন কিনা জানতে চাইলে ইউনিসেফের এই শুভেচ্ছা দূত বলেন, এসব কথা বলার জন্য তিনি “খুবই ছোট মানুষ।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ মানবিকতার পরিচয় দিয়েছে। এ জন্য আমি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছি।”
এ সময় তিনি রোহিঙ্গা নারীদের বিভিন্ন দুর্দশার কথাও তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ইউনিসেফ বাংলাদেশের অফিসার ইনচার্জ সীমা সেন গুপ্তা বলেন, “রোহিঙ্গা নারীরা তাঁদের ঘর হারিয়েছে, সন্তান হারিয়েছে, স্বামী হারিয়েছে। তাঁরা শারীরিকভাবেই শুধু নয়, মানসিক ও সামাজিকভাবে বিপর্যস্ত হয়েছেন।”
সীমা সেন গুপ্তা আরো বলেন, “যদি মায়েরা স্বাভাবিক হতে না পারে তবে শিশুদের তারা স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে পারবে না।”
“ইউনিসেফ তাদের ভালো রাখার চেষ্টা করছে। এর মধ্যে শিশুদের দিকেই আমাদের নজরটা বেশি। কারণ, তারা সংখ্যায় অনেক,” বলেন তিনি।
রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বিশ্ববাসীর প্রতি প্রিয়াঙ্কা যে আবেদন জানিয়েছেন, মানুষ তাতে নিশ্চয়ই সাড়া দেবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ইফতেখার।
তিনি বেনারকে জানান, “প্রিয়াঙ্কা চোপড়া চারদিনে প্রায় প্রতিটি বড় রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও শিবির পরিদর্শন করেছেন। সেখানে তিনি শিশুদের স্কুলে গিয়েছেন। পুষ্টিসেবা ভিজিট করেছেন।”
“তিনি আশা করছেন অন্তত মানবতার খাতিরে মানুষ এগিয়ে আসবে।”
ইফতেখার আরো বলেন, “শিশু শিক্ষা ও সুরক্ষার পাশাপাশি নারীদের লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য এবং তাঁরা ক্যাম্পগুলোতে যে ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে, তা নিয়েও তিনি সোচ্চার হবেন।”