অরক্ষিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাঁটাতারের বেড়া চায় পুলিশ
2019.05.24
ঢাকা ও কক্সবাজার
ক্যাম্প থেকে পালিয়ে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া যাত্রা কিংবা দেশের বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে রোহিঙ্গা শিবিরের চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার প্রস্তাব করেছে কক্সবাজার জেলা পুলিশ।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মতে, প্রত্যাবাসন নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে রোহিঙ্গারা শরণার্থী শিবির থেকে পালানোর চেষ্টা করছে।
“প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু না হওয়ায় রোহিঙ্গাদের অনেকেই ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তাঁদের আটক করছে,” বেনারকে বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
তিনি বলেন, “রোহিঙ্গাদের দ্রুত টেকসই প্রত্যাবাসনের নিশ্চিত করতে আমরা মিয়ানমার সরকারের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে মিয়ানমার সরকার তাদের নাগরিকদের ফেরত নিতে প্রয়োজনীয় কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না।”
এদিকে শুক্রবারও চট্টগ্রাম শহরে অভিযান চালিয়ে ৫৪ রোহিঙ্গাকে আটক করার কথা বেনারকে জানিয়েছেন কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহসিন।
কাঁটাতারের বেড়া
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসেন বেনারকে বলেন, “রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যাওয়া ঠেকাতে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কে নয়টি তল্লাশি চৌকি স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু ক্যাম্পগুলোর অবস্থান পাহাড়ি এলাকায় হওয়ায় কোনোভাবেই রোহিঙ্গাদের পালিয়ে যাওয়া ঠেকানো যাচ্ছে না।”
তিনি জানান “এমন পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে যাওয়া ঠেকাতে উখিয়া-টেকনাফের শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে সীমানা প্রাচীর বা কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করার জন্য শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার, পুলিশ সদর দপ্তর ও পুলিশের বিশেষ বিভাগকে (এসবি) চিঠি দেওয়া হয়েছে।”
ইকবাল হোসেনের মতে, দীর্ঘদিন কর্মহীন থেকে অনেকের মধ্যে হতাশা চলে এসেছে। অনেকে আবার উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখছে। বিশেষ করে যুবতী নারীদের বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে দালালচক্র মালয়েশিয়া যেতে প্রলুব্ধ করছে। যে কারণে রোহিঙ্গারা মালয়েশিয়া যাওয়ার উদ্দেশ্যে ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যাচ্ছে।
এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, এ পর্যন্ত ৫১৩ জন দালালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় গত চার মাসে ৫৪৭ জন মালয়েশিয়াগামী রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করা হয়েছে।
এ ছাড়া ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ক্যাম্প ছেড়ে পালানোর সময় কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্নস্থানে উদ্ধার হয়েছে ৫৮ হাজার ৯৫৪জন রোহিঙ্গা।
উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরের মাঝি আব্দুর রহিম বেনারকে জানান, যেসব রোহিঙ্গার আত্মীয়–স্বজন মালয়েশিয়ায় বসবাস করছে, তারাই ওই দেশে যেতে বেশি আগ্রহী।
তিনি বলেন, “আবার যাদের আত্মীয়–স্বজন সেখানে নেই, তারাও উন্নত জীবনের আশায় এবং অবিবাহিত নারীরা বিয়ের প্রলোভনে মালয়েশিয়া যেতে চায়। এক্ষেত্রে তারা বিভিন্ন সংস্থা থেকে পাওয়া ত্রাণসামগ্রী বিক্রি করে সেই টাকা দালালদের হাতে তুলে দিচ্ছে।”
আব্দুর রহিম বলেন, সড়কের ওপর আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর চেকপোষ্ট থাকলেও দালালের হাত ধরে রাতের আঁধারে পাহাড়ি পথে রোহিঙ্গারা বাইরে চলে যাচ্ছে।
তাঁর মতে, সীমানা প্রাচীর দেওয়া হলে ক্যাম্প ছাড়ার প্রবণতা অনেকাংশে কমে আসবে।
“ক্যাম্পকে সুরক্ষিত করতে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া বা সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করার বিষয়টি জরুরি,” মন্তব্য করে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম বেনারকে বলেন, “কিন্তু চাইলেই এটা সম্ভব নয়, এর সঙ্গে আর্থিকসহ বিভিন্ন বিষয় জড়িত আছে।”
“তবে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা–পর্যালোচনা চলছে,” জানান কমিশনার।
৫৪ রোহিঙ্গা আটক
রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের ক্যাম্প থেকে পালিয়ে এসে চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে ভিক্ষাবৃত্তিসহ বিভিন্ন কাজে যুক্ত হচ্ছে বলে বেনারকে জানান চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন।
তিনি বলেন, বৃহম্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে মোট ৫৪ রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৩২ জন শিশু, আট জন পুরুষ ও ১৪ জন নারী রয়েছে।
ওসি বলেন, “আমরা বিভিন্ন সময়ে দু-চারজন করে রোহিঙ্গা আটক করে থাকি। গত এক বছরে আমাদের কোতোয়ালী এলাকা থেকে কমপক্ষে একশ রোহিঙ্গা আটক করে শরণার্থী শিবিরে পাঠানো হয়েছে।”
আটক সব রোহিঙ্গাকে টেকনাফে ক্যাম্পে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান তিনি।
রোহিঙ্গাদের পুশ ইনের চেষ্টা
শুক্রবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে রোহিঙ্গাদের ঠেলে দেয়ার চেষ্টা চালিয়েছে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষাবাহিনী বিএসএফ।
তবে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বিজিবি সেই পুশ-ইন প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেয় বলে সাংবাদিকদের জানান কমান্ডার লে. কর্নেল মো. ইকবাল হোসেন।
তিনি বলেন, বিজিবি এবং বিএসএফ কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠকে বিষয়টির সমাধান হয়। ধাজনগর সীমান্তের ভারতীয় অংশে প্রায় ১০ ঘন্টা অবস্থান করছিল ১০জন রোহিঙ্গা। শুক্রবার বিকাল চারটার দিকে ছয় শিশু, দুই নারী এবং দুই রোহিঙ্গা পুরুষকে সেখান থেকে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।
এর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার সীমান্ত দিয়ে গত জানুয়ারিতে ৩১জন রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করানোর চেষ্টা হয়। সেবারও বিজিবির বাধায় রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয় ভারত।