রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমার প্রস্তুত নয়: ইউএনএইচসিআর
2018.05.31
ঢাকা
বাংলাদেশে অবস্থানকারী বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এবং তাঁদের ঝুঁকিপূর্ণ আবাসস্থল নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) সহকারী কমিশনার (অপারেশন) জর্জ ওকোথ-উবু।
বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে জর্জ ওকোথ-উবু বলেন, “বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য এখনো প্রস্তুত নয়। ইউএনএইচসিআরসহ কোনো মানবাধিকার সংস্থা এখনো সেখানে প্রবেশাধিকার পায়নি।”
এদিকে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন বিষয়ে মিয়ানমারের সাথে ইউএনডিপি ও ইউএনএইচসিআর একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারকের খসড়া চূড়ান্ত করেছে বলে জেনেভা থেকে বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে জানায় ইউএনএইচসিআর।
এতে বলা হয় “যদিও স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসনের জন্য (রাখাইনের) পরিস্থিতি এখনো উপযুক্ত নয়, তবু পরিস্থিতির উন্নয়নে মিয়ানমার সরকারের উদ্যোগকে সহায়তা করার জন্য এই সমঝোতা স্মারক একটি প্রাথমিক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।”
বিবৃতিতে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের কোনো তারিখ না জানালেও এর ফলে রাখাইন রাজ্যে জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর প্রবেশাধিকারের পথও উন্মুক্ত হবে বলে মন্তব্য করা হয়।
শিঘ্রই এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে জানিয়ে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলরের দপ্তরও বৃহস্পতিবার পৃথক এক বিবৃতিতে এই সমঝোতার বিষয়টি নিশ্চিত করে।
‘ঝুঁকির মধ্যে রোহিঙ্গারা’
কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা আসন্ন বর্ষা মৌসুমের কারণে খুবই ঝুঁকির মধ্যে আছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে মন্তব্য করেন জর্জ ওকোথ-উবু। তিনি বলেন, তাঁদের স্থানান্তরে দীর্ঘসূত্রতার কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে।
“বিভিন্ন ক্যাম্পের আট লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে নিয়েই ভয় রয়েছে। এর মধ্যে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন প্রায় দুই লাখ,” বলেন তিনি।
পাহাড়ের পাদদেশ, ঢাল ও উপত্যকায় বসবাসরত ২০ হাজার শরণার্থী চরম ঝুঁকিতে রয়েছেন—উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “এদের স্থানান্তর করা সবচেয়ে জরুরি। অস্থায়ী ভিত্তিতে হলেও তাঁদের সরিয়ে ফেলা গেলে প্রাণহানি ঠেকানো যাবে।”
“রোহিঙ্গারা খুবই নাজুক অবস্থায় বসবাস করছে” জানিয়ে জর্জ বলেন, “সেখানে পাহাড় ধস, জলাবদ্ধতা, বন্যার মতো দুর্যোগ নেমে আসতে পারে।”
“প্রাথমিকভাবে কুতুপালং সংলগ্ন এলাকায় ৫০০ একর জমি রোহিঙ্গাদের জন্য বরাদ্দ করা হলেও এর মধ্যে মাত্র ১২৩ একর ব্যবহারযোগ্য,” জানিয়ে তিনি বাংলাদেশ সরকারের কাছে রোহিঙ্গাদের জন্য আরো জমি বরাদ্দের আহ্বান জানান।
ইউএনএইচসিআর সহকারী কমিশনার বলেন, “বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের ভাসান চরে স্থানান্তরের কথা বলছে। কিন্তু ওই এলাকাও কতটা দুর্যোগ ঝুঁকিমুক্ত তা আমাদের জানা নেই।”
“ভাসানচরে এক লাখ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরের কথা বলা হলেও সেখানে ঠিক কারা যাবে, তাদের কীভাবে নির্বাচন করা হবে সেসব বিষয়ও এখনো ঠিক করা হয়নি।”
প্রয়োজনের ২০ শতাংশ অর্থ মিলেছে
কুতুপালং এই মুহূর্তে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ রিফিউজি ক্যাম্প উল্লেখ করে জর্জ বলেন, “রোহিঙ্গাদের জন্য দাতাদের কাছে যে ৯৫০ মিলিয়ন ডলার চাওয়া হয়েছে তার মাত্র ২০ শতাংশ পাওয়া গেছে। এখানে সময় মতো টাকা পাওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।”
গত বছরের সেপ্টেম্বরে কক্সবাজার পরিদর্শনের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “তখনকার চেয়ে সামগ্রিক পরিস্থিতি অনেক উন্নত হলেও রোহিঙ্গাদের সামাজিক নিরাপত্তা উন্নত হয়নি।”
জর্জ জানান, প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সরকারের সাথে আলোচনা এবং সমঝোতার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনএইচসিআরের সহকারী হাইকমিশনার জর্জ ওকোথ ওবো বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি না যে নিরাপদে তাঁদের ফেরার পরিবেশ এ মুহূর্তে হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ফেরানোর পরিবেশ সৃষ্টির কাজটা মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষকেই করতে হবে।”
রোহিঙ্গা নির্যাতনের তদন্ত করবে মিয়ানমার
রাখাইনে মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানের সময় রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘেনর ঘটনা তদন্তে একটি কমিশন গঠন করা হবে বলে বৃহস্পতিবার ঘোষণা দিয়েছে মিয়ানমার।
গত বছরের আগস্টে রোহিঙ্গাদের বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) একযোগে মিয়ানমারের ৩০টি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলা চালানোর প্রেক্ষিতে দেশটির সেনাবানিহী উত্তর রাখাইনের রোহিঙ্গা এলাকায় ব্যাক অভিযান পরিচালনা করে।
এর ফলে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।
রাখাইনে সেনা অভিযানের সময় ধর্ষণ ও হত্যাযজ্ঞসহ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে।
দেশটি বরাবরই সেনাবাহিনীর দ্বারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি অস্বীকার করে এলেও আন্তর্জাতিক সমালোচনার প্রেক্ষিতে এ বিষয়ে তদন্তের জন্য একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করা হবে বলে এবার দেশটির প্রেসিডেন্টের অফিস থেকে ঘোষণা দেওয়া হলো।
বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের প্রেডিডেন্ট উইন মিন্টের অফিস এক বিবৃতিতে জানায়, “এই স্বাধীন কমিশন আরসার সন্ত্রাসী আক্রমণের পরবর্তী সময়ে সংগঠিত মানবাধিকার লঙ্ঘন ও সংশ্লিষ্ট ঘটনা তদন্ত করবে।”
তিন সদস্যবিশিষ্ট এই কমিশনে একজন আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি থাকবেন বলেও বিবৃতিতে জানানো হয়।