রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন: মিয়ানমারের অগ্রাধিকার তালিকা বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি
2018.06.04
ওয়াশিংটন ডিসি

বাংলাদেশের দেওয়া তালিকার বাইরে এক হাজার ২২২ জন রোহিঙ্গাকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার আগ্রহ দেখালেও এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ।
এ প্রসঙ্গে শরণার্থী ত্রাণ ও পূনর্বাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম সোমবার বেনারকে বলেন “মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যকার চুক্তি অনুযায়ী, প্রত্যাবাসনের জন্য আমাদেরকে অবশ্যই চুক্তিতে উল্লিখিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে।”
বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যকার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশ প্রথমে মিয়ানমারের কাছে পরিবার ভিত্তিক তালিকা হস্তান্তর করবে। এরপর মিয়ানমার তালিকার রোহিঙ্গাদের রাখাইন রাজ্যে পূর্বে বসবাসের প্রমাণ যাচাই বাছাই করে বাংলাদেশকে তথ্য দেবে। এরপর শুধু যাচাইকৃত রোহিঙ্গারাই প্রত্যাবাসনের জন্য উপযুক্ত বলে গণ্য হবেন।
এই প্রক্রিয়ায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের সময় ৮ হাজার ৩২ জন রোহিঙ্গার একটি তালিকা যাচাই বাছাই (ভেরিফিকেশন) এর জন্য হস্তান্তর করা হয়। ওই তালিকা থেকে এ পর্যন্ত মিয়ানমার ১ হাজার ৪৫ জনের ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করেছে।
তবে গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয় থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে পাঠানো এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, বাংলাদেশের দেওয়া তালিকার বাইরে ১ হাজার ২২২ জনকে যাচাই বাছাই ছাড়াই ফিরিয়ে নিতে আগ্রহ দেখিয়েছে মিয়ানমার।
এই এক হাজার ২২২ জনের মধ্যে রয়েছেন ৪৪৪ জন হিন্দু এবং ৭৭৮ জন মুসলিম রোহিঙ্গা।
“আমরা আমাদের প্রতিবেশী মিয়ানমারের সাথে স্বাক্ষরিত চুক্তির প্রতি শ্রদ্ধাশীল” জানিয়ে ভেরিফিকেশন ছাড়া তালিকা বহির্ভূত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাবকে “রহস্যজনক” বলে উল্লেখ করেন শরণার্থী কমিশনার আবুল কালাম।
তবে বাংলাদেশের কাছ থেকে তালিকা পাবার আগেই গত জানুয়ারিতে এই এক হাজার ২২২ জনের তালিকা বাংলাদেশকে দেওয়া হয়েছিল বলে বেনারনিউজের সহযোগী প্রতিষ্ঠান রেডিও ফ্রি এশিয়ার মিয়ানমার সার্ভিসকে সোমবার জানান মিয়ানমার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিব মিন্ট থু।
এদিকে জাতিসংঘে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত হাও ডো সোয়ান রেডিও ফ্রি এশিয়াকে বলেন, “শরণার্থী শিবিরে থাকা কিছু হিন্দু ভারতীয় দূতাবাসের মাধ্যমে মিয়ানমার সরকারের সাথে যোগাযোগ করে জানায় যে তাঁরা ফিরে যেতে ইচ্ছুক।”
“রাখাইনে ওইসব হিন্দু ও মুসলিমদের আত্মীয়-স্বজন রয়েছেন। মিয়ানমার সরকার আত্মীয়-স্বজনদের মাধ্যমে তাঁদের রাখাইনে বসবাসের তথ্য যাচাই করে তাঁদেরকে ফেরত পাঠানোর জন্য বাংলাদেশকে অবহিত করেছে,” বলেন হাও ডো সোয়ান।
তবে এরকম কোনো যাচাইর ঘটনা “জানা নেই” উল্লেখ করে শরণার্থী কমিশনার আবুল কালাম বলেন, “আমি যত দূর জানি, এই ১,২২২ জনকে ভেরিফিকেশন ছাড়া ফেরত পাঠানোর বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।”
জানুয়ারিতে সরবরাহ করা তালিকার ১৮ জন হিন্দু রোহিঙ্গা মিয়ানমারের জাতীয় পরিচয়পত্রধারী উল্লেখ করে মিন্ট থু বলেন, “যেহেতু তাঁরা যাচাইকৃত, তাই তাঁরা যে কোনো সময় মিয়ানমার ফিরে আসতে পারে।”
এদিকে ‘ভেরিফিকেশন ছাড়া’ ওই ১,২২২ জনকে ফেরত পাঠানো হবে কি না তা একটি “নীতিগত বিষয়” এবং এ বিষেয় সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে জানান আবুল কালাম।
“তবে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিবদের নেতৃত্বে গঠিত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে আমি মনে করি,” যোগ করেন তিনি।
গত বছর ২৫ আগস্ট জঙ্গিগোষ্ঠী আরসার আক্রমণে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য নিহত হলে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে অভিযান শুরু করে। জীবন বাঁচাতে লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসেবে, এখন পর্যন্ত ১১ লাখ রোহিঙ্গা রাখাইন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এদের মধ্যে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা এসেছে গত বছর ২৫ আগস্টের পর। এ ছাড়া বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে মিয়ানমার অংশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা ছয় হাজারের বেশি।
প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন ঢাকা থেকে কামরান রেজা চৌধুরী।