সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া প্রবেশের চেষ্টা, ২৬৯ রোহিঙ্গা গ্রেপ্তার
2020.06.08
কুয়ালালামপুর

একটা ভাঙাচোরা নৌকা থেকে লাফিয়ে সমুদ্র সাঁতরে মালয়েশিয়ার তীরে পৌঁছানোর চেষ্টাকালে অর্ধ শতাধিক রোহিঙ্গাসহ মোট ২৬৯ শরণার্থীকে সোমবার গ্রেপ্তার করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।
সোমবার ভোরে আন্তর্জাতিক জলসীমা থেকে সাঁতরে মালয়েশিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় কেদাহ রাজ্যের লঙকাওয়ি দ্বীপে ওঠার চেষ্টা করছিলেন ৫৩ জন রোহিঙ্গা।
এছাড়া সমুদ্রে ভাসমান একটি নৌকা থেকে আরো ২১৬ জনকে মালয়েশিয়ান মেরিটাইম এনফোর্সমেন্ট এজেন্সি (এমএমইএ) গ্রেপ্তার করেছে বলে সোমবার রাতে এক বিবৃতিতে জানায় দেশটির ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্স (এনটিএফ)।
পাশাপাশি, সমুদ্র থেকে এক রোহিঙ্গা নারীর মরদেহ উদ্ধারের কথাও জানানো হয় বিবৃতিতে।
গত দুই মাসে এটিই মালয়েশিয়াতে রোহিঙ্গা নৌকা ভেড়ার প্রথম ঘটনা।
তবে নৌকাটি যখন গত ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের উপকূল থেকে মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে তখন এতে প্রায় ৫০০ যাত্রী ছিলেন বলে বেনারকে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মালয়েশিয় নিরাপত্তা বাহিনীর এক কর্মকর্তা।
“ধারণা করা হচ্ছে গত ফেব্রুারিতে তাঁরা কক্সবাজার থেকে রওয়ানা করেছেন,” জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, “ধারণা করা হচ্ছে, নৌকাটি যখন বাংলাদেশ ছাড়ে তখন এতে প্রায় ৫০০ জন রোহিঙ্গা ছিলেন, কিন্তু পাওয়া গেছে মাত্র ২৬৯ জনকে।”
নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা পৌঁছানোর আগেই নৌকার নয়জন ক্রু পালিয়ে যান বলেও জানান তিনি।
মালয়েশিয়ার তিনটি প্রধান নিরাপত্তা সংস্থার অন্যতম এনটিএফ বিবৃতিতে জানায়, রোহিঙ্গাদের গ্রেপ্তারের অভিযানটি শুরু হয় রোববার রাতে, যখন লঙকাওয়ি পুলিশের নৌশাখার কমান্ডারের কাছে তথ্য আসে যে, সমুদ্রে ভাসমান একটি নৌকা মালয়েশিয়ার জলসীমায় প্রবেশের চেষ্টা করছে।
এতে বলা হয়, নৌকাটিকে মালয়েশিয়ায় প্রবেশে বাধা দেবার জন্য কমান্ডার দুটি জাহাজ পাঠান। ভোর পাঁচটার দিকে জাহাজ কেএম কিমানিস নৌকাটিকে খুঁজে পেয়ে এটিকে আন্তর্জাতিক জলসীমায় পাঠানোর প্রস্তুতি নেয়।
“যখন কেএম কিমানিস লঙকাওয়ি জলসীমা থেকে নৌকাটির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল তখন ৫৩ জন রোহিঙ্গা লাফিয়ে সমুদ্রে নেমে তীরের দিকে সাঁতরাতে থাকেন।”
এদের সবাইকে এমএমইএ কর্মকর্তারা গ্রেপ্তার করেন জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের নৌকাটি মেরামতের অযোগ্য অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত ছিল। ইচ্ছাকৃতভাবেই নৌকাটির বিভিন্ন স্থানে ছিদ্র করা হয়েছিল।
নৌকাটির ক্ষতির পরিমাণ দেখে আর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে বিরত থেকে কর্মকর্তারা রোহিঙ্গাদের খাদ্য ও পানি সরবরাহ করেন জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, “মানবিক কারণে ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল নৌকাটিকে লঙকাওয়ি নিয়ে যাবার অনুমতি দেয়।”
উদ্ধার করা মরদেহ এবং গ্রেপ্তার ২৬৯ জনকে পরবর্তীতে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানানো হয় বিবৃতিতে।
এদিকে স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠন নর্থ-সাউথ ইনিশিয়েটিভ রোহিঙ্গাদের আশ্রয়প্রাথী হিসেবে গণ্য করার জন্য মালয়েশিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক অ্যাড্রিয়ান পেরিরা বেনারকে বলেন, “মালয়েশিয়ার সরকারকে বুঝতে হবে যে, রোহিঙ্গারা বিশ্বের সবচে নিপীড়িত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীগুলোর একটি। আমাদের অবশ্যই তাঁদেরকে আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে গণ্য করে যথাযথ যত্ন করতে হবে।”
“বিশ্বকে দেখানো দরকার যে, মালয়েশিয়া অনেক বিশাল হৃদয়ের অধিকারী এবং আমরা আমাদের আন্তর্জাতিক দায় ও দায়িত্ব পালনে সক্ষম,” বলেন অ্যাড্রিয়ান।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার হিসেবে, মালয়েশিয়াতে প্রায় এক লাখ আশি হাজার নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছেন।
সীমান্ত কড়াকড়ি
অভিবাসীদের মাধ্যমে করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কায় সম্প্রতি স্থল ও জলসীমায় কড়াকড়ি আরোপ করেছে মালয়েশিয়া।
এর আগে গত ৫ এপ্রিল লঙকাওয়ি দ্বীপে ২০২ জন রোহিঙ্গাকে নিয়ে একটি নৌকা পৌঁছেছিল।
তবে গত ১৬ এপ্রিল একটি নৌকা প্রায় ২০০ রোহিঙ্গাকে নিয়ে দেশটিতে প্রবেশের চেষ্টা করলে তাঁদের কিছু মানবিক সহায়তা দিয়ে আবার আন্তর্জাতিক জলসীমায় তাড়িয়ে দেয় মালয়েশিয়ার নৌবাহিনী।
তবে ওই পদক্ষেপের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলার দায়ে মালয়েশিয়ার কঠোর সমালোচনা করে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন।
তার মাত্র একদিন আগে উপকূলীয় জলসীমা থেকে প্রায় ৪০০ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ, যারা মালয়েশিয়ার তীরে ভিড়তে ব্যর্থ হয়ে প্রায় দুই মাস সমুদ্রে ভেসে বাংলাদেশে ফিরে আসেন।
মে মাসের প্রথম থেকে এখন পর্যন্ত মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ ২২টি নৌকা ও ১৪০ জন অভিবাসীকে দেশটিতে অনুপ্রবেশে বাধা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসমাইল সাবরি ইয়াকুব।
সোমবার পুত্রজায়ায় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “অবৈধভাবে প্রবেশের চেষ্টাকালে মোট ৩৯৬ জন অভিবাসী ও নৌকা থেকে পলাতক ১০৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
এছাড়া সন্দেহভাজন ১১ মানব পাচারকারীকে গ্রেপ্তার ও ১৩টি নৌকা আটক করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।