রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ফেরার পরিবেশ তৈরি হয়নি: রেডক্রস প্রেসিডেন্ট
2018.07.03
ঢাকা

প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের এখনো রাখাইনে ফিরে যাওয়ার মতো পরিবেশ তৈরি হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সফররত আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটির (আইসিআরসি) প্রেসিডেন্ট পিটার মাউরা।
সম্প্রতি রাখাইনের কয়েকটি এলাকা ঘুরে, সেখানকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে তাঁর এমনটা মনে হয়েছে। মঙ্গলবার ঢাকার আইসিআরসি দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান পিটার মাউরা। মিয়ানমার সফর শেষে তিনি গত শনিবার বাংলাদেশে আসেন। এর মধ্যে তিনি কক্সবাজার গিয়ে রোহিঙ্গা শিবির ঘুরে এসেছেন।
রোহিঙ্গা সংকটকে রাজনৈতিক সমস্যা উল্লেখ করে এর সমাধানও রাজনৈতিকভাবে করতে হবে বলে মত দেন আইসিআরসি প্রধান।
গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমন পীড়নের পর আইসিআরসি প্রথম আন্তর্জাতিক সংস্থা হিসেবে রাখাইন রাজ্যে প্রবেশাধিকার পায়।
মিয়ানমার সফরকালে দেশটির স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি, প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট, এবং সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং লায়েংয়ের সঙ্গে দেখা করেন পিটার মাউরা। সোমবার ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন তিনি।
আইসিআরসি প্রেসিডেন্ট মনে করেন, একমাত্র মানবিক সহায়তার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান সম্ভব নয়। ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে তাঁদের সঙ্গে নিয়ে রাজনৈতিক সমাধান প্রয়োজন।
তাঁর সাম্প্রতিক রাখাইন সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে পিটার মাউরা বলেন, “এখনো রাখাইনে বিশালসংখ্যক মানুষের ফেরার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।”
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক আগ্রহ ও প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন পিটার মাউরা। অন্যদিকে মিয়ানমার রাজনৈতিকভাবে তাঁদের আগ্রহ ব্যক্ত করলেও তা এখনো সুনির্দিষ্ট বাস্তবতার রূপ নেয়নি বলেও জানান তিনি।
মাউরার বলেন, “আমি স্পষ্ট করে বলছি, মিয়ানমারের দিক থেকে এখনো অনেক কিছু করার বাকি এবং তাঁদের অঙ্গীকারকে বাস্তবে রূপ দিতে হবে।”
তবে কাউকে দোষারোপ না করে তিনি বলেন, “উভয় দেশের সরকারই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং আমি তাঁদের প্রচেষ্টায় সন্তুষ্ট।”
আইসিআরসি প্রধান বলেন, মিয়ানমারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা রয়েছে, কিন্তু কাঠামোগত ও অর্থনৈতিক প্রস্তুতি এখনো শেষ হয়নি।
“প্রত্যাবাসনের জন্য শুধু মানবিক কার্যক্রম ও পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণই যথেষ্ট নয়। চলাফেরার স্বাধীনতা, মৌলিক সেবা পাওয়ার অধিকার, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের স্বাধীনতা, রাখাইনের বাজারে প্রবেশাধিকার এবং সর্বোপরি প্রত্যাবাসন-পরবর্তী নিরাপত্তা ব্যবস্থায় রোহিঙ্গাদের আস্থা নিশ্চিতকল্পে কার্যকর রাজনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন,” বলেন পিটার মাউরা।
রাখাইন ও কক্সবাজার সফরের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি জানান, সীমান্তের দুপাশের মানুষই কষ্টে ভুগছেন। তাঁদের জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপদ আশ্রয়, ওষুধ, স্বাস্থ্য সেবা, পয়োনিষ্কাশন ও বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে। তাঁরা দিনের পর দিন মানবিক সাহায্যের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
বিরাট এই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী, তাঁদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে পিটার মাউরা বলেন, “যে শিশুগুলোকে আমি দেখেছি, তাদের ভবিষ্যৎ আরও ভালো ও নিশ্চিত হওয়া উচিত। জরুরি অবস্থায় ক্যাম্পে আরেক প্রজন্ম হিসেবে আটকে থাকা নয়। এটা যাতে না হয়, সে জন্য আমরা তাদের কাছে দায়বদ্ধ।”
তিনি জানান, মিয়ানমার ও বাংলাদেশ উভয় দেশেই মানবিক এ সংকট মোকাবিলায় আইসিআরসি তার কাজ চালিয়ে যাবে। তবে কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের জন্য আরও আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রয়োজন।
এর আগে সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে পিটার মাউরা রোহিঙ্গা সংকটকে একটি বিরাট মানবিক সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, পিটার মাউরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর মিয়ানমার সফরকালের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
তিনি রাখাইন রাজ্যের ১৩০টি গ্রাম পরিদর্শন করেছেন জানিয়ে বলেন, সেখানে রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি ধ্বংসের চিহ্ন দেখে আমি মর্মাহত।
ইহসানুল করিম জানান, মিয়ানমারের কর্মকর্তারা একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে রোহিঙ্গাদের বসবাসের সহায়তায় আইসিআরসি’র কর্মকাণ্ড পরিচালনায় সব ধরনের সহায়তা দিতে সম্মত হওয়ার কথা প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন পিটার মাউরা।