রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে রাজি করাতে বাংলাদেশে আসছে মিয়ানমার প্রতিনিধিদল
2019.07.12
ঢাকা

রোহিঙ্গাদের দ্রুত রাখাইন ফিরে যেতে রাজি করাতে আগামী ২৬ জুলাই বাংলাদেশ সফরে আসতে চায় পররাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধিদল।
তাঁরা বাংলাদেশে অবস্থানকালে কক্সবাজার শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গাদের সাথে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ সফরে এলে এটি হবে মিয়ানমার সরকারের দ্বিতীয় প্রতিনিধিদল, যারা রোহিঙ্গাদের সাথে সরাসারি প্রত্যাবাসন বিষয়ে কথা বলবে।
মিয়ানমারে নিযুক্ত বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত মঞ্জুরুল করিম খান চৌধুরী শুক্রবার বেনারকে বলেন, “মিয়ানমার সরকারের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল বাস্তচ্যুত মানুষদের সাথে কথা বলতে চায়।”
তিনি বলেন, প্রতিনিধিদলের সংখ্যা এখন পর্যন্ত ঠিক হয়নি। তবে তা ১০ থেকে ১৫ সদস্যের হতে পারে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেনারকে জানান, মিয়ানমারের প্রস্তাব, তারা ২৬ জুলাই অথবা ২৭ জুলাই বাংলাদেশে আসতে চায়। মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিব ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন বলে জানিয়েছে তারা।
আগামী দু-একদিনে মধ্যে তারিখ নির্ধারিত হবে বলে জানান তিনি।
ওই পরিচালক বলেন, তারা একদিন ঢাকা এবং দুদিন কক্সবাজারে থাকবেন। কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরে গিয়ে তাদের সাথে কথা বলবেন।
গত বছর মিয়ানমারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী উইন মিয়াত আয়ে রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলেন। তাঁদের ফিরে যেতে বলেন। রোহিঙ্গারা তখন তাঁদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগে শরণার্থী শিবিরে বিভিন্ন ধরনের বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।
তবে ১১ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে এখন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাও বাংলাদেশ থেকে তাদের আবাসভূমি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ফিরে যায়নি।
তাদের আশঙ্কা, অবস্থার উন্নতি না হলে রাখাইন ফিরে গেলে তারা আবারও গণহত্যা ও মানবতা বিরোধী অপরাধের শিকার হবে।
রোহিঙ্গা নেতা সৈয়দ উল্লাহ বেনারকে বলেন, “মিয়ানমার সরকারের প্রতিনিধিদল এর আগেও এসে আমাদের সাথে কথা বলে গেছেন। তবে তাঁদের কথায় আমরা আশ্বস্ত হতে পারছি না।”
তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতার মাধ্যমে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় আমরা আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে আশ্বস্ত হতে পারছি না। আমরা মিয়ানমারকে বিশ্বাস করি না। এই অবস্থায় ফিরে গেলে আমরা আবার গণহত্যার শিকার হতে পারি।”
শরণার্থী পূনর্বাসন ও ত্রাণ কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম বেনারকে বলেন, “জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সর্বশেষ সভায় আমরা প্রস্তাব করি তারা যেন শরণার্থীদের সাথে কথা বলার জন্য প্রতিনিধিদল প্রেরণ করে।”
তিনি বলেন, “আমরা বলি, তোমরা রাখাইনে পরিবেশ উন্নয়নের জন্য কী কী ব্যবস্থা নিয়েছ সেটা আমাদের জানাও, তারপর আমরা তোমাদের কথা রোহিঙ্গাদের জানাই। এভাবে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার গতি কমে যাচ্ছে। কারণ রোহিঙ্গারা আমাদের কথায় আশ্বস্ত হতে পারছে না। প্রকৃত তথ্য জানতে পারছে না।”
মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, “সে কারণে আমরা মিয়ানমারকে বলেছি, শিবিরে গিয়ে রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলে তাদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করতে, যাতে তারা ফিরে যেতে রাজি হয়।”
তিনি বলেন, “তারা আমাদের কথাটি গ্রহণ করে এবং জানায় তারা বাংলাদেশে একটি প্রতিনিধিদল পাঠাবে।”
আবুল কালাম বলেন, বাংলাদেশ কোনও রোহিঙ্গাকে জোর করে সে দেশে ফেরত পাঠাবে না।
ত্রিপক্ষীয় সভা ডাকবে চীন
গত ১ জুলাই থেকে ৬ জুলাই ২০১৯ চীন সফর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চীন সরকারের আমন্ত্রণে অনুষ্ঠিত ওই সফরে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিংপিং এবং প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং এর সাথে আলোচনা করেন শেখ হাসিনা।
চীন বলেছে, রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন সম্পন্ন করতে চীন, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় সভার আয়োজন করবে তারা।
শেখ হাসিনার সফর শেষে ৭ জুলাই চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়।
রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার না করে ওই বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশে অবস্থানকারী মানুষদের মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার জন্য সেদেশে প্রযোজনীয় নিরাপদ ও অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতে সহায়তা করবে চীন।
ঢাকায় ফিরে চীন সফরের ওপর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে চীন করণীয় সবকিছু করবে বলে বাংলাদেশকে আশ্বাস দিয়েছে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোকে চীন সরকারের প্রতিনিধি ও বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করে প্রত্যাবাসন বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
মিয়ানমারের প্রতিনিধিদল পাঠানোকে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইন্সটিটিউটের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির।
তিনি বেনারকে বলেন, “মিয়ানমার সরকারের সাথে রোহিঙ্গাদের আলোচনা দরকার। রোহিঙ্গাদের দাবি, নাগরিকত্ব। তারা বলছে, নাগরিকত্ব পেলেই তারা রাখাইন চলে যাবে। কিন্তু সেটা তো রাতারাতি মিলবে না। এর জন্য একটি প্রক্রিয়া থাকবে এবং সেই প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। আর প্রক্রিয়া শুরু জন্য রোহিঙ্গাদের সাথে মিয়ানমার সরকারের কথা বলা দরকার।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের ওপর যৌথ বিবৃতিতে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে ত্রিপক্ষীয় যে সভার কথা বলা হয়েছে সে সম্পর্কে হুমায়ুন কবির বলেন, “চীন যে মধ্যস্থতার কথা বলেছে সেটিকে আমাদের কাজে লাগাতে হবে।”
“মিয়ানমারকে বোঝাতে পারবে চীন। কারণ চীন তাদের খুব কাছের বন্ধু,” যোগ করেন হুমায়ুন কবির।