মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আইসিসি প্রতিনিধিদলের কাছে নালিশ জানালেন রোহিঙ্গারা
2019.07.22
কক্সবাজার ও ঢাকা

রাখাইনে তাঁদের বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে সংগঠিত অপরাধের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) প্রতিনিধিদের কাছে মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে দায়ী করল রোহিঙ্গারা।
তাঁরা জানান, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতন, অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতেই প্রাণ ভয়ে রাখাইন থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে রোহিঙ্গারা। আর এই অপরাধের জন্য মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সদস্যদের বিচার চান তাঁরা।
আইসিসি দলের প্রধান জেমস স্টুয়ার্টের নেতৃত্বে দলটি শনিবার কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলায় রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করে ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলেছেন।
পরদিন রোববার তাঁরা শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনারের অফিস, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে পৃথক বৈঠক করেন।
গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের দায়ে মিয়ানমার সেনা কর্মকর্তাদের বিচার করতে কী প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে সেব্যাপারে রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রসিকিউশন দল।
দুদিনের কক্সবাজার সফরের প্রথম দিন উখিয়া ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম কোনারপাড়া নো-ম্যানস ল্যান্ডে শরণার্থীশিবির পরিদর্শন করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) ডেপুটি প্রসিকিউটর জেমস স্টুয়ার্টের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল।
প্রতিনিধিদলটি বিভিন্ন ক্যাম্প ঘুরে ঘুরে দেখে।
শনিবার বেলা ১২টার দিকে আইসিসি প্রতিনিধি দল বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম কোনার পাড়া নো-ম্যানস ল্যান্ড শরণার্থীশিবিরে পৌঁছান বলে জানিয়েছেন ওই ক্যাম্পের নেতা দিল মোহাম্মদ। সেসময় রোহিঙ্গারা তাঁদের কাছে এসে কথা বলেন।
দিল মোহাম্মদ বেনারকে বলেন, তাঁরা এখানে আনুষ্ঠানিকভাবে কারও সঙ্গে কথা বলেননি। আমাদের কাছে তাঁরা কিছু বিষয় জানতে চেয়েছেন।
তিনি বলেন, “তিনি আমার কাছে জানতে চান আমরা কেন মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে চলে এসেছি। আমি বলেছি, সেখানে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অত্যাচার, নির্যাতন, জুলুম সহ্য করতে না পেরে এখানে এসে আশ্রয় নিয়েছি।”
দিল মোহাম্মদ বলেন, “আমরা তাঁদের আরও বলেছি, আমরা এখনো আমাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে চাই কিন্তু মিয়ানমার আমাদের ফেরত নেবে বলে নিচ্ছে না। তাদের আন্তরিকতা নেই। তারা বিভিন্ন ছলছাতুরী করছে।”
লাম্বারশিয়া ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা শহীদউল্ল্যাহ বেনারকে বলেন, “আইসিসি প্রতিনিধিদল আমাদের সাথে আনুষ্ঠানিক কোনো কথা বলেননি। তবে আমরা তাঁদের বলেছি, আমরা ‘আপনাদের কাছে বিচার চাই। মিলিটারিরা আমাদের হত্যা করেছে, নির্যাতন করেছে, ধর্ষণ করেছে, দুধের বাচ্চাকে হত্যা করেছে। আমরা বিচার চাই’।”
প্রতিনিধিদল শরণার্থী শিবির পরিদর্শনকালে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেননি বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. শামসুদ্দোজা নয়ন।
তিনি বেনারকে বলেন, “শনিবার তাঁরা উখিয়ায় পৌঁছে লম্বাশিয়ার ১৭নম্বর ক্যাম্পসহ আশপাশের কয়েকটি ক্যাম্পে গাড়ি নিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখেছেন।
এর পর তাঁরা বান্দরবানের ঘুমধুম কোনারপাড়ার নো মেনস-ল্যান্ডের শরণার্থীশিবির পরিদর্শনে যান। সেখান থেকে আবার কক্সবাজার ফিরে আসেন। পরদিন রোববার সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে সৌজন্য সাক্ষাত করেন।
শামসুদ্দোজা বলেন, “আমাদের মনে হচ্ছে ক্যাম্পের সার্বিক পরিস্থিতি দেখার জন্য অগ্রবর্তী দল হিসাবে তাঁরা এখানে এসেছেন। পরে হয়তো তাঁদের আরেকটি দল আসতে পারে। যারা হয়তো রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলবেন।”
কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসেন বেনারকে জানান, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত রোহিঙ্গা নির্যাতনের ঘটনার তদন্ত শুরু করতে চায়। এরই ধারাবাহিকতায় আইসিসির দলটি কক্সবাজার আসে। এ বিষয়ে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
এর আগে শুক্রবার বিকালে তাঁরা ঢাকা থেকে দুদিনের সফরে কক্সবাজার পৌঁছেন।
সোমবার সকালে প্রতিনিধিদলের প্রধান জেমস স্টুয়ার্ট বাংলাদেশ ছেড়ে গেছেন বলে বেনারকে জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র।
আইসিসি প্রসিকিউশন দলের বাংলাদেশ সফরের ফলাফল সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
কক্সবাজার পৌঁছার আগে ঢাকায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে দলটির প্রধান জানান, তাঁরা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত করছেন না। তাঁরা রোহিঙ্গাদের সাথে সভা করে আইসিসির বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে তাঁদের অবহিত করবেন।
আইসিসি বিচারকেরা অনুমতি দিলে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংগঠিত গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের তদন্ত শুরু করতে পারবে প্রসিকিউশন দল।
রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী
সোমবার বিকেলে কক্সবাজারের উখিয়ার শরণার্থীশিবির পরিদর্শন করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক।
কুতুপালং ১৭ নম্বর ক্যাম্পে অবস্থিত এমএসএফ হাসপাতাল পরিদর্শন করেন এবং চিকিৎসকদের সঙ্গে মত বিনিময় করেন মন্ত্রী।
দুপুরে এক কর্মশালায় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “রোহিঙ্গাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কক্সবাজারের মানুষের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে বিশ্বব্যাংক ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান দিয়েছে। বিশাল অঙ্কের এ অর্থ খরচ করা হবে কক্সবাজারের মানুষের স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে।”
জাহিদ মালেক বলেন, “এটা কোনো লোন নয়, অনুদান। যেটা খরচ করা হবে কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে।”
তিনি বলেন, “রোহিঙ্গাদের কারণে কক্সবাজার জেলা হাসপাতালে এখন বাড়তি চাপ পড়েছে। তাই এ হাসপাতালের আরও উন্নয়ন করা হবে, সেখানে ভালো আইসিইউ, সিসিউ ওয়ার্ড করা হবে। ২৫০ শয্যার এ হাসপাতালে ৫০০ জনেরও বেশি রোগি থাকছে। ভবিষ্যতে হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।”