রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তঃধর্মীয় সংলাপের প্রস্তাব ওআইসির
2017.08.03
ঢাকা

বাংলাদেশের মুসলিম ও মিয়ানমারের বৌদ্ধ ধর্মের নেতাদের মধ্যে আন্তঃধর্মীয় সংলাপের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের পথ খোঁজার আহ্বান জানিয়েছে ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)।
বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠককালে বাংলাদেশ সফররত ওআইসি’র মহাসচিব ড. ইউসুফ বিন আহমেদ আল-ওথাইমিন এ আহবান জানান।
“এই সংলাপ নেতৃবৃন্দের মাঝে পারস্পরিক বোঝাপড়া বৃদ্ধি ও রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করবে,” বলেন ওআইসি মহাসচিব।
বৈঠক শেষে এক ব্রিফ্রিংয়ে এসব একথা জানান প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।
ওআইসি প্রধানের এই প্রস্তাবকে সময়োপযোগী বলে মনে করছেন বাংলাদেশের বিভিন্ন ধর্মের নেতারাও।
বাংলাদেশ বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান সুপ্তভূষণ বড়ুয়া বেনারকে বলেন, “বাংলাদেশে আমরা যেমন বিভিন্ন ধর্মের মানুষ একসঙ্গে শান্তিতে বসবাস করছি, আমরাও চাই মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমরা তাঁদের অধিকার ফিরে পাক।”
“আন্তঃধর্মীয় সংলাপের মাধ্যমে যদি সেটা সম্ভব হয়, তাহলে অবশ্যই এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই,” বলেন তিনি।
“পৃথিবীতে সমস্যা আসবে, আর তা সমাধানে সংলাপই একমাত্র মাত্র মাধ্যম। যুদ্ধ বিগ্রহে কোনো সমাধান আসে না। আন্তঃধর্মীয় সংলাপের সিদ্ধান্ত হয়ে থাকলে সেটা অত্যন্ত ভালো সিদ্ধান্ত,” বেনারকে বলেন বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক শামীম মো: আফজাল।
এই বিরাট জনসংখ্যা বাংলাদেশের জন্য অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত হুমকি হয়ে উঠছে বলেও জাতীয় সংসদে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
এসব রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ আহ্বান জানালেও মিয়ানমারের সাড়া পাওয়া যায়নি। বরং এই মুসলিম জনগোষ্ঠীকে নাগরিক বলেও স্বীকার করতে নারাজ বৌদ্ধ ধর্ম প্রধান এই দেশটি।
পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ওআইসি মহাসচিব বলেন, “মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলো প্রস্তুত। এখন মিয়ানমারের উচিত সামনের দিনগুলোতে কীভাবে অগ্রসর হওয়া যায় সে বিষয়ে একটি রোডম্যাপ বা প্রোগ্রাম দেওয়া।”
তাঁর মতে, “রোহিঙ্গা সমস্যা কেবল বাংলাদেশের সমস্যা নয়, এটা গোটা মুসলিম বিশ্বের সমস্যা। তাই শুধু মানবিক সাহায্য নয়, রোহিঙ্গাদের রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্যও আমাদের কাজ করতে হবে।”
রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিতেও মিয়ানমারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন ওআইসি মহাসচিব।
“রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক, তাই তাদের নাগরিকত্ব মিয়ানমারকে দিতেই হবে,” এক প্রশ্নের জবাবে বলেন ড. ইউসুফ বিন আহমেদ আল-ওথাইমিন।
বুধবার রাতে চার দিনের সফরে ঢাকায় পৌঁছান ওআইসি মহাসচিব। ওআইসির মহাসচিবের দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশে এটাই তার প্রথম সফর। পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। শুক্রবার সকালে কক্সবাজারে অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পও সফর করার কথা রয়েছে তাঁর।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেন ওআইসি মহাসচিব।
“১৯৯১ সাল থেকে এই সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশকে ভুগতে হচ্ছে। নিবন্ধিত ও অনিবদ্ধিত মিলিয়ে প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশে অবস্থান করছে,” ওআইসি মহাসচিবকে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মিয়ানমারের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দেশটির সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
দেশের সীমান্তবর্তী জেলা কক্সবাজারে বসবাস করা রোহিঙ্গাদের নোয়াখালীর হাতিয়ায় সরিয়ে নেওয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে। ওআইসি মহাসচিব এ সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছেন বলে জানান প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ওআইসি মহাসচিব বলেন, “এটি একটি ভালো উদ্যোগ। এ দ্বীপে সব ধরনের নাগরিক সুবিধা থাকবে।”
প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে সকল আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাকে আহ্বান জানান তিনি।