মিয়ানমারের রোহিঙ্গা গণহত্যা: আনুষ্ঠানিক ঘোষণার দাবি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে
2021.08.10
ওয়াশিংটন ডিসি

আপডেট: ১০ আগস্ট ২০২১। ইস্টার্ন সময় বিকেল ০৩:১৫
মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ তাদের দেশে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালিয়েছে-এই মর্মে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার দাবি জানিয়ে মঙ্গলবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনকে চিঠি পাঠিয়েছে ৯৫টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার অধিকার সংগঠনের একটি জোট।
“সামনেই রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নির্মম অভিযানের চতুর্থ বার্ষিকী, যখন আরও নৃশংসতার ঝুঁকি বিদ্যমান রয়েছে। এ অবস্থায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে দৃঢ় সংকল্প প্রকাশ্যে ঘোষণা করার জন্য আমরা আপনার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। তারা যে অপরাধ করেছে তার প্রকৃত নাম “গণহত্যা এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ”-এ কথা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করুন,” চিঠিতে লিখেছে রিফিউজি ইন্টারন্যাশনালসহ অন্যান্য সংগঠনগুলো।
পুলিশ ফাঁড়িতে বিদ্রোহীদের হামলায় নয়জনকে হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংস দমন অভিযান শুরু করেছিল মিয়ানমারের সেনা সদস্যরা।
অভিযানের ফলে রোহিঙ্গাদের দেশত্যাগ শুরু হয় এবং সীমান্ত পেরিয়ে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশের কক্সবাজার অঞ্চলে প্রবেশ করে, যেখানে আগে থেকে আরও কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছিল।
বাংলাদেশের আশ্রয় শিবিরগুলোতে বর্তমানে মিয়ানমারের প্রায় ১১ লাখ সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমান বসবাস করছে। দমন-পীড়নের কয়েক মাসের মধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সম্মত হলেও সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
অতি সম্প্রতি নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা নিয়েছে সেনাবাহিনী।
“যে সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংসতা চালিয়েছিল তারাই ফেব্রুয়ারির ১ তারিখ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা নিয়ে রোহিঙ্গা, অন্যান্য নৃগোষ্ঠী এবং বার্মার সাধারণ জনগোষ্ঠীর ওপর অত্যাচার চালাচ্ছে। এই অভ্যুত্থান এবং চলমান অপরাধে প্রতীয়মান হয়, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত আগের গণহত্যার স্বীকৃতি প্রদান গুরুত্বপূর্ণ,” বলেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
চিঠিতে বলা হয়েছে, “মিয়ানমারে গণতন্ত্রের বাধা হিসেবে সামরিক বাহিনীর বিদ্যমান অবস্থানকে সরানোর প্রয়োজনীয়তা বাড়িয়ে দিয়েছে এই সেনা অভ্যুত্থান। সামরিক বাহিনীর কর্মকাণ্ড ইতিমধ্যেই কোভিড মহামারি এবং মানবিক সংকট বাড়িয়ে তুলছে।”
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলেছে, গণহত্যা এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের ব্যাপারে মার্কিন সংকল্প মিয়ানমার সরকার এবং তার সামরিক বাহিনীর কর্মকাণ্ডকে আন্তর্জাতিকভাবে খতিয়ে দেখার ব্যবস্থা করতে বাধ্য করবে, যা অতি প্রয়োজনীয়।
তারা চিঠিতে উল্লেখ করেছে, রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি চিন, কারেন, কাচিন, রাখাইন এবং শানসহ জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর উপর নৃশংসতার ঝুঁকি বেড়েছে।
“উত্তর রাখাইন রাজ্যে নৃশংসতার দলিল” শিরোনামে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর প্রকাশিত ২০১৮ সালের আগস্ট মাসের একটি প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে চিঠিতে বলা হয়েছে, "ব্লিংকেন এরকম ঘোষণা দিলে তা পররাষ্ট্র দপ্তরের পূর্বের সিদ্ধান্তের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। কারণ প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে পররাষ্ট্র দপ্তর আগেই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে রোহিঙ্গাদের উপর মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের হামলাসমূহ ছিল 'সুপরিকল্পিত এবং সমন্বিত’। রোহিঙ্গাদের ভীতসন্ত্রস্ত করে গণহারে বিতাড়ন করার উদ্দেশ্যে ওই 'চরম ও ব্যাপক’ আক্রমণ চালানো হয়েছিল।”
যা বলেছিলেন বিশেষ দূত
জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দায়িত্ব নেওয়ার পর মার্কিন বিশেষ দূত নিযুক্ত হন জন কেরি। এপ্রিল মাসে এই অঞ্চল পরিদর্শনের সময় তিনি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে “অসাধারণ উদারতা”র জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেন। তিনি অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারের পরিস্থিতিকে “আজকের পৃথিবীর অন্যতম বড়ো নৈতিক চ্যালেঞ্জ” বলেও অভিহিত করেন।
“সুতরাং নতুন প্রশাসন এবং সেক্রেটারি টনি ব্লিংকেন, এই সমস্যা সম্পর্কে খুব সচেতন এবং এ বিষয়ে খুব মনোযোগী। আমি জানি তিনি এবং নতুন প্রশাসন মিয়ানমারে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য “সবকিছু” করবে। এর ফলে রোহিঙ্গাদের ওপর যে চাপ ও চ্যালেঞ্জ আছে, “সেটি কিছুটা কমবে,” বেনার প্রতিবেদকের এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন কেরি।
২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের স্বাধীন সত্য-অনুসন্ধান মিশন বলেছিল, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ধ্বংসের উদ্দেশ্যে যা করেছে তা “গণহত্যার অভিপ্রায়” বলে প্রতীয়মান হয়।
এ বিষয়টি উল্লেখ করে মঙ্গলবারের চিঠিতে হয়েছে, “এখন সময় এসেছে অপরাধের সঙ্গে মানানসই শব্দ ব্যবহার করার, যা মার্কিন নেতৃত্বের জন্য উপযোগী। গণহত্যার মুখে বিশ্বব্যাপী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় নৈতিক নেতৃত্ব এবং সাহস দেখানোর জন্য আমরা আপনাকে আহ্বান জানাই।”
স্বাক্ষরকারী ৯৫ সংগঠনের মধ্যে আছে; আরাকান ইন্সটিটিউট ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস, আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস, জিউস রোহিঙ্গা জাস্টিস নেটওয়ার্ক, পুসাত কোমাস মালয়েশিয়া, বার্মিজ রোহিঙ্গা অ্যাসোসিয়েশন অফ নর্থ আমেরিকা এবং বিশ্ব রোহিঙ্গা সংস্থা।
আপডেট: চিঠিতে স্বাক্ষরকারী সংগঠনগুলোর সংখ্যা হালনাগাদ করা হলো।