ভাসানচর থেকে পালানোকালে নৌকাডুবি: বঙ্গোপসাগর থেকে ১১ মৃতদেহ উদ্ধার
2021.08.18
কক্সবাজার

নোয়াখালীর ভাসানচর থেকে পালানোর সময় বঙ্গোপসাগরে চট্টগ্রাম অংশে ট্রলার ডুবির ঘটনায় বুধবার দুপুর পর্যন্ত সাত শিশুসহ ১১ রোহিঙ্গার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে বেনারকে নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রামের কোস্টগার্ড পূর্ব জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট এম আব্দুর রউফ।
শনিবারের ওই ঘটনায় এখন পর্যন্ত নিখোঁজ বাকি অন্তত ১৫ জনের সন্ধানে উদ্ধার অভিযান চলছে বলে জানান তিনি।
সর্বশেষ মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রামের অংশে সন্দ্বীপ ও সারিকাইতসহ সাগর থেকে ছয় শিশুসহ সাতজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এর আগে দুইদিনে শিশুসহ চারজনের মৃতদেহ পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য, ট্রলার ডুবির পর প্রথমে স্থানীয় জেলেরা ১২ জন রোহিঙ্গাকে জীবিত উদ্ধার করে ভাসানচরে পাঠিয়েছিল।
ডুবে যাওয়া ট্রলার থেকে উদ্ধার পাওয়া বশির আহম্মদ বেনারকে জানান, তিনি তার স্ত্রী-সন্তান, বাবা-মা ও ভাইয়ের পরিবারের সদস্যসহ মোট ১১ জনকে নিয়ে ভাসানচর থেকে ওই ট্রলারে উঠেছিলেন। এদের মধ্যে ছয়জন জীবিত উদ্ধার হয়েছেন, তাঁর স্ত্রী ও চার সন্তান এখনো নিখোঁজ।
“গত কয়েকদিনে যে ১১ জনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে তাদের মধ্যে আমার পরিবারের কেউই নেই। এদের ছাড়া আমার বেঁচে থাকা অর্থহীন। আমার আত্মীয়দের সবাই তাদের জন্য কাঁদছে,” বুধবার বেনারকে বলেন বশির।
গত শনিবার ভোরে নোয়াখালীর ভাসানচর দ্বীপ ছেড়ে পালানোর সময় বঙ্গোপসাগরের চট্টগ্রাম অংশে ডুবে যাওয়া ট্রলারে শিশুসহ ৩৮জন রোহিঙ্গা ছিলেন বলে বেনারকে নিশ্চিত করেছিলেন কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার এডমিরাল এম আশরাফুল হক।
বুধবার দুপুর পর্যন্ত পাওয়া রোহিঙ্গাদের মৃতদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তরের পর ভাসানচরে কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভাসানচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম।
“এখন পর্যন্ত আরো কয়েকজন নিখোঁজ রয়েছেন। এ বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। তবে জীবিত উদ্ধারকৃতরা দালালদের পরিচয় শনাক্ত করতে পারছে না। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে,” বেনারকে বলেন রফিকুল ইসলাম।
ভাসানচরে ‘বন্দি’ মনে হয়
গত ডিসেম্বরে রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার থেকে ভাসানচর স্থানান্তর শুরু হওয়ার পর এপ্রিল পর্যন্ত কয়েক দফায় আঠারো হাজারের বেশি রোহিঙ্গা সেখানে পৌঁছান।
এদের মধ্য গত কয়েক মাসে প্রায় তিন’শ মানুষ দ্বীপ ছেড়ে পালিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সেখানকার শরণার্থী নেতারা, তবে পুলিশের মতে সংখ্যাটি আরো কম এবং পালাতে গিয়ে ধরাও পড়েছেন বেশ কয়েকজন।
“এখন পর্যন্ত এই চর থেকে কতজন পালিয়ে গেছে তার কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে দিন দিন এই সংখ্যা বাড়ছে,” বেনারকে জানান রফিকুল ইসলাম।
বোন সোনা মেহের পরিবারের ছয় সদস্য নিয়ে কক্সবাজারের পালিয়ে যাওয়ার জন্য ওই দিন বাকিদের সাথে ট্রলারে উঠেছিলেন জানিয়ে ভাসানচরের আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা রশিদা বেগম বেনারকে বলেন,
“কিন্তু তাদের কারও সন্ধান পাওয়া যায়নি। জানি না তারা এখনো বেঁচে আছে কিনা?”
সাগর থেকে উদ্ধার করা মৃতদেহের মধ্যে তাঁর বোন নেই জানিয়ে রশিদা বলেন, “এভাবে আর কোনো রোহিঙ্গার মৃত্যু হোক, এটি আমি চাই না। যদিও প্রতিনিয়ত এখান থেকে রোহিঙ্গারা পালিয়ে যাবার চেষ্টা করছে।”
কেন পালাচ্ছে-এমন প্রশ্নের জবাবে রশিদা বলেন, “সরকার যেভাবে বুঝিয়ে নিয়ে এনেছে, সেটির সঙ্গে বাস্তবের মিল নেই। এখানে আমাদের বন্দি মনে হয়। তাই সুযোগ পেলে রোহিঙ্গারা পালাবে, আবার প্রাণহানির ঘটনাও ঘটবে।”
ভাসানচর থেকে মো. হামিদ নামে এক রোহিঙ্গা বেনারকে বলেন, “আমার ক্লাস্টারের পাশে ছোটো এক শিশুকে জীবিত পাওয়া গেছে। শিশুটি পরিবারের ৬ সদস্যর সঙ্গে পালিয়ে কক্সবাজার যাচ্ছিল। ওই পরিবারের একজনই বেঁচে আছে। একটু পর পর মা-বাবাকে খুঁজছে শিশুটি। এখন সে এতিম।”
ভাসানচরের আশ্রয়ণ প্রকল্পের রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ সুলতান আহমদ বেনারকে জানান, “নিখোঁজদের পরিবারে কান্না থামছে না। তাদের এখন একমাত্র চাওয়া স্বজনদের লাশ অন্তত ফিরে পাওয়া।”
শনিবার ভোর থেকে চট্টগ্রামের অংশে বঙ্গোপসাগরে কোস্ট গার্ডের অভিযান এখনো চলছে বেনারকে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের কোস্টগার্ড পূর্ব জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট এম আব্দুর রউফ।
“প্রায় একশ ঘণ্টা ধরে কোস্টগার্ড, নৌ বাহিনী ও পুলিশের যৌথ অভিযান চলছে, এটা কখন শেষ হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না,” বলেন এম আব্দুর রউফ।