মানবাধিকার সংস্থা: এক বছরেও ধরা ছোঁয়ার বাইরে মিয়ানমার
2018.08.24
কক্সবাজার

রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের জাতিগত নিধন অভিযানের জন্য দেশটিকে দায়বদ্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে সমগ্র আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। বাংলাদেশে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের এক বছর পূর্তিকে সামনে রেখে এমনই মূল্যায়ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর।
মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও স্থানীয় বৌদ্ধরা ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে উত্তর রাখাইনের রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে জাতিসংঘের ভাষায় ব্যাপক ‘জাতিগত নিধন’ অভিযান শুরু করে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ক্রাইসিস রেসপন্স ডিরেক্টর তিরানা হাসান এই রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের বর্ষপূর্তিকে “একটি লজ্জার মাইলফলক,” হিসেবে সাম্প্রতিক এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, “মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে জড়িতদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অব্যাহত ব্যর্থতা মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে শুধু ছাড়ই দিচ্ছে না, বরং তাঁদের এই বার্তাও দিচ্ছে যে, তারা যা করছে তা অব্যাহত রাখলে ভবিষ্যতেও তা গ্রহণযোগ্য হবে।”
“যা অবশ্যই চলতে দেয়া যায় না,” বলেন তিরানা।
হাজারো রোহিঙ্গা বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরগুলোতে মানবেতরভাবে বসবাস করছে জানিয়ে তিরানা বলেন, "যতক্ষণ পর্যন্ত নিপীড়নকারী মিয়ানমার বাহিনীর আশঙ্কা রোহিঙ্গাদের মধ্যে রয়েছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাঁদের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের প্রসঙ্গ অবান্তর।”
“এটা অস্বীকারের উপায় নেই যে মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে,” মন্তব্য করে তিরানা বলেন, “প্রমাণের অভাব নয়, বরং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক অনিচ্ছাই তাঁদের নিষ্ক্রিয়তার মূল কারণ।”
প্রসঙ্গত গত জুনের এক প্রতিবেদনে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতার জন্য মিয়ানমারের সেনাপ্রধানসহ ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে অভিযোগ উত্থাপন করে।
এদিকে গত বছরের আগস্টে রোহিঙ্গাদের বিদ্রোহী সংগঠন আরসা রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর চৌকিতে হামলা চালানোর কয়েক মাস আগেই মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গাদের ওপর “ব্যাপক ও সংঘবদ্ধ” আক্রমণের পরিকল্পনা করে বলে গত মাসে এক প্রতিবেদনে অভিযোগ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া কেন্দ্রিক মানবাধিকার সংগঠন ফর্টিফাই রাইটস।
প্রতিবেদনটি রোহিঙ্গাদের ওপর নিধনমূলক অভিযান পরিচালনার জন্য মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও পুলিশের ২২ জন কর্মকর্তাকেও চিহ্নিত করে। পাশাপাশি, রোহিঙ্গাদের গ্রামে সেনাবাহিনীর ঘরবাড়ি পোড়ানো, হত্যা, নির্যাতন ও ধর্ষণ ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরে।
প্রসঙ্গত বৌদ্ধ প্রধান মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের দেশটির নাগরিক হিসেবে স্বীকার না করে অবৈধ বাংলাদেশি হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ও বিশ্বব্যাংক প্রধান জিম জং কিম গত ১ জুলাই তিন দিনের সফরে বাংলাদেশে আসেন। তারও আগে এপ্রিলের শেষ ভাগে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের একটি প্রতিনিধি দল চার দিনের সফরে আসেন। তাঁরা রোহিঙ্গাদের নিরাপদে, স্বেচ্ছায় ও মর্যাদার সঙ্গে দেশে ফিরে যাওয়ার উদ্যোগ নিতে মিয়ানমারকে আহ্বান জানান।
এদিকে শুক্রবার দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার ১৩০ জন সংসদ সদস্য এক বিবৃতিতে রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টে উত্থাপনের জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
“রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন বন্ধের জন্য মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে না পারার মাধ্যমে দাতা সংস্থাগুলো ও অন্যান্য সরকার তাঁদের প্রয়োজনীয় নেতৃত্ব দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে,” শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেন বাংলাদেশে এমএসএফ-এর হেড অফ মিশন পাভলো কলোভস।