ইউএনএইচসিআর: ৭৩ হাজার নতুন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে
2017.09.03
ঢাকা ও কক্সবাজার

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর চলমান সামরিক অভিযান ও সেনাদের নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পেতে রোববার পর্যন্ত ৭০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে বলে বেনারকে জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ইউএনএইচসিআর।
এদিকে রোহিঙ্গা সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের জন্য ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদি মঙ্গলবার মিয়ানমার থেকে ঢাকায় আসছেন বলে রোববার বেনারকে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ইউএনএইচসিআর এর আঞ্চলিক মুখপাত্র ভিভিয়ান ট্যান রোববার এক ইমেইল বার্তায় বেনারকে বলেন, “মাঠ থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে প্রায় ৭৩ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।”
ভিভিয়ান বলেন, “এই পরিস্থিতি মোকাবলার জন্য ইউএনএইচসিআর, জাতিসংঘ ও বেসরকারি অংশীদারেরা সরকারি সংস্থার সাথে কাজ করে যাচ্ছে।”
গত ২৫ আগস্ট আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মির বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শুরু হওয়র পর থেকে হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকার নো-ম্যানস ল্যান্ডে আশ্রয় নেয় এবং তারা দফায় দফায় বাংলাদেশে প্রবেশ করতে থাকে। তাদের প্রবেশ ঠেকাতে ব্যর্থ হচ্ছে সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা।
নতুনভাবে প্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের জন্য বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জরুরি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে বলেও জানান ভিভিয়ান ট্যান।
প্রাথমিকভাবে নতুন করে আগতদের জীবনরক্ষা করা যায় এমন সেবা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এরপর নতুন করে প্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের প্রয়োজন বিবেচনা করে আন্তর্জাতিক সাহায্যের একটি পরিকল্পনা করা হবে।”
এদিকে সীমান্তে জড়ো হওয়া রোহিঙ্গাদের অধিকাংশই খাদ্য ও পানির অভাবে কষ্টে দিন পার করছেন বলে টেকনাফ থেকে জানিয়েছেন আমাদের সংবাদদাতা। তাদের অপেক্ষা বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য।
এ প্রসঙ্গে রোববার টেকনাফ বিজিবির কমান্ডার লে. কর্নেল এস এম আরিফুল ইসলাম বেনারকে বলেন, “সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে বিপুলসংখ্যক মানুষ অনুপ্রবেশের জন্য অপেক্ষা করছে। আমরা তাদের বুঝিয়ে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার কথা বলছি। কিন্ত কাজ হচ্ছে না। তারা বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য মরিয়া।”
“আমাদের সীমান্তে যাবার অনুমতি নেই, ফলে আমাদের পক্ষে বলা কঠিন যে প্রতিদিন কত লোক সীমান্ত অতিক্রম করছেন বা সীমান্ত অতিক্রমের জন্য অপেক্ষা করছেন। আমাদের অনুমান করা সংখ্যাগুলো শুধু শরণার্থী শিবির, আশ্রয়কেন্দ্র ও যেসব গ্রামগুলোতে এনজিওরা কাজ করছে তাদের হিসাবের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা,” বেনারকে জানান ভিভিয়ান ট্যান।
তখন নির্যাতন থেকে রেহাই পেতে ৮৫ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী জাতীয় সংসদকে জানিয়েছেন। পরে এই সংখ্যা বেড়ে হয় ৮৭ হাজার। এর সঙ্গে ২৪ আগস্টের পর ৭৩ হাজার রোহিঙ্গার আগমন মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে।
গত ২৪ আগস্ট আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি নামক এক বিদ্রোহী সংগঠন মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর একযোগে হামলা চালালে পরদিন সামরিক বাহিনীর সদস্যরা রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক ও নির্বিচার সামরিক অভিযান শুরু করে।
এ অভিযানে সাধারণ ও নিরাপরাধ মানুষেরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে বলে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন।
সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে মিয়ানমার সরকারের হিসাবে, এ পর্যন্ত ৪০০ মানুষ নিহত হয়েছে।
এছাড়া রাখাইনে ২৬০০ ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে শনিবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। তবে এসব সহিংসতার জন্য দেশটি রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদেরকেই দায়ী করেছে।
আর সীমান্ত নদী নাফ পার হয়ে কক্সবাজারের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশে করতে গিয়ে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৫৪ জন রোহিঙ্গা প্রাণ হারিয়েছেন বলে রোববার বেনারকে জানিয়েছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক আলী হোসেন।
“তারা দলে দলে আসছে। আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছি,” তিনি বলেন।
আলী হোসেন বলেন, যারা ইতোমধ্যে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে তাদের সরকারের পক্ষ থেকে সাধ্যমত সহযোগিতা করা হচ্ছে।
ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মঙ্গলবার ঢাকা আসছেন
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ডেস্কের মহাপরিচালক মনজুরুল করিম খান চৌধুরী রোববার বেনারকে বলেন, “উনি (মারসুদি) আজ রোববার রাতে মিয়ানমার যাবেন। সেখানে তিনি রাখাইনের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। আগামী মঙ্গলবার তাঁর ঢাকা আসার কথা রয়েছে।”
এর আগেও মারসুদি রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আলোচনার জন্য ঢাকা এসেছিলেন।
মহাপরিচালক চৌধুরী বলেন, “আমরা বিভিন্ন দ্বি-পাক্ষিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করব এবং বাংলাদেশে মিয়ানমারের নাগরিকদের অনুপ্রবেশের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে।”
তিনি বলেন, ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারসুদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করতে পারেন।