বছরের শেষে দশ লাখে পৌঁছাবে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা
2017.09.14
ঢাকা ও কক্সবাজার

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান অবস্থা বিদ্যমান থাকলে এ বছরের শেষ নাগাদ বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা ১০ লাখে পৌঁছে যাবে বলে মনে করছে জাতিসংঘের সংস্থাগুলো।
কক্সবাজার পরিদর্শন করে বৃহস্পতিবার ঢাকায় যৌথ এক সংবাদ সম্মেলনে এ শঙ্কার কথা জানান আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার অপারেশসন্স অ্যান্ড ইমার্জেন্সি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মেদ আবদিকার মোহামুদ এবং জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর’র সহকারী হাই কমিশনার জর্জ ওকোথ-ওব্বো।
গত ২৫ অগাস্ট থেকে এ পর্যন্ত প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে জানিয়ে ওকোথ-ওব্বো বলেন, আড়াই সপ্তাহের মধ্যে এত শরণর্থী আসায় গুরুতর মানবিক পরিস্থিতির মুখে পড়েছে বাংলাদেশ।
“প্রতিদিন দশ থেকে বিশ হাজার করে রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে,” বলেন তিনি।
রাখাইন রাজ্যে এরকম সহিংসতা চলমান থাকলে তারা সেখানকার সব রোহিঙ্গার বাংলাদেশে চলে আসার আশঙ্কা করেন কি না, বেনারের এমন এক প্রশ্নের উত্তরে আবদিকার মোহামুদ বলেন “আমাদেরকে এমন খারাপ পরিস্থিতির কথাও ভাবতে হচ্ছে, যখন সেখানে আর কোনো রোহিঙ্গার অস্তিত্বই থাকবে না।”
“এবং আমরা শুধু চোখ বুজে বসে থেকে আশা করতে পারি না যে, একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে,” যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশে ৮ লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থী
গত মাসে প্রকাশিত জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের প্রতিবেদনে মিয়ানমারে মোট রোহিঙ্গা জনসংখ্যা দশ লাখের মতো বলে উল্লেখ করা হয়। সে হিসাবে রোহিঙ্গাদের তিন ভাগের একভাগ থেকেও বেশি মানুষ গত দুই সপ্তায় উদ্বাস্তু হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন।
পাশাপাশি আগে থেকে বাংলাদেশে বসবাসকারী আরো চার লক্ষ রোহিঙ্গা নিয়ে বাংলাদেশে মোট শরণার্থী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা এখন আট লাখের মতো।
“একটা কঠিন মানবিক সংকট পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে বাংলাদেশ। দুই থেকে তিন সপ্তায় চার লক্ষ লোক; সামাল দেবার জন্য এই সংখ্যাটা খুবই বেশি,” বলেন ইউএনএইচসিআর’র সহকারী হাই কমিশনার জর্জ ওকোথ-ওব্বো।
এই সংকট পরিস্থিতি সামাল দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যথাসাধ্য করছে বলে মনে করেন কি না এমন এক প্রশ্নের জবাবে আবদিকার মোহামুদ উল্টো প্রশ্ন করেন, “আমরা কি ছয় লক্ষ লোকের কথা বলছি? নাকি সাত লক্ষ? নাকি বছর শেষ হবার আগেই এখানে এসে উপস্থিত হওয়া দশ লক্ষ লোকের কথা বলছি?”
তিনি যোগ করেন, “যখন সাম্প্রতিক অনুপ্রবেশ শুরু হয়, তখন মানবিক সাহায্য সংস্থাগুলো অনুমান করেছিল ৮০ হাজারের মতো অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে। কিন্তু মাত্র তিন সপ্তায় সেই সংখ্যা অনুমানের চার গুণ থেকেও বেশি হয়ে গেছে।”
“এই বিষয়টাই আমাদের সবাইকে সংকট মোকাবেলার ক্ষেত্রে কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে,” বলেন আবদিকার মোহামুদ।
জঙ্গি সম্পৃক্ততা অস্বীকার করল আরসা
নিরাপত্তা বিশ্লেষক জাকারি আবুজার মতে, দুই দিন আগে ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আল কায়েদা মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের পক্ষে লড়াই করার ঘোষণা দিয়েছে বলে জানা যায়।
এর প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার রোহিঙ্গাদের বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) সব ধরনের ইসলামি জঙ্গি সংগঠনগুলোর সাথে নিজেদের সম্পর্ক অস্বীকার করে এক বিবৃতি প্রকাশ করে।
এতে বলা হয়, “আরসা মনে করে এটা পরিস্কার করা দরকার যে, আল কায়দা কিংবা ইরাক ও সিরিয়া ভিত্তিক আইএস… লস্করই তৈয়িবা বা এ ধরনের কোনো আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা আরাকানের সংঘাতে তাদের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততাকে স্বাগতও জানাই না।”
“এই জঙ্গি সংগঠনগুলো আরাকানে প্রবেশ করে পরিস্থিতিকে যাতে আরো শোচনীয় করে না তোলে, সেজন্য এদের প্রতিরোধ করতে এই অঞ্চলের দেশগুলোর প্রতি আরসা আহ্বান জানায়,” বলা হয় বিবৃতিতে।
প্রসঙ্গত, রাখাইন রাজ্যে মানবিক ত্রাণ সরবরাহের সুযোগ দেবার জন্য চলতি মাসের দশ তারিখ আরসা নিজেদের পক্ষ থেকে যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা করে মিয়ানমার সরকারকেও অস্ত্রবিরতির আহ্বান জানায়। যদিও মিয়ানমার সরকার সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রস্তাব
মিয়ানমারের সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীকে অবিলম্বে রোহিঙ্গা হত্যা, ধর্ষণ ও তাদের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া বন্ধ করতে বলছে ইউরোপীয়ান পার্লামেন্টে (ইপি)।
বৃহস্পতিবার এক বিতর্ক শেষে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও ইউরোপিয়ান কমিশনকে মিয়ানমার সরকারের উপর মানবাধিকার লঙ্ঘন ঠেকাতে চাপ বাড়ানোর প্রস্তাবও দিয়েছে। এ প্রস্তাবে অবরোধ আরোপ এবং মিয়ানমারের প্রাপ্ত বাণিজ্য সুবিধা বিষয়গুলো পুর্নবিবেচনার কথা বলা হয়েছে।
সব ধরনের জাতিগত ও ধর্মীয় সহিংসতাকে নিন্দা জানানো এবং বাংলাদেশ সীমান্তে স্থলমাইন সরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকার ও স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচিকে আহবান জানিয়েছে ইপি।
এছাড়া কফি আনান কমিশনের প্রতিবেদনের বাস্তবায়নের ওপরও জোর দেওয়া হয়েছে ইউরোপীয়ান পার্লামেন্টের প্রস্তাবে।