রোহিঙ্গাদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের তিন কোটি বিশ লাখ ডলার অনুদান
2017.09.20
ওয়াশিংটন ডিসি

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সাম্প্রতিক সহিংসতায় বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য বুধবার তিন কোটি বিশ লক্ষ ডলারের মানবিক অনুদান ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি, মাত্র এক মাসে চার লক্ষের বেশি নতুন রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশেরও প্রশংসা করেছে দেশটি।
বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “এই সহায়তা রোহিঙ্গা জনসাধারণের অবর্ণনীয় দুর্দশা ও জরুরি মানবিক সহায়তার প্রয়োজনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন।”
এই অর্থ রাখাইন রাজ্যে ঘরবাড়ি হারানো মানুষ, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থী ও আশ্রয়দানকারী বাংলাদেশকে সহায়তার জন্য খরচ করা হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে বুধবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে এক বক্তৃতায় মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নের কঠোর নিন্দা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স।
“সাম্প্রতিক সময়ে বার্মার নিরাপত্তা বাহিনী ভয়ানক সহিংসতার সাথে গ্রাম পুড়িয়ে, রোহিঙ্গাদের বাড়িছাড়া করে সরকারি স্থাপনায় বিদ্রোহীদের হামলার জবাব দিয়ে যাচ্ছে। এই সহিংসতার ধরন ও ভুক্তভোগীদের অবস্থা দেখে আমেরিকার জনগণসহ পৃথিবীর সকল সংবেদনশীল মানুষ মর্মাহত,” বলেন তিনি।
এই সহিংসতার কারণে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের একটি ‘ঐতিহাসিক দেশান্তর’ ঘটছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
পেন্স বলেন, “কূটনৈতিক উপায়ে দীর্ঘ মেয়াদি সমাধানের উদ্যোগে সহায়তা করার জন্য বার্মার নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি অবিলম্বে তাদের সহিংসতা বন্ধের জন্য যুক্তরাষ্ট্র আবারও আহ্বান জানাচ্ছে।”
গত ২৫ আগস্ট রাখাইন রাজ্যের সেনা ও পুলিশ চৌকিতে রোহিঙ্গাদের বিদ্রোহী সংগঠন আরসার একযোগে আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী ‘জাতিগত নিধন’ অভিযান শুরু করে। এর প্রেক্ষিতে বুধবার পর্যন্ত বাংলাদেশে ৪ লাখ বিশ হাজার নতুন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছে মাঠ পর্যায়ে মানবিক সহায়তাকারী সংস্থাগুলোর জোট।
প্রসঙ্গত, কয়েক শতাব্দি ধরে মিয়ানমার বসবাস করলেও রোহিঙ্গাদের দেশটিতে নাগরিক হিসাবে স্বীকার করা হয় না।
বাংলাদেশকে ধন্যবাদ
সাম্প্রতিক অনুপ্রবেশ শুরুর আগে থেকেই বাংলাদেশে চার লাখের বেশি পুরোনো রোহিঙ্গা শরণার্থী ছিলেন। ফলে নতুন রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেবার বিষয়ে শুরুর দিকে বাংলাদেশর কঠোর আপত্তি ছিল।
পুরোনো রোহিঙ্গারা জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এর দুটি নিবন্ধিত শিবির ও আশপাশের অনিবন্ধিত আশ্রয় কেন্দ্রে বসবাস করেন। যেগুলো এখন নতুন রোহিঙ্গাদের ভারে উপচে পড়া অবস্থায় রয়েছে।
বাংলাদেশে ‘চলমান সংকট’ অবস্থা মোকাবেলার জন্য ইউএনএইচসিআর মাসের শুরুতে জরুরি ভিত্তিতে তিন কোটি ডলার আর্থিক সহায়তার প্রয়োজনের কথা জানিয়েছিল। অন্যদিকে পরবর্তী তিন মাসের জন্য অন্তত ৭৩ লক্ষ ডলার প্রয়োজনের কথা জানিয়েছল ইউনিসেফ।
ইউনিসেফের মতে, শরণার্থীদের শতকরা ৬০ ভাগই শিশু, যাদেরকে জরুরি ভিত্তিতে বিভিন্ন রোগ বালাই থেকে বাঁচাতে টিকা, সুপেয় পানি ও খাদ্য সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন।
শুরুর দিকে বাংলাদেশ নতুন কোনো শরণার্থীকে প্রবেশ করতে দিতে রাজি না হলেও বর্তমানে সীমান্ত প্রায় উন্মুক্ত করে দিয়েছে দেশটি। পাশাপাশি যতদিন পর্যন্ত রোহিঙ্গারা মিয়ানমার ফিরে যেতে না পারেন, ততদিন পর্যন্ত থাকার জন্য নতুন শিবির তৈরি ও তাঁদের আশ্রয় দেবার ঘোষাণাও দিয়েছে বাংলাদেশ।
“এই মানবিক সংকটে অসহায় মানুষদের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের মহানুভবতা ও অব্যাহত সহায়তার জন্য আমরা তাঁদের সাধুবাদ জানাই,” বলা হয় পররাষ্ট্র দপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন এই আর্থিক সহায়তা ওই অঞ্চলে মানবিক সাহায্য সহায়তায় যুক্ত জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাকে সহায়তা করবে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
এতে জানানো হয়, মিয়ানমার ও বাংলাদেশে উদ্বাস্তু চার লাখের বেশি মানুষের জরুরি আশ্রয়, খাদ্য, পুষ্টি, স্বাস্থ্য, সুপেয় পানি, স্যানিটেশন, নিরাপত্তা ও পারিবারিক সম্পর্ক পুনস্থাপনের খাতে যুক্তরাষ্ট্রের এই অর্থ ব্যবহার করা হবে।