রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণবাহী ট্রাক খাদে; নিহত ৯, আহত ১৩
2017.09.21
ঢাকা

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় রেডক্রিসেন্টের একটি ত্রাণবাহী ট্রাক খাদে পড়ে নয়জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ১৩ জন। ট্রাকটিতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ত্রাণ নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।
নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তৌহিদ কবির বেনারকে জানান, “বিজিবির চাকঢালা সীমান্ত চৌকির কাছে বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৮টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। পাহাড়ি পথ দিয়ে যাওয়ার সময় ট্রাকটি রাস্তা থেকে ছিটকে পড়েছিল।”
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির বান্দরবান জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক একেএন জাহাঙ্গীর। তিনি জানান, “ট্রাকটি কক্সবাজারের উখিয়া থেকে মিয়ানমার সীমান্তের কাছে বড় ছনখোলায় রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের জন্য ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছিল।”
“যারা আহত বা নিহত হয়েছেন তাদের সবার বাড়ি নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। তারা রেড ক্রিসেন্টের ত্রাণ বিতরণ কাজে নিয়োজিত ছিলেন,” বেনারকে বলেন তিনি।
নিহতরা হলেন – মো. মামুন (২২), মো. আব্দুল্লাহ (১৮), সৈয়দ আলম (৩০), মো. আব্দুল জলিল (৩৫), মো. আব্দুল্লা (২৫), সুরত আলম (৪০), আব্দুল মাবুদ (৪০), সুদর্শন বড়ুয়া (৪৫) ও মো. সুলতান আহম্মদ (৪৫)।
আহতরা হলেন –সেলিম (৩০), সৈয়দুর রহমান (৩৫), ফয়েজ (৩০), আলী হোসেন (৫০), ইউসুফ (৩৫), আবু তাহের (৩০), বাবুল (২২), জিয়াউর রহমান (১৮), জসিম (২৫), আজিজুর রহমান (৩৫), আলী আকবর (১৮) ও সুলতান (৩৫)।
দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন ৬ জন। আহতদের উদ্ধার করে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর আরও তিনজনের মৃত্যু হয়।
ওই হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সালমান করিম খান বেনারকে জানিয়েছেন, “আহত অবস্থায় ১৬ জনকে আমাদের এখানে আনা হয়। তাঁদের মধ্যে তিনজন মারা গেছেন। গুরুতর আহত একজনকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এখানে চিকিৎসাধীন আছেন ১২ জন।”
রেড ক্রিসেন্টের শোক
ত্রাণবাহী ট্রাক দুর্ঘটনা কবলিত হয়ে এতগুলো প্রাণহানি হওয়ায় শোক প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি।
সোসাইটির চেয়ারম্যান হাফিজ আহমদ মজুমদার এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, অনাকাঙ্ক্ষিত এ ঘটনার জন্য সোসাইটির ব্যবস্থাপনা পর্ষদের সব সদস্য শোকাহত ও মর্মাহত। তারা শোক সন্তপ্ত পরিবারগুলোর প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গত ২৪ আগস্ট রাতে কয়েকটি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনাক্যাম্পে বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপের হামলার পর দেশটির সেনাবাহিনী সেখানকার সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নতুন করে দমন অভিযানে নামে।
তাদের দমন পীড়নে গত এক মাসে সোয়া চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা নতুন করে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এর আগে আরও প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৫০ হাজার রয়েছে বান্দরবানে।
দেশি-বিদেশি ত্রাণ ২৭০ মেট্রিক টন চাল ও আটা
এদিকে বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া জানিয়েছেন, রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত চার লাখ ২৪ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। আর তাদের জন্য দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার সহায়তা হিসেবে ২৭০ মেট্রিক টন চাল ও আটা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ২৫০ মেট্রিক টন চাল এবং ২০ টন আটা।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি পরিপ্রেক্ষিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের বর্তমানে ১৪টি ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যে এদের মধ্যে ৫ হাজার ৫৭৫ জনের বায়োমেট্রিক নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে।”
“এ ছাড়া বাংলাদেশ সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ৫০০ মেট্রিক টন জিআর চাল ও নগদ ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে,” বলেন মন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব শাহ কামাল, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রিয়াজ আহমেদ ছাড়াও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রী জানান, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ক্যাম্পগুলোতে প্রতিদিন ১৪ হাজার ইউনিট খাবার পানি সরবরাহ করছে বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। এ ছাড়া ক্যাম্পগুলোতে এক শ টি টিউবওয়েল ও পাঁচ শ টি অস্থায়ী টয়লেট নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে।
ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, তুরস্ক, আজারবাইজান, ইরান, ইন্দোনেশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ রোহিঙ্গাদের সহায়তা দিয়েছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানান ত্রাণমন্ত্রী।